জাপানিজ এনকেফালাইটিস এখন বড় বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি মশাবাহিত রোগের মধ্যে এটি আরেক আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কিউলেক্স মশার কামড়ে এ রোগটি ছড়ায় বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন। আজাদীতে ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত খবরে বলা হয়, মারাত্মক এ রোগে আক্রান্ত প্রতি চারজনে একজনের মৃত্যু ঘটতে পারে। সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হলেও ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। হিসেবে রোগটিতে মোট আক্রান্তের চার ভাগের তিন ভাগই এ বয়সী। এ রোগে আক্রান্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে শীর্ষ তিনে রয়েছে চট্টগ্রাম। ‘জাপানিজ এনকেফালাইটিসের ঝুঁকি, বিস্তার, প্রতিরোধ ও টিকা বিষয়ে অবহিতকরণ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। চট্টগ্রামের একটি হোটেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইসিডিডিআরবি যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘মা, নবজাতক শিশু এবং কিশোর–কিশোরীর স্বাস্থ্য’ কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত এক জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয় কর্মশালায়। দেশে গত দশ বছরে জাপানিজ এনকেফালাইটিস সংক্রমণের পরিসংখ্যান (চিত্র) তুলে ধরা হয়েছে জরিপে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, গত দশ বছরে এ রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত অঞ্চল রংপুর বিভাগ। এ অঞ্চলে ৪৫ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে। ৩০ শতাংশ রোগী নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রাজশাহী অঞ্চল। শীর্ষ তিনে রয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চল। এ অঞ্চলে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯ শতাংশ।
চট্টগ্রামে বেশি আক্রান্ত হওয়ার খবরে উদ্বিগ্ন এ অঞ্চলের মানুষ। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, কিউলেক্স মশার কামড়ে এ রোগ ছড়ায়। এ রোগ মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে। সাধারণত মশার কামড়ের ৪ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথা ব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন (ভুল বকা) ও অজ্ঞান হওয়া। এসবের মধ্যে ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন (ভুল বকা) ও অজ্ঞান হওয়া উপসর্গকে গুরুতর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গুরুতর এসব লক্ষণযুক্ত রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। মশার উপদ্রব বেশি হওয়ায় চট্টগ্রামে রোগটি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা।
মশা নিধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। মশা নিধনে যে ওষুধ ছিটানো হয়, তাতে শুভাঙ্করের ফাঁকি থাকায় ট্যাক্সদাতাদের অর্থের অপচয় হলেও মশার হাত থেকে নগরবাসী রক্ষা পাচ্ছে না। এ বিশাল অর্থ ব্যয়ের দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো সুফল পায়নি নগরবাসী।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর কারণে অতীতেও নগরে মশার উপদ্রব ছিল। সে সময়ও মশা নিয়ন্ত্রণে নগর কর্তৃপক্ষ কাজ করেছে। সেই কার্যক্রম এখন আরও জোরদার হয়েছে। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন মশা নিয়ন্ত্রণে বিপুল অর্থ খরচও হচ্ছে। কিন্তু তাতে কোনো সুফল মিলছে না। আবহাওয়া ও জলবায়ুগত কারণে বাংলাদেশে মশাজাতীয় কীটপতঙ্গের উপদ্রব বেশি। সামপ্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এসব কীটপতঙ্গের উপদ্রব অনেকাংশে বেড়েছে। তা নিয়ন্ত্রণে যে ধরনের গবেষণা, কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান, প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, তার অনুপস্থিতি সংকট বাড়াচ্ছে।
কিউলেক্স মশা জন্মায় পুকুর, ডোবা, নর্দমায়। সিটি করপোরেশন এলাকায় অনেক ডোবা ও নর্দমা থাকায় মশার উপদ্রব অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। ডোবা, নালা, নর্দামাগুলো পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব বাড়ছে। আরো কয়েক মাস কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়তেই থাকবে। মশা নিধনে যে ওষুধ ছিটানো হয়, সেখানে থাকে শুভঙ্করের ফাঁকি। মশা নিধনের জন্য যে ওষুধ কেনা হয়, সেখানে চলে নানা দুর্নীতি ও ভাগবাটোয়ারা। এ দুর্নীতি মশার দৌরাত্ম্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। মশা নিধনে নিতে হবে সমন্বিত পদক্ষেপ। একদিকে মশা নিধনের ওষুধ ছিটাতে হবে, অন্যদিকে ডোবা, নালা, জলাশয় পরিষ্কার রাখতে হবে। মশার হাত থেকে রেহাই পেতে হলে উভয় দায়িত্ব সমভাবে করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের সততাও নিশ্চিত হওয়া জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জাপানিজ এনকেফালাইটিস ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে করোনার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি রোগী মারা যাচ্ছে। তাই এর জন্যও ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প নেই। আমরা শুনে প্রীত যে, সরকার এ রোগের ভ্যাকসিন আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আশা করি, পর্যায়ক্রমে জাপানিজ এনকেফালাইটিসের সব চিকিৎসাও শুরু হবে।