মশা থেকে মুক্তি মিলবে?

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ

মশক নিধনে গত ১১ বছরে ১১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭ টাকা খরচ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। অর্থাৎ নগরবাসীকে মশার উৎপাত থেকে রক্ষায় প্রতি বছর গড়ে এক কোটি ৪১ লাখ ৬৮ হাজার ২৬ টাকা ব্যয় করে সংস্থাটি। এরপরও সবসময় নগরবাসীর অভিযোগ ছিল, মশক নিধন কার্যক্রমের দৃশ্যমান তৎপরতা চোখে পড়ে না। ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও ছিল প্রশ্ন। অবশ্য বিগত সময়ে দায়িত্ব পালনকালে মেয়রগণ দাবি করতেন, মশক নিধনে পরিচ্ছন্ন বিভাগের মাধ্যমে কার্যকর ওষুধ যথাযথভাবে ছিটানো হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ঘনিয়ে আসছে চসিক নির্বাচন। আবার নগরেও বাড়ছে মশার উৎপাত। তাই স্বাভাবিকভাবেই অতিষ্ঠ নগরবাসীর জিজ্ঞাসা, দায়িত্ব পেলে দীর্ঘদিনের মশাজনিত সমস্যা থেকে রক্ষায় কী ভূমিকা রাখবেন পরবর্তী মেয়র? তিনি কি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিবেন বিষয়টা? নাকি ‘মশার গ্রামই’ রেখে দিবেন শহর চট্টগ্রামকে?
শিহাব নামে আগ্রাবাদ এলাকার এক বাসিন্দা আজাদীকে বলেন, অতীতে নির্বাচিত মেয়রগণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পুরোপুরি সফল হননি। তাই নতুন মেয়র মশক নিধনে কী করবেন সে কর্মপরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি এখনই শুনতে চাই আমরা। এদিকে স্থানীয় সরকার আইন স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর তৃতীয় তফসিলের ১নং অনুচ্ছেদে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে যে ক্ষমতা তার আলোকেই মশক নিধনে ব্যবস্থা নিতে হবে সিটি কর্পোরেশনকে। তাছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ চসিক। এ কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখ আছে, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডকে চার ভাগে ভাগ করে প্রতিটি ভাগের রাস্তা, ফুটপাত, গলি, উপ-গলি, নালা-নর্দমা যথাযথভাবে পরিষ্কার এবং এছাড়া মশক নিধনে স্প্রে করা হবে। প্রতি মাসে চার বার এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।’ ফলে কোনো ভাবেই মশক নিধন কার্যক্রম থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার সুযোগ নেই নতুন মেয়রের।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলমের মেয়াদকালে ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মশক নিধন খাতে তিন কোটি ২৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭ টাকা খরচ হয়। আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদকালে খরচ হয় ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০১০ সালে এক লাখ ৩৮ হাজার ৭০০ টাকা, ২০১১ সালে এক কোটি ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬৭ টাকা, ২০১২ সালে ৬৮ লাখ ২৮ হাজার ৪০০ টাকা, ২০১৩ সালে ৬০ লাখ ৯১ হাজার ৯১০ টাকা, ২০১৪ সালে ৮৬ লাখ ৬১ হাজার ৪১০ টাকা ব্যয় হয়। এছাড়া ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে এক কোটি টাকা, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে এক কোটি ৮৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া চলতি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
চসিকের পরিচ্ছন্নকর্মীরা জানিয়েছেন, সারাবছরই মশার উপদ্রব থাকে নগরীতে। তবে প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই পাঁচ মাসে মশার উপদ্রব বেশি লক্ষ্য করা যায়। মূলত এই সময়ে মশার ওষুধ ছিটানোর উপর জোর দেয়া হয়।
এদিকে প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের নির্দেশে গত ৪ নভেম্বর থেকে মশার প্রজনন রোধে নগরে খাল পরিষ্কার কর্মসূচি শুরু করে চসিক। কার্যক্রম এখনো চলমান। একদিন পর ৬ নভেম্বর মাস্টার পোল এলাকা থেকে ওষুধ ছিটানোর আরেকটি কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে ১১ নভেম্বর মশক নিধন কার্যক্রম তদারকির জন্য আট সদস্যের মনিটরিং সেলও গঠন করে সংস্থাটি। এছাড়া এলডিও বা কালো তেল ছিটানো কার্যক্রমও শুরু করেন তিনি। তবু কমছে না মশার অত্যাচার।
মেয়র প্রার্থীর বক্তব্য : আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মশক নিধনে জরুরি আমাদের আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। নির্বাচিত হলে চসিকের সেবকদের দিয়ে যেন রাস্তাঘাট, নালা-নর্দমা, ঝোঁপঝাড়, খাল-জলাশয়, মজাপুকুর, কচুরিপানা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যায় সে বিষয়ে আমি কার্যকর পদক্ষেপ নিব। মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিব। তিনি বলেন, নাগরিকদের মাঝে বিভ্রান্তি আছে, মশক নিধনে যে কীটনাশক ব্যবহার করা হয় তা কার্যকর নয়। এটি কেন হবে? কীটনাশকের কার্যকারিতার পরীক্ষা, মশক নিধন কার্যক্রম পরিদর্শন এবং তদারকি জন্যে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে মশক নিধন সেল গঠন করে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিব। পুরো শহরকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করব। আধুনিক ও উন্নত মানের যন্ত্রপাতি, ফগার মেশিন, স্প্রে মেশিন সংযুক্ত করে মশার লাভা এবং উড়ন্ত মশা ধ্বংস পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করব। এসব প্রকল্পে আউট সোর্সিং প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়ে চসিকের নিজস্ব কার্যক্রম তুলনামূলক যাচাই করে দেখব। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি, সামাজিক সংগঠন, মসজিদ কমিটি, মহল্লা কমিটির সহায়তা নিব। প্রয়োজনে মশক নিধন কার্যক্রমে মিস্ট ব্লোয়ার স্প্রে মেশিন, ভেহিকেল মাউন্টিং মেশিন,আকাশ থেকে কীটনাশক ছোঁড়ার মেশিন সংযোজন করা হবে।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেড়ে গেলে আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে আমার তৈরি করা ক্লোরিন সলিউশন বানিয়ে ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরি করেছিলাম। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা উদাহরণ ছিল। প্রতিটি জায়গায় ব্লিচিং পাউডারের সাথে পানির মিশ্রণ করে সারা চট্টগ্রাম শহরে ছিটিয়েছি। মেয়র নির্বাচিত হলে মশক নিধনে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করব। প্রতিবছর মশক নিধনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ রাখে। কিন্তু সাধারণ মানুষ মশার অত্যাচার থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। কেন। নির্বাচিত হলে বরাদ্দের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে মশক নিধন করব। মশার উৎপত্তিস্থল পরিচ্ছন্ন রেখে প্রজনন রোধ করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্দরে ২ হাজার ৭৬৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকার অডিট আপত্তি
পরবর্তী নিবন্ধবন্দরের ১৮০ কোটি টাকা ছাড় নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি