মশার উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় ‘বিড়ম্বনায়’ মেয়র

বললেন, দিনেও মশা, রাতেও মশা- এ বাস্তবতাকে অস্বীকার করবো না ।। শপিং কমপ্লেক্সে দোকান নির্মাণ এখন গলার কাঁটা ।। বর্ষার আগে বাঁধ না খুললে গতবারের চেয়েও বেশি পানি হবে

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৪ মার্চ, ২০২২ at ৮:০১ পূর্বাহ্ণ

নগরে মশার উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় ‘বিড়ম্বনায়’ আছেন বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ জন্য ‘বিব্রত’ হচ্ছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘দিনেও মশা, রাতেও মশা, এ বাস্তবতাকে অস্বীকার করবো না’। মশার উপদ্রব বৃদ্ধির জন্য সিডিএর জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় খালে বাঁধ দেয়াকে দায়ী করে বলেন, এ প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহর থেকে মশা নির্মূল করা যাবে না। মশা পুরোপুরি নির্মূল হয়ত করা সম্ভব হবে না, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতেও আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মেয়র। গতকাল বুধবার সকালে আন্দরকিল্লাহস্থ নগর ভবনের কে বি আবদুস সাত্তার মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, গিয়াস উদ্দিন ও আফরোজা কালাম এবং চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলছে ৩৬টি খালে। খালে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এতে পানি চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পানি জমে আছে। ফলে মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল ওয়ার্ডে ব্রিডিং জোন চিহ্নিত করে তা নির্মূলে ফর্মূলা দেন। তা প্রয়োগ করেছি। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ওষুধও প্রয়োগ করছি। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না।
এ সময় নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মেয়র বলেন, চার-পাঁচদিন আগে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়েছিলাম। আমি নিজেই সাধারণ মানুষের কাছে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। নিজের কাছে লজ্জা লেগেছে। এমনভাবে পানি জমেছে যেতে পারছে না। স্যুয়ারেজের পানিও আটকে ছিল। সেখানে একটি ঢিল ছুঁড়ে মারলাম। তখন আমার মনে হল কয়েক হাজার কোটি মশা সেখান থেকে উড়ছে। এমন অবস্থা সমস্ত শহরে। অথচ তার তিন দিন আগে আমাদের স্প্রে-ম্যানরা ওষুধ মেরেছে। তাই পানি প্রবাহ যতদিন ঠিক না হবে ততদিন মশার উপদ্রব বন্ধ হবে না।
মশক নিধন কার্যক্রমে গতি আনতে অস্থায়ীভাবে একজন কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দেয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, শহরের বাইরে গ্রামে যান, দেখবেন এখানকার মতো এত মশা সেখানে নেই। কারণ সেখানে পানি জমে থাকার সুযোগ কম। এখানে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ তো আছেই, এরপর ওয়াসাও রাস্তাঘাটে গর্ত করে রেখে দেয়, সেখানে পানি জমে। আর পানি জমলেই মশা।
গত এক বছরে নিজেকে কতটা সফল মনে করেন? এমন প্রশ্নে মেয়র বলেন, সাফল্য-ব্যর্থতা নিজে পরিমাপ করতে পারবো না। এটা করবেন আপনারা। আপনারা ভুল দেখলে লিখবেন। সমালোচনা করবেন। সমালোচনার সাথে সমাধানের পথটুকুও দেখিয়ে দেবেন, দিকনির্দেশনা দেবেন। তবে আমি নিরন্তর নগরবাসীর সেবা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি একটি সুন্দর, পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যসম্মত, নান্দনিক শহর হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তুলতে চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, খাল-নালার উপর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। অবৈধ স্থাপনা যত প্রভাবশালীই করুক না কেন আমি উচ্ছেদ করবো। ফুটপাতে অবৈধভাবে দোকানপাট গড়ে উঠা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি ফুটপাতে একটি দোকানও বরাদ্দ দিইনি। একটাও দেখাতে পারবে না। আমি যেখানে ফুটপাতের ওপর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছি, সেখানে আমি দোকান কেন বরাদ্দ দেব? পূর্ববর্তী যারা ছিলেন তারা দিয়েছেন। এমনভাবে চুক্তিগুলো করা হয়েছে যেগুলো বাতিল করতে পারছি না। এদেরও অনেকের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। সময় শেষ হলে উচ্ছেদ করে বাতিল করে দিবো।
এসময় সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প প্রসঙ্গে বলেন, অনেকে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের চুক্তি বাতিল করেছি। যাদের পারফরমেন্স খারাপ তাদেরগুলো নবায়ন করা হচ্ছে না। অনেকে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে জায়গা নিয়েছে। মিড আইল্যান্ডে গাছ তিনটা লাগিয়ে দোকান করে ফেলেছে। এখানে সৌন্দর্যবর্ধন হলো কোথায়? এগুলোর জরিপ চালাচ্ছি। যাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে সময় বর্ধিত করছি না।
চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সে দোকান নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেন, এটা বাতিল করতে হলে সিটি কর্পোরেশনকে বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। বিল্ডিংটা যদি গ্রাউন্ড লেবেলে থাকতো তাহলে এক ধরনের। এখন তো করেই ফেলেছে। এটা বাতিল করতে হলে ওদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যার ফলে এটা এখন গলার কাঁটা হয়ে গেছে।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, সিডিএ এবং মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকল্প পরিচালকসহ সব সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছি। টেলিফোনেও ওনাদের বারবার তাগাদা দিচ্ছি। সেদিন রেডিসন ব্লু-তেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনেও উপস্থাপন করেছি। মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছি। আমি বলেছি, গতবার একগলা পানিতে থাকি, এবার পানি মাথার ওপর উঠবে। এপ্রিলের শেষে বর্ষার আগে যদি বাঁধ খুলে দেয়া না হয়, তাহলে আমি জীবন দিয়েও মানুষকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারব না। গতবারের চেয়েও বেশি পানি হবে।
খাল-নালায় পলিথিন ও আর্বজনা ফেলা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে জানিয়ে বলেন, এ অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। সকালে ময়লা নেয়ার পর আবার দেখা যায়, দিনের ১০টা-১১টার দিকেও মানুষ ময়লা ফেলছে। একটা খাল বা নালা পরিস্কার করা হয়, কিন্তু ১৫ দিন পর দেখা যায় সেখানে আবার ময়লা-আবর্জনা, শুধু পলিথিন আর পলিথিন। এই পলিথিন বন্ধে আমি অভিযান শুরু করেছিলাম। ব্যবসায়ীরা সময় চেয়েছিল। সময় দিয়েছি। সময়সীমা শেষ হলে আমি কঠোর হব।
খাল-নালার পাড়ে বেষ্টনি দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, সড়কের পাশে মানুষের চলাচল আছে, এমন এলাকায় উন্মুক্ত খাল-নালার পাড়ে আমরা কোথাও গ্রিল দিয়ে, আর কোথাও দেয়াল তুলে দিচ্ছি। কিন্তু নগরীতে সিডিএসহ বিভিন্ন সংস্থা উন্নয়ন কাজ করছে। ডিপিপিতে লেখা আছে, যেসব এলাকায় উন্নয়ন কাজ হচ্ছে সেখানে রক্ষাণাবেক্ষণের পুরো দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সংস্থার। সুতরাং সেখানে সিটি করপোরেশনের যাবার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, কোনো অনিয়মের সঙ্গে কারো জড়িত থাকার প্রমাণ হয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। দায়িত্ব নেয়ার পর ছাড় কাউকে দিইনি। বরখাস্ত করেছি। সেদিও জলে ঢুকিয়ে দিয়েছি। শহরের অনেক রাস্তায় সড়ক বাতি না জ্বলা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, এলইডি নিয়েও বিড়ম্বনায় আছি। প্রায় তার চুরি হয়ে যাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবীর মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর হায়াৎ খানকে স্মরণ
পরবর্তী নিবন্ধতিন হাজার ৬৬৩ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান আছে