গত সোমবার চসিকের উদ্যোগে ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে আয়োজিত মশক নিধন ক্রাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে নগরজুড়ে বিশেষ মশক নিধন ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এ কার্যক্রমের আওতায় নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ধারাবাহিকভাবে মশক নিধন অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে চসিক সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ডেঙ্গ ও চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রতিটি ওয়ার্ডে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হবে। মশা নিয়ন্ত্রণে আমরা আমেরিকা থেকে বিটিআই নামের একটি অত্যন্ত কার্যকর মশার লার্ভা নিধক ঔষধ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করে বেশ ভালো ফল পাচ্ছি। এছাড়া, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ওয়ার্ডভিত্তিক মশক নিধন কার্যক্রম মনিটরিং করতে।
সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন অন্যত্র বলেছেন, যে কোনো উপায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবনের নির্দেশ দেন। নতুন ওষুধের সন্ধানের পাশাপাশি কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে লার্ভা খেতে পারে এমন মাছ বা কীটপতঙ্গ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতায় জোর দেন।
মশক নিধনের ব্যাপারে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাতের এমন দৃঢ় ও শক্ত অবস্থানকে নগরবাসী প্রশংসা করছেন। তাঁরা বলেন, মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরজীবন। ঘরে–বাইরে বাসা কিংবা অফিস সব জায়গাতেই মশার উপদ্রব। মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের নামমাত্র ওষুধ ছিটানো ছাড়া তেমন কোনো কার্যক্রম ইতোপূর্বে পরিলিক্ষিত হয়নি। ফলে বর্তমান মেয়র তাঁর পথ চলার শুরুতে মশার ব্যাপারে যেভাবে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিলেন, তাতে আমরা আনন্দিত।
জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। কিন্তু জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই। কীটতত্ত্ববিদরা মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার কথা বলেন। এজন্য প্রথমত, চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। কেননা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে মশা বেশি জন্মায়। দ্বিতীয়ত, জৈবিক পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে কোথায় কোথায় মশা বেশি, কোন ধরনের মশার উপদ্রব বেশি এবং এ মশার জন্য কোন ওষুধ কতটুকু ছিটাতে হবে, তা নির্ণয় করে ওই জায়গায় ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। যেন এসব জায়গায় নতুন করে মশা জন্মাতে না পারে। এছাড়া মশার অতিরিক্ত প্রজনন বন্ধের জন্য জলাশয়ে মাছ, হাঁস ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয়ত, রাসায়নিক ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবে অনেকের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন ওষুধ ছিটালেও মশার উপদ্রব কমাতে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। ওষুধ দিলে সাময়িক মশার উৎপাত কমে, ওষুধের কার্যকারিতা কমে গেলে আবারো উপদ্রব বেড়ে যায়।
রাষ্ট্র যেমন নাগরিকদের বিবিধ সুযোগ–সুবিধা এবং অধিকার দিয়ে থাকে, তেমনি রাষ্ট্রের প্রতিও নাগরিকদের কতগুলো দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। অধিকার ও কর্তব্য পরস্পর নির্ভরশীল ও পরিপূরক। প্রত্যেক নাগরিককেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হবে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এমনকি রাষ্ট্রের বেআইনী কোন কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো নাগরিকদের নৈতিক দায়িত্ব। তাহলেই সুশাসন এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে। এছাড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে পালন করতে হবে নিজেদের দায়িত্ব। নিজের বাড়ির চারপাশ সুন্দর রাখা, পরিচ্ছন্ন রাখা এবং অন্যকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা সেই দায়িত্বেরই অংশ। যেখানে সেখানে ময়লা অবর্জনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করা আমাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিনের এই খাসিলত বদলাতে হবে। যেখানে মশার বংশ বিস্তারের সুযোগ রয়েছে, সেখানে নিজে দাঁড়িয়ে অন্যকে সঙ্গে নিয়ে তার প্রজনন রোধ করা গেলে সিটি করপোরেশনের কাজে যেমন সহযোগিতা দেওয়া হবে, তেমনি সামগ্রিকভাবে নগরবাসী উপকৃত হবে। সমন্বিত মশক নিধন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ করার ক্ষেত্রে নগরবাসীকেও সংযুক্ত করতে হবে।








