মশক নিধনে ঢাকার দুই সিটির এক চতুর্থাংশ বরাদ্দ পেল চট্টগ্রাম

ডেঙ্গু রোধে করণীয় নির্ধারণে চসিকের সমন্বয় সভা বৃহস্পতিবার

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১ নভেম্বর, ২০২২ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

এবার মশক নিধন ও পরিচ্ছন্ন খাতে বরাদ্দে বৈষম্যের শিকার হল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের মাত্র এক চতুর্থাংশ বরাদ্দ পেয়েছে চসিক। অথচ দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে চট্টগ্রাম। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ঢাকার মত চট্টগ্রামেও প্রতিদিন বাড়ছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু শনাক্তের হার।
এদিকে বরাদ্দ কম পেলেও বিনামূল্যে ডেঙ্গু শনাক্তে পরীক্ষা করানোর উদ্যোগ নিচ্ছে চসিক। এছাড়া নগরে ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে করণীয় ঠিক করতে জরুরি সভা আহ্বান করেছে সংস্থাটি। আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় সভায় সিডিএ চেয়ারম্যান, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালককে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
চসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নগরের ছাদ বাগান এবং নির্মাণাধীন ভবনে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার জন্মানোর উৎস বেশি পাওয়া যাচ্ছে। ছাদবাগানের বিভিন্ন টব এবং নির্মাণাধীন ভবনে জমাটবদ্ধ পানি থাকে। যেখানে মশার লার্ভা সৃষ্টি হয়। চসিকের দাবি, ছাদ বাগান পরিচর্যাসহ এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তা করার কথা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম তেমন চোখে পড়ে না। তাই অনুষ্ঠেয় সভায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালককে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
এছাড়া নগরে নতুন ভবন নির্মাণ কার্যক্রম মনিটরিংয়ের দায়িত্ব সিডিএর। কিন্তু নির্মাণাধীন ভবনে জমাটবদ্ধ পানি থাকায় এডিসের লার্ভা সৃষ্টি হচ্ছে। এরপরও বিষয়টি আমলে নেয় না সিডিএ। তাই সংস্থাটির চেয়ারম্যানকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে চসিকের জরুরি সভায়। এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে করণীয় ঠিক করবে দুই সংস্থা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ডেঙ্গু শনাক্তের হার বাড়ছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। যেমন শুধু ডেঙ্গু রোগীদের জন্য শহরে কোনো হাসপাতালে বিশেষ কোনো সুবিধা রয়েছে কীনা তা সাধারণ মানুষ জানে না। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে কী করতে হবে এ বিষয়েও স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে নগরে কোনো প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে না।
সভার বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। আমরা নিয়মিত ওষুধ ছিটাচ্ছি। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। এরপরও আরো কীভাবে কার্যকর প্রদক্ষেপ নেয়া যায় তা চিন্তা করছি। সেজন্য সভা আহ্বান করেছি। ওই সভায় সামগ্রিক তথ্য সংগ্রহ করে কি করলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমানো যায় সে করণীয় ঠিক করব। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু সনাক্তের পরীক্ষা করার চিন্তা-ভাবনা করছি। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য আমাদের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও সভায় উপস্থিত থাকবেন। সবমিলিয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে সভায়।
ঢাকার চেয়ে কম বরাদ্দ :
মশক নিধন ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় চসিককে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অথচ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন দুই কোটি টাকা করে পেয়েছে। অর্থাৎ চট্টগ্রাম রাজধানীর দুই সিটির এক চতুর্থাংশ বরাদ্দ পেয়েছে।
অবশ্য বরাদ্দের বাইরেও মশক নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন খাতে ঢাকার চেয়ে পিছিয়ে আছে চট্টগ্রাম। যেমন ঢাকা উত্তরে ৮৬৪ জন লোকবল নিয়মিত মশক নিধন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। অথচ চসিকের মশক নিধন কার্যক্রমে জড়িত সর্বোচ্চ ৩০০ জন। এর মধ্যে মাত্র ২৬৪ জন প্রশিক্ষিত স্প্রে ম্যান রয়েছে।
এছাড়া ঢাকা উত্তরে মশক নিবারনি দপ্তরের ১৪ জনসহ মশক নিধনে ৫৪ জন সুপারভাইজার কাজ করেন। চট্টগ্রামে এর অর্ধেকও স্থায়ী সুপারভাইজার নেই। এছাড়া ঢাকা উত্তরে প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক নিবারনি দপ্তর হতে ৮ থেকে ১০ জন এবং আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১০ জন মিলিয়ে ১৮ থেকে ২০ জন স্প্রেম্যান মশক নিধনে স্প্রেম্যান হিসেবে কাজ করে থাকে। জানা গেছে, ঢাকা উত্তরে ১০ টি জোনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। চট্টগ্রামে জোন আছে ছয়টি। ঢাকা উত্তরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ডেপুটেশনে চারজন কীটতত্ত্ববিদ কর্মরত আছেন। চট্টগ্রামে একজনও নেই। ঢাকা উত্তরে এডাল্টিসাইট ছিটানোর জন্য ১৫টি ১৫০ লিটার ট্রাঙ্ক সমৃদ্ধ ভ্যাকেল মেথড থার্মাল ফগার মেশিন (গাড়িতে বহনযোগ্য উচ্চমাত্রার ফগিং সক্ষম) আছে। এ খাতেও পিছিয়ে চট্টগ্রাম।
ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রাম কম বরাদ্দ পাওয়া প্রসঙ্গে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের আরও বেশি বরাদ্দ দেয়া উচিত। এ বিষয়ে মন্ত্রণলয়ের সভায় আমি বলেছি। ঢাকার দুই মেয়রও সমর্থন দিয়েছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওয়ান স্টপ সার্ভিস শিল্প স্থাপনে ভূমি ব্যবস্থাপনার জটিলতা দূর করবে
পরবর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রী আসছেন, তাই ‘সুনজর’