বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়ে নতুন এক রেকর্ড গড়েছে আফ্রিকার দেশ মরক্কো। আর ফাইনালে যাওয়ার সেই ঐতিহাসিক লড়াইয়ে মরক্কোর প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। শক্তি-সামর্থ্য, ঐতিহ্য, সাফল্য সব দিক থেকেই মরক্কোর চেয়ে যোজন-যোজন এগিয়ে ফ্রান্স। সেমিফাইনালে তাই স্পষ্ট ফেভারিট শিরোপাধারীরাই। তবে প্রতিপক্ষকে কোনোভাবেই হালকাভাবে নিতে নারাজ দলটির অধিনায়ক উগো লরিস। তার মতে ইতিহাস গড়া আফ্রিকার দলটিকে হারাতে নিজেদের সর্বোচ্চটা প্রয়োজন হবে ফরাসিদের। রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তোলা ফ্রান্স এবারের আসরেও ছুটছে দুর্বার গতিতে।
কোয়ার্টারফাইনালে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম শিরোপাধারী দল হিসেবে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে তারা। ইংলিশদের বিপক্ষে গত শনিবার শেষ আটের ম্যাচটি দিয়ে দারুণ এক কীর্তি গড়েন লরিস। ফ্রান্সের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৪৩ ম্যাচ খেলার রেকর্ড এখন এই গোলরক্ষকের। ছাড়িয়ে যান তিনি সাবেক ডিফেন্ডার লিলিয়ান থুরামকে। লরিসের অর্জনের ম্যাচটি ২-১ গোলের জয় দিয়ে রাঙায় ফরাসিরা। এরপর ড্রেসিং রুমে তার একটি স্মারক জার্সি তুলে দেন কোচ দিদিয়ে দেশম। সেখানেই মরক্কো ম্যাচ নিয়ে তৈরি থাকার বার্তা দেন ফ্রান্স অধিনায়ক।
ফ্রান্সের জার্সি পরতে পেরে, এমনকি ১৪৩ ম্যাচে খেলার পর আমি এখনও গর্বিত ও সম্মানিত। এই খেলাটিকে বিশেষ করে তোলার জন্য দল, স্টাফ, ম্যানেজমেন্টের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারানো আমার জন্য বিশেষ স্মৃতি হয়ে থাকবে। একই সঙ্গে আমার পরিবারের জন্যও। যারা মাঠে উপস্থিত ছিল। এখন আমরা মরক্কোর বিপক্ষে সেমিফাইনালের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেব। বিশেষ কিছু অর্জনের জন্য আমাদের সব সামর্থ্য ও শক্তির প্রয়োজন হবে। আমার মনে হয় আমরা সবাই এসব নিয়ে সচেতন আছি। তবে আমাদের শান্ত থাকতে হবে।
কাতার আসরের একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছে মরক্কো। বেলজিয়াম, কানাডাকে হারিয়ে, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ড্র করে গ্রুপ সেরা হয়ে শেষ ষোলোয় জায়গা করে নেয় তারা। নকআউট পর্বের প্রথম ধাপে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে টাইব্রেকারে হারিয়ে জায়গা করে নেয় কোয়ার্টার-ফাইনালে। এরপর তো দেখায় আরও বড় বিস্ময়। তারকায় ঠাসা পর্তুগালের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে ওঠে তারা সেমি ফাইনালে। আর ফ্রান্সও আছে বেশ ভালো ছন্দে।
১৯৬২ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে শিরোপা ধরে রাখার পথে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। তাদের এই পথচলায় অবদান রেখে চলেছেন অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড অঁতোয়ান গ্রিজমান। ইংলিশদের বিপক্ষে অলিভিয়ে জিরুদের ম্যাচ জেতানো গোলটি এসেছিল তার অসাধারণ ক্রস থেকেই। যা ছিল ফ্রান্সের হয়ে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের ফরোয়ার্ডের রেকর্ড ২৮তম অ্যাসিস্ট। গ্রিজমানের মতে তাকে দ্রুতই ছাড়িয়ে যাবেন কিলিয়ান এমবাপে ।
যিনি করেন ১৮ টি অ্যাসিস্ট। শিরোপা ধরে রাখা নিশ্চিত করতে আর কেবল দুই ধাপ দূরে ফ্রান্স। গ্রিজমান সতীর্থদের তাগিদ দিলেন সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার। কিলিয়ান এমবাপে ২৮ অ্যাসিস্ট থেকে মাত্র ১০টি দূরে। আমি বিশ্বকাপ জেতার উপভোগ করব। এখনও দুটি ম্যাচ বাকি আছে। আমরা শিরোপা ধরে রাখাটা উদযাপন করতে পারব। চলো আমরা মনোনিবেশ করি। প্রত্যয়ী হই এবং উপভোগ করি।