মনীন্দ্রভূষণ গুপ্ত (১৮৯৮–১৯৬৮)। প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী। মনীন্দ্রভূষণের ঢাকার আউটশাহি গ্রামে। পিতা ছিলেন রাজেন্দ্রভূষণ গুপ্ত। মনীন্দ্রভূষণের প্রারম্ভিক পড়াশোনা বাড়িতেই গৃহশিক্ষকের কাছে। ছোট বেলায় নিজের হাতে পূজার প্রতিমা গড়তেন। স্লেট পেনসিলে স্কেচ আঁকায় আগ্রহ ছিল। ১১ বৎসর বয়সে ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মাচর্যের বিদ্যালয়ে পড়তে আসেন। তার প্রথম পাঠ অসিতকুমার হালদারের নিকট। কলাভবনে চিত্রকলাবিদ্যা শেখেন। মাঝে ঢাকায় জগন্নাথ কলেজে বি.এ পড়াশোনা শুরু করলেও গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয় পড়াশোনা ত্যাগ করেন। শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর প্রথম ছাত্রদলের অন্যতম ছিলেন মনীন্দ্রভূষণ। ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে Indian Soceity of Oriental Art এ তার প্রথম প্রদর্শনী অনুষ্ঠান হয়। অন্ধ্র জাতীয় কলাশালায় পর সিংহলে ( বর্তমানে শ্রীলঙ্কা) আনন্দ কলেজে কলা বিভাগের প্রধান হিসাবে দু–বছর ছিলেন এবং গবেষণা করেন। এই সময় সিগিরিয়া গুহার শিল্পনিদর্শন দেখে বহু ছবি আঁকেন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ হতে ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দ কলকাতার সরকারি আর্ট কলেজে শিক্ষকতা করেন। এই সময় বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন তার ছাত্র ছিলেন। মনীন্দ্রভূষণের নৈসর্গিক চিত্রে বিশেষ আকর্ষণ ও এক নিজস্ব ধারা ছিল। তার অঙ্কিত ছবির মধ্যে মালবিকা, দেবযানী, বিজয় সিংহের সিংহল যাত্রা উল্লেখযোগ্য। তার ছবিগুলিকে মোটামুটি চারভাগে ভাগ করা যায়। যেমন – পুরাণ ও মহাকাব্যে বর্ণিত ছবি, নিসর্গ দৃশ্যাবলি, বিভিন্ন শ্রেণির নর–নারী তথা প্রতিকৃতি–জাতীয় রচনা এবং ড্রয়িং ও স্কেচ। বাংলার তথা বাংলাদেশের গ্রামের বিভিন্ন রূপ তার ছবিতে বিশেষ স্থান পেত। শিল্প, শিল্পী ও শিল্পতত্ত্ব বিষয়ক বহু প্রবন্ধ বাংলা ও ইংরেজিতে লিখেছেন। এমন কি কাগজ প্রস্তুত ও গালাশিল্প সম্বন্ধে মনীন্দ্রভূষণের প্রবন্ধাবলী প্রামাণিক হিসাবে গণ্য হয়। উল্লেখযোগ্য রচনা: ‘সিংহলের শিল্প ও সভ্যতা’, ‘Impression of Pilgrimage of Kedaranath and Badrinath in Twelve Linocuts’। তিনি ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ই ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।