দুর্গোৎসবের এই সময়ে পূজা মণ্ডপ ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়ি পাহারা দিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল শুক্রবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নেতাকর্মীদের এই নির্দেশনা দেন তিনি।
নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে কাদের বলেন, ৩২ হাজার ৪০৮ পূজা মণ্ডপ রয়েছে। আসলে দেখাশোনা করার দায়িত্বটা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এসব দুর্বৃত্তদের অপকর্ম রোধ করতে হলে আমাদের নিজেদের, আমরা যারা অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার রাজনীতি করি, আমাদের সবার উচিত, কোনো প্রকার সহিংসতা যাতে না ঘটে, কোনো প্রকার বাধাবিঘ্ন না আসে, সেই ব্যাপারে আমাদের সবার উচিত তাদের পাশে থাকা। আমি সারা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের, আমাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বলছি, এই দুর্গোৎসবে সতর্ক হয়ে পাহারা দেওয়া আমাদের কর্তব্য। সবাই সতর্ক পাহারা দেবেন। খবর বিডিনিউজের।
কুমিল্লা–৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের ‘মদমুক্ত পূজা’ মন্তব্যের প্রতিবাদে কিছুদিন আগে কুমিল্লায় বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। ওই মিছিলে সরকার সমর্থক যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। পুলিশের বিরুদ্ধেও মিছিলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন ঐক্য পরিষদের নেতারা। সেই প্রসঙ্গ ধরে কাদের বলেন, কুমিল্লায় সহিংসতার ঘটনাটি আওয়ামী লীগ খতিয়ে দেখছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে নিজেই খোঁজখবর নিয়েছেন। দল থেকে গোটা ব্যাপারটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেউ অপকর্ম করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ধর্মীয় উৎসবে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়টি সব সময় আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য ধারণ করে বলে মন্তব্য করেন কাদের। কিন্তু মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে হিন্দু ধর্মের উৎসব পালনে ভায়োলেন্স এর মত ঘটনা ঘটে, বলেন তিনি।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেন, ভোটের সময় হিন্দুরা না হলে আমাদের চলে না, কিন্তু হিন্দুরা যখন বিপদে পড়বে, তখন আমরা তাদের পাশে থাকি না। এটাতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি না। আমার ভোটের সময় তাদের প্রয়োজন, অথচ তাদের জীবন যাপনে তাদের ধর্মীয় পালনে আমাদের সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হবে, যারা ঘটনা ঘটায় তারা দুর্বৃত্ত। আমি এদেরকে হিন্দু মুসলমান বুঝি না। এদের পরিচয় এরা দুর্বৃত্ত। এই দুর্বৃত্ত মুসলমানদের মধ্যে নেই– এটা বলার উপায় নেই।
আওয়ামী লীগের সবাই ভালো মানুষ এমন দাবিও করতে চান না ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা। তিনি বলেন, কিছু কিছু ঘটনা ঘটে, বাড়ি ঘরে আগুন লাগে, জমি দখল করে, এগুলো একটা অসভ্য উদ্দেশ্যে অনেকে এসব ঘটনাগুলো ঘটিয়ে থাকে।…আমরা দলগতভাবে এসব ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করছি। এদের ব্যাপারে আমরা সতর্ক করছি। কাদের জানান, দলের কেউ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে থাকলে সে বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে জানানো হয়। তখন তিনি (শেখ হাসিনা) সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করেন। যেখানে যাকে দরকার তাকেই ফোন করেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন। আমরা যারা দলের দায়িত্বে আছি, তাদেরকে ডেকে বিস্তারিত শোনেন। এ বিষয়গুলো লোক দেখানোর জন্য তিনি করেন না। এটা তিনি মন থেকেই বলেন। এ বিষয়ে আমাদের ভুল বুঝবেন না।
দেশে যে সাম্প্রদায়িক দলও আছে, সে কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, হিন্দুদের মধ্যে আলাদা দুটো আছে। তারাও আবার মাইনরিটি জোট নিয়ে মাঝে মাঝে বিবৃতি দেয়। বক্তৃতা শুনি। শুধু জোট নয়, মহাজোট করেছে। সমর্থন একদম নাই তা নয়। গয়েশ্বর বাবু আছেন।
আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশের ডাক দিয়ে সেদিন থেকে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। দলটির এই ঘোষণার সঙ্গে গত বছরের ১০ ডিসেম্বরের তুলনা টেনেছেন কাদের। তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বরের মত ২৮ অক্টোবরও একই পরিণত হবে। ১০ ডিসেম্বর তাদের যেতে হয়েছিল গোলাপবাগের গরুর হাটে, এখন কোথায় যাবে সেটাই দেখার বিষয়। বিএনপি নেতারা সকালে ঘুম থেকে উঠে মিথ্যাচার শুরু করে, সত্য কথা কখন বলে সেই মানসিকতা তারা হারিয়ে ফেলেছে। তাদের শুভবোধ নেই।
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে বিএনপি ধ্বংস করেছে মন্তব্য করে কাদের বলেন, এর উদাহরণ ২০০১ ও ২০০৬। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা বাংলাদেশে আর করার সুযোগ নেই। আদালত বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নিয়েছে।
ধানমণ্ডিতে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জেএল ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, যুগ্ম–সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, দপ্তর সম্পাদক মিলন কান্তি, জয়ন্ত কুমার দেব উপস্থিত ছিলেন।