ভোটের আগে সংঘাত, নিহত এক

সাতকানিয়া ।। দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ গুলি, মহিলা সদস্য প্রার্থীসহ আহত ৮

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় ১ জন নিহত হয়েছেন। তার নাম আনোয়ার আলী (৫২)। একই ঘটনায় সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থীসহ উভয় পক্ষের ৮ জন আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের চাঁদেরপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাছির উদ্দিন টিপু ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী এম ইলিয়াছ চৌধুরী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আনোয়ার আলী ধর্মপুর ইউনিয়নের কুন্ডুকুল এলাকার মৃত কালু মিয়ার পুত্র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এম ইলিয়াছ চৌধুরীর সমর্থক। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়া উপজেলার ১৬ ইউনিয়নে নির্বাচন হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধর্মপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান এম ইলিয়াছ চৌধুরী প্রথমবারের মতো নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন। কর্মী-সমর্থকদের সাথে নিয়ে মিছিল সহকারে চাঁদেরপাড়া এলাকায় যান। এ সময় আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছির উদ্দিন টিপু ও তার কর্মী-সমর্থকদের সাথে মুখোমুখি হন। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ মুখোমুখি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে আনোয়ার আলীসহ উভয় পক্ষের ৯ জন আহত হন। আহত আনোয়ারকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অন্যরা হলেন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী চাঁদেরপাড়া এলাকার মো. ইউনুচের স্ত্রী ফারহানা নাছরিন ঝর্ণা (৪০), সিরাজ মিয়ার পুত্র মো. হারুন (৩২), আলী আহমদের পুত্র গিয়াস উদ্দিন (২৫), জসীম উদ্দিনের স্ত্রী ঝর্ণা আকতার (৩৫), মাহামুদুল হাছানের পুত্র ইসমাইল মামুন (৩৫), আবদুস শুক্কুরের স্ত্রী ইয়াছমিন আকতার (৪২), কামাল উদ্দিন (৪৫) ও আহমদুর রহমান (৫০)। আহতদের সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
নিহতের ভাতিজা নজরুল ইসলাম বলেন, আমার চাচা আনোয়ার আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইলিয়াছ চৌধুরীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে চট্টগ্রাম থেকে এলাকায় আসেন। গতকাল বিকালে সংঘর্ষের সময় ঘরের ছাদ থেকে ছুড়ে মারা ইটের টুকরোর আঘাতে তিনি মারা যান।
সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙের ডা. কাজী সোহান জানান, হাসপাতালে আনার আগেই আনোয়ার আলী মারা যায়। তার শরীরে উল্লেখযোগ্য কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ফলে কী কারণে মারা গেছে তা বলা মুশকিল। ময়না তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে।
ধর্মপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছির উদ্দিন টিপু বলেন, আমরা কিছু কর্মী-সমর্থকসহ চাঁদেরপাড়া এলাকায় নির্বাচনী কার্যালয়ে বসে কথা বলছিলাম। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী ইলিয়াছ চৌধুরীর নেতৃত্বে লোকজন ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে কামাল উদ্দিন ও আহমদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন।
তিনি জানান, হামলাকালে ইলিয়াছ চৌধুরীর লোকজন ১০-১২ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। তাদের হামলায় আমার কর্মীরা আহত হয়েছে। তবে আনোয়ার আলী কোথায়, কীভাবে মারা গেছে আমি জানি না।
স্বতন্ত্র প্রার্থী এম ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, আমরা কর্মী-সমর্থকদের সাথে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলসহ সহকারে প্রচারণা শুরু করি। এর পরপর আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাছির উদ্দিন টিপু ও তার লোকজন আমাদের মিছিলে হামলা চালায়। এ সময় তারা আমাদের ওপর এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ও লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এ সময় তাদের ছোড়া ইটের টুকরো পড়ে আমার সমর্থক আনোয়ার আলী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এছাড়া নারীসহ ৬ জন আহত হয়েছেন।
তিনি জানান, ঘটনার পরপর আনোয়ারকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে হয়তো বাঁচানো যেত। কিন্তু নাছির উদ্দিনের কর্মী-সমর্থকরা গাড়ি নিতে বাধা দেওয়ায় যথাসময়ে হাসপাতালে নিতে পারিনি। তার অভিযোগ, মনোনয়ন দাখিলের পর থেকে তারা আমাকে প্রচারণায় নামতে দেয়নি। গতকাল প্রচারণায় নামার সাথে সাথে হামলা চালিয়েছে। আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে তারা এমন দমন, নিপীড়ন চালাচ্ছে।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শিবলী নোমান বলেন, প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাছির উদ্দিন টিপু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এম ইলিয়াছ চৌধুরী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আনোয়ার আলী নামে ১ জন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদিন দিন সহিংস হচ্ছে পরিবেশ
পরবর্তী নিবন্ধমাদ্রাসা অধ্যক্ষের যাবজ্জীবন