ভোজ্যতেলের বাজার : অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর থাকতে হবে

| সোমবার , ১১ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে অস্থিরতা চলছে দেশে। দীর্ঘদিন নিম্নমুখী থাকার পর আবারও বাড়তে শুরু করেছে দাম। আজাদীতে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম মণপ্রতি বেড়েছে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এখনো ভোজ্যতেলের বাজার চড়া। প্রতিদিনই বুকিং দর অল্প অল্প করে বাড়ছে। দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে সয়াবিন ও পাম উভয় তেলের দাম স্থির থাকছে না। তবে ভোক্তারা বলছেন, দেশে সয়াবিন তেলের মিল রয়েছে হাতে গোনা। কাস্টমসের তথ্যমতে, দেশে প্রচুর পরিমাণ সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে। তাই এই মূহূর্তে সয়াবিনের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
এদিকে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান সিন্ডিকেট কারসাজির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আমরা সব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে নই। কিন্তু যারা অনিয়ম করবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ। কোনো ব্যবসায়ী সংগঠন তাদের পক্ষ নেবে না। ব্যবসায়ীরা যদি আজকে আমাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দেন তারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করবেন, কাল থেকে আমরা বাজারে অভিযানে যাব না।
শনিবার নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ‘রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই সভায় তিনি আরো বলেন, রমজান উপলক্ষে ভোগ্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উৎপাদন ও সাপ্লাই চেইনে ঘাটতিজনিত কারণে অস্বস্তিকর বাজার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভোক্তা সাধারণ যাতে সহনীয় এবং ন্যায্যমূল্যে পণ্য ক্রয় করতে পারেন এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে যাচ্ছে। আমাদের সবার যুদ্ধ তাদের বিরুদ্ধে যারা তিন টাকার লেবু একই মার্কেটে আট টাকায় বিক্রি করে। তেল মিল গেট থেকে ক্রয় করার পর প্রতিটি পর্যায়ে যারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে, তাদের বিরুদ্ধে। ভোক্তারা যাতে স্বস্তিতে থাকে সেজন্য আমাদের যা যা করার তা করব।
ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক বলেন, রমজানে আড়াই থেকে পৌনে তিন লাখ টন ভোজ্যতেল লাগে। চাহিদার তুলনায় দেশে তেল থাকা সত্ত্বেও বাজার অস্থির হয়ে যায়। ১৬ মার্চ ডিউটি প্রত্যাহার করার আগেই কারা বাজার অস্থির করেছে তা অনুসন্ধান করেছি আমরা। খুচরা থেকে মিলার সবাই সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়েছে। রিফাইনারিগুলোতেও আমরা অভিযান চালিয়েছি। সেখানেও কিছু অনিয়ম পেয়েছি। তবে এখন থেকে তারা আমাদের কথা দিয়েছে উৎপাদন অব্যাহত রাখবে। সাপ্লাই অর্ডারে (এসও) দাম উল্লেখ থাকবে। এছাড়া এখন থেকে ডিলাররা ছাড়াও মিল গেট থেকে যে কেউ মিলের দামে ভোজ্যতেল কিনতে পারবে। পাশাপাশি আমরা একটি অ্যাপস করছি। যেখানে তেল আমদানি থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত সব তথ্যের লাইভ আপডেট থাকবে।
অন্যদিকে, পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশের বাজারে গত মার্চ মাসে সয়াবিন ও পাম অয়েলের সরবরাহে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছিল, তার নেপথ্যে ছিল ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো। চালু থাকা ছয়টি পরিশোধনকারী কোম্পানিই জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিল। অতি মুনাফার উদ্দেশ্যে কোম্পানিগুলো সরবরাহ কমিয়েছে বলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তদন্তে উঠে এসেছে। অধিদপ্তরের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর অতি মুনাফার প্রবণতা সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। বাজারে সয়াবিন ও পাম অয়েলের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণ জানতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দেশের ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শন করে। পরিদর্শনে কারখানাগুলোর সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ সরবরাহ আদেশ রাখা, বাজারদরের চেয়ে বেশি দর লেখা বোতলজাত তেল মজুদ রাখার মতো ঘটনা পাওয়া গেছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এ বিষয়ে বলেছেন, কোম্পানিগুলোর অপরাধের ধরন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, দেশের ৫ ভাগ অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। যারা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোট কথা হলো, অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর থাকতে হবে। প্রচুর মজুদ থাকা সত্ত্বেও ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির করার চক্রান্ত নস্যাৎ করতে হবে।.

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে