ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ৩ মার্চ, ২০২২ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা করে বাড়ানোর ২০ দিনের মাথায় আবারও ১২ টাকা করে বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে সরকারের কাছে গেছেন ব্যবসায়ীরা। খবরটা আজাদীসহ বিভিন্ন পত্রিকায় আসার পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ক্রেতাসাধারণের কাছে। তবে এবারও বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বগতিকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর এমন প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা বিবেচনার সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাব তো তারা দিতেই পারেন। আমরা এই মুহূর্তে এটা নিয়ে ভাবছি না।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন তেলের যেই দামটা বেড়েছে, সেটা দেশে আসতে অন্তত দুমাস লাগবে। প্রতি ১০/১৫ দিন পর পর তো আর দাম বাড়ানো যাবে না। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও এখনই দাম বাড়ানো হচ্ছে না বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব নুরুল ইসলাম মোল্লার কথাতেও।
দৈনিক কিংবা মাসিক, বাজারটা যখনই হোক, ক্রেতার মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোজ্যতেলের আকাশছোঁয়া দাম। বেশ কয়েক দফায় দাম বেড়েছে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খুচরা ও পাইকারি বাজারে দামের পার্থক্য থাকে বিস্তর। সব ক্ষেত্রেই বাজারে নজরদারি আরও বাড়ানোর জন্য দাবি জানায় ক্যাব। কনজুমার অ্যাসোসিয়েশনের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, দ্রব্য মূল্যের বৃদ্ধি, সেবার মূল্য বৃদ্ধি, যখন তখন বৃদ্ধি এটার কারণ হলো আমরা খুচরা বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পারছি না।
করোনার বিধিনিষেধের সুযোগ নিয়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কিংবা নানা অজুহাতে বাড়ানো হয়েছে চাল, আটা, মসুর ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে হ্রাস পাওয়ার পরও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেন রিফাইনাররা। তাতে সরকারের সায় না মিললেও পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। আসছে রমজানকে সামনে রেখেও চিনি ও মসুর ডালের দাম বাড়ানোর কারসাজি হচ্ছে বলে আভাস পেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাই ভোজ্যতেলের পাশাপাশি এ দুটি পণ্যেরও আমদানি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। রোজার মৌসুমে ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। নিম্নআয়ের পাশাপাশি মধ্যবিত্তের বাজারের হিসাবে টান লাগে। তাই আমদানি পর্যায়ে যাতে খরচ কমে যায়, সে জন্য অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর ৪ শতাংশ অগ্রিম কর কমাতে পারে সরকার।
বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, মূলত দেশের অসৎ ও অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে নানা সময়ে নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়ে। বিভিন্ন ধরনের অজুহাত সামনে রেখে বাজার অস্থির হওয়ার বিষয়টি যেমন নতুন নয়, তেমনি কারসাজিসহ নানা কারণেই নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টিও বারবার আলোচনায় আসে। এর প্রভাব পড়ে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। তারা ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হলে চলবে না। নিত্যপণ্যের দাম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ভোজ্যতেলসহ বাজার নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে।
তাঁরা বলেন, বাজার নিয়ে অতীতে অনেক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, প্রচুর লেখালেখি হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। বিক্রেতাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা মনে করি, বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না ঘটবে ততদিন নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে। মৌসুমভিত্তিক নয়, সারা বছর বাজার মনিটরিং করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের কার্যকর কঠোর উদ্যোগই কেবল পারে জনগণকে হয়রানি ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে এবং এর কোনো বিকল্প নেই। ব্যবসায়ীদের দাম বৃদ্ধির আবদার বা পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে