ভোগ্যপণ্যের বাজার : নজরে রাখতে হবে সিন্ডিকেটকে

| বৃহস্পতিবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদীতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রতি সাধারণ মানুষের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে। সংবাদটির শিরোনাম : ‘রমজানের আগে কমছে ভোগ্যপণ্যের দাম, বেড়েছে সরবরাহ, মজুদ পর্যাপ্ত’। চাক্তাইখাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ওঠানামা করছিল ভোগ্যপণ্যের বাজার। তবে বর্তমানে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে সরবরাহ বাড়ার কারণে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম নিম্নমুখী রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে চলতি বছর গত বছরের তুলনায় আমদানি কমেছে এটি ঠিক। তবে রমজান উপলক্ষে যারা পণ্য আমদানিতে এলসি (ঋণপত্র) খুলেছেন, তাদের পণ্য বাজারে আসা শুরু হয়েছে। বর্তমানে কোনো পণ্যের সংকট নেই। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর গুদামে পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্য রয়েছে।

চাইলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘সরবরাহে ঘাটতি থাকার কারণে এতদিন সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তি ছিল। তবে এখন বাজারে রমজান উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা পণ্য গুদামজাত করতে শুরু করেছেন। অনেকের আমদানি পণ্য বন্দর থেকে খালাসের অপেক্ষায় আছে। যদিও এ বছর আমদানি কিছুটা কম হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য রয়েছে’।

ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করার সংবাদটি খুবই আনন্দের। বর্তমানে যে হারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ডিম, মুরগি, সবজি, মাছসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবে ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা বলেন, ‘পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। রোজার পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুটা অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমরা আগ্রাধিকার ভিত্তিতে এলসি খুলতে পারছি। তবে নভেম্বর জানুয়ারিতে এই সুবিধা ছিল না। ফলে রমজানে গতবারের মত আমদানি করা পণ্যের সরবরাহ থাকবে না।’ তাঁরা জানান, বিশ্ব বাজারে ভোজ্যতেলসহ আরো কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে। তবে এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারছেন না তাঁরা। বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে দাম কেমন হবে তা নির্ভর করছে চাহিদা ও সরবরাহের উপরে। চাহিদার তুলনায় পণ্য কম হলে দাম বাড়তি হবে।’

এক্ষেত্রে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, আমাদের দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। পাইকারিতে পণ্যের দাম নিম্নমুখী হলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়তে সময় লাগে। তাই পাইকারিতে দাম কমার সরাসরি সুফল সাধারণ ভোক্তারা পান না। কিন্তু দেখা যায়, কোনো পণ্য পাইকারিতে দাম বাড়লে খুচরা ব্যবসায়ীরা সাথে সাথে দাম বাড়িয়ে দেন। তাই প্রশাসনকে নিয়মিত বাজার করতে হবে। যাতে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজির মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার লোভের কারণেই ভরা মৌসুমেও কোনো পণ্যের দাম কমছে না। গত কয়েক বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে একই রকম চিত্র দেখা যাচ্ছে। চালের মৌসুমে দাম কমছে না চালের, সবজির মৌসুমে দাম না কমে উল্টো বাড়ছে, মাছমাংসের দাম সারা বছরই চড়া। এভাবে প্রতিটি পণ্যের দাম শুধু বাড়ছে আর বাড়ছে। গত তিন বছরে দাম কমেছে এমন কোনো পণ্য আমাদের চোখে পড়ে না। অথচ এই তিন বছর দেশের মানুষ নানাভাবে, নানা কারণে চরম অর্থ সংকটে ছিল, এখনও আছে। এই সংকটের সময় দেশের মানুষের জন্য কীভাবে কম দামে পণ্য দেওয়া যায় সে চেষ্টা থাকার দরকার ছিল ব্যবসায়ী ও সরকারের, কিন্তু আমরা সে ধরনের কোনো চেষ্টা বা পদক্ষেপ কোনো পক্ষ থেকেই দেখিনি। বরং কীভাবে দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে আরও কষ্ট দেওয়া যায় সে চেষ্টাই হয়েছে। দেশে ভোগ্যপণ্যের বাজারব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। বাজার চলছে ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর। সরকারের কোনো দফতরেরও সঠিক নজরদারি নেই। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমদানি পণ্যের সিন্ডিকেট আছে। কয়েকজন আমদানিকারক বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই তাদের এই সিন্ডিকেট বন্ধ করতে পারলে সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই। যখন ডলার সংকট বা এলসি খোলায় সংকট ছিল না তখনও তো তারা সংকট তৈরি করেছে। তাই এই সিন্ডিকেটকেই নজরে রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে