ভেতরে মেয়রসহ কর্মকর্তারা, বাইরে তালা

নগর ভবনে পরিচ্ছন্নকর্মীদের দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ চাকরি করার পরও কাটা হয়েছে বেতন ফিঙ্গারপ্রিন্ট হাজিরা পদ্ধতি বাতিলসহ চার দাবি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

চাকরি করার পরও বেতন কাটা হয়েছে দাবি করে এর প্রতিবাদ এবং কেটে নেয়া টাকা ফেরত চেয়ে টাইগারপাস নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে টানা দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পরিচ্ছন্নকর্মীরা। এ সময় তারা নগর ভবনে প্রবেশের প্রধান দুটি গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। বিক্ষোভ চলাকালে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ চসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নগর ভবনে নিজ নিজ দপ্তরে ছিলেন। বিক্ষোভকারীদের নগর ভবনের ভেতরে কাউকে ঢুকতে এবং ভেতর থেকে বাইরে বের হতে বাধা দিতে দেখা গেছে। তারা ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙুলের ছাপের মাধ্যমে হাজিরা পদ্ধতি বাতিলসহ চার দফা দাবি জানান। দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগানও দেন তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুর ২টার দিকে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন আনুমানিক তিন শতাধিক পরিচ্ছন্নকর্মী। বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসা জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করে সাত দিনের মধ্যে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে বিকাল ৪টার দিকে চলে যান বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের নেতা রাজীব উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সবাই প্রতিদিন কাজ করি। তারপরও কারও দুই দিন, কারও পাঁচ দিনের বেতন কাটা হয়েছে। অনেকের পুরো মাসের বেতন পর্যন্ত কাটা গেছে। মেশিনে আঙুলের ছাপ না থাকায় এভাবে বেতন কাটা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা অল্প বেতনের চাকরি করি। এরপরও যদি টাকা কেটে ফেলা হয়, তাহলে সংসার চলবে কী করে? নিরুপায় হয়ে সবাই আন্দোলনে নেমেছে। দাবি না মানলে কাজ বন্ধ রেখে লাগাতার কর্মবিরতির কর্মসূচি দেয়া হবে।

এক পরিচ্ছন্নকর্মী বলেন, আমরা ফিঙ্গারপ্রিন্টে হাজিরা পদ্ধতি বাতিল চাই। ফিঙ্গারপ্রিন্টে হাজিরা নেয়ার পর থেকেই আমাদের বেতন কেটে রাখা হচ্ছে। আমরা মাসের ৩০ দিনই কাজ করি। ঈদ-পূজাতেও আমাদের ছুটি নেই। আমি গত নভেম্বরে প্রতিদিনই কাজে এসেছি। ফিঙ্গারপ্রিন্টও দিয়েছি। কিন্তু মেশিনে আমার চারদিনের হাজিরা তোলা হয়নি। আমার ১ হাজার ৮০০ টাকা কেটে রাখা হয়।

কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন পরিচ্ছন্নকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ডিজিটাল হাজিরা সংক্রান্ত ঝামেলায় যাদের বেতন কাটা হয়েছে বা পাওনা আছে তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে পাওনা টাকা পরিশোধ করা হবে। অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ী করার নথি আমরা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রীপরিষদে পাঠিয়ে দিয়েছি।

চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম আজাদীকে বলেন, মেশিন ডিস্টার্ব করলে ম্যানুয়ালি বা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেয়া হয়। তাই কাজে উপস্থিত থাকার পরও কারো বেতন কাটার সুযোগ নেই। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখে যারা কাজ করার পরও বেতন কাটা হয়েছে তাদের পাওনা সাতদিনের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। তিনি বলেন, কিছু মেশিনে ত্রুটি থাকতে পারে। এ বিষয়টি সমাধানের জন্য আইটি বিভাগকে বলা হয়েছে।

চার দফা দাবি : আন্দোলনকারীদের চার দফা দাবির প্রথমটি হচ্ছে আঙুলের ছাপ জটিলতায় যাদের বেতন কাটা গেছে তা ফেরত দিতে হবে এবং বেতন কাটার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে কর্মরত অস্থায়ী শ্রমিক-পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে স্থায়ী করা। তৃতীয়ত, ডোর টু ডোর (বাসাবাড়ি থেকে সরাসরি গৃহস্থালি বর্জ্য সংগ্রহ) প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ পাওয়া শ্রমিকদের চাকরির নিশ্চয়তা দেয়া। চতুর্থত, অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের সন্তানদের চাকরি দেওয়া এবং তাদের বকেয়া পাওনা দুই মাসের মধ্যে শোধ করা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচাঁদে চীনের সম্ভাব্য জমি দখল ঠেকানোর আহ্বান নাসা প্রধানের
পরবর্তী নিবন্ধরাশিয়া দীর্ঘ ড্রোন হামলার পরিকল্পনা করছে : জেলেনস্কি