ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর ভূমিকা দরকার

| বুধবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

খাদ্যে ভেজালের সংবাদ আমরা প্রায়শই দেখে থাকি পত্রপত্রিকায়। এসবের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানও চালানো হচ্ছে। আইনের আওতায় আনা হচ্ছে অপরাধীদের। তবুও থামছে না খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার প্রবণতা। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে প্রতি বছর গড়ে দেশে প্রায় চার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে এবং অনেকে স্থায়ীভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে যাচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফা এবং অধিক মেয়াদে সংরক্ষণের জন্য খাদ্যে ফরমালিন মিশ্রণ করে থাকে। খাদ্যে ভেজাল ও ফরমালিন মিশ্রণের বিরুদ্ধে যদিও অনেক আইন রয়েছে কিন্তু কেবল আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এটি সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। জনসম্পৃক্ততা ও সচেতনতার মাধ্যমেই কেবল এটি রোধ করা সম্ভব। বলা বাহুল্য, আজকাল নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুতেই ভেজালের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত ‘ভেজাল থামছে না খাদ্যপণ্যে’ শীর্ষক সংবাদে বলা হয়েছে, টেক্সটাইলের কাপড়ের রং ও ফ্লেভার মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুস, আইসক্রিম, মিষ্টি, পাউরুটি, বিস্কুট দই, ললিপপ, চকোলেট এবং কেক। এমনকি শিশু খাদ্য গুঁড়ো দুধেও পাওয়া যাচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। এর বাইরে নিত্যপ্রয়োজনীয় শাক সবজি, ফলমূল ও মাছ তরতাজা রাখতে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। এছাড়া বিষাক্ত ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো হচ্ছে কলা ও আনারস। বর্তমানে খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের জয়জয়কার হলেও প্রশাসনের অভিযানে কেবল জরিমানা করেই দায় সারা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাদ্যে ভেজাল বন্ধে প্রশাসন মাঝে মধ্যে ঝটিকা অভিযান চালায়। নিয়মিত অভিযান না চালানোর কারণে খাদ্যে ভেজাল দেয়ার সাথে জড়িত চক্রটি আবারও মাথাচড়া দিয়ে উঠে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার। খাদ্য মানেই তাই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ফরমালিন, হাইড্রোজ, ইথোপেনসহ নানা ক্ষতিকর রঙ ও রাসায়নিক বিষের সংমিশ্রণ। এসব খাবার খেয়ে মানুষ কিডনি বিকল, হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সারসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া দেশে খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার কোনো নজির নাই। ফলে তারা শুধু জরিমানার অংক গুনেই ফের একই কাজ করতে থাকে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এ যেসব কার্যকলাপকে অপরাধ গণ্য করা হয়েছে তা হলো- আইন ও বিধি দিয়ে নির্ধারিত হওয়া সত্ত্বেও পণ্যে মোড়ক ব্যবহার না করা; মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা; সেবার মূল্যের তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা; ধার্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য, ওষুধ বা সেবা বিক্রি করা; ভেজাল পণ্য বা ওষুধ বিক্রি করা; খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্য মিশ্রণ করা; মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাসাধারণকে প্রতারিত করা; প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রি বা সরবরাহ না করা; ওজনে কারচুপি করা; বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্রে প্রকৃত ওজন অপেক্ষা অতিরিক্ত ওজন প্রদর্শন করা; পরিমাপে কারচুপি করা; দৈর্ঘ্য পরিমাপক কার্যে ব্যবহৃত পরিমাপক ফিতা বা অন্য কিছুতে কারচুপি করা; পণ্যের নব প্রস্তুত বা উৎপাদন করা; মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো পণ্য বা ওষুধ বিক্রি করা; সেবাগ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্নকারী কার্য করা এবং অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসতর্কতা দিয়ে সেবাগ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য বা জীবনহানি ঘটানো।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমাদের দেশের প্রতিটি খাদ্য উপকরণের মধ্যে ভেজাল মারাত্মকভাবে বিস্তার লাভ করে আছে। তবে তা প্রাকৃিতক নয়, মনুষ্য সৃষ্ট। ভেজাল মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য জনগণের মধ্যে বিতরণ করে জনগণের পুষ্টি বৃদ্ধি রোধ এবং বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। দুর্নীতি পরায়ণ কিছু কর্মকর্তাদের আশকারা পেয়ে এ সমস্ত ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বিতরণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে এক শ্রেণির পুঁজিপতি ব্যবসায়ীগণ। যাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই হচ্ছে অর্থবিত্তের পাহাড় গড়ে তোলা। ক্রমান্বয়ে তাদেরই যোগসাজসে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরির মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থাপনায় অস্থিতিশীল করা সহ নানান ধরনের অসুস্থ বাজার সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
খাদ্যে ভেজাল রোধ করতে দেশের প্রধান খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটকে (বিএসটিআই) আরো সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে। ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে দরকার কার্যকর ভূমিকা। ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হলে কিছুদিন ভেজালমুক্ত খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যায়, কিন্তু পরে যেই-সেই হয়ে যায়। এর থেকে পরিত্রাণে আমাদের সমাজিকভাবেও নীতি-নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ব্যবসায়ীদের সৎ পন্থা অবলম্বন করতে হবে। নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে সততা, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার আলোকে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। ভেজাল প্রতিরোধে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নৈতিকতাবোধ, উৎপাদক, বিপণনকারী, ভোক্তা সবাইকেই সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রকে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধকোস্টারিকার স্বাধীনতা দিবস