ভেজাল কারবারিদের বিরুদ্ধে ইসলামের নির্দেশনা অত্যন্ত কঠোর

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | শুক্রবার , ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ at ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ

আত্মশুদ্ধির বার্তাই নিয়ে আসে মাহে রমজান। তবে খুবই উদ্বেগের বিষয় যে, এ মাসে সংযম ও সদাচারের কথা বেশ জোরে শোরে নানাভাবে বলা হলেও এই মাসেই বেশি দেখা যায় অনিয়ম, অসংযম ও অমিতাচার। ব্যবসার নামে নানামুখী প্রতারণা, পণ্যে ভেজাল দেওয়া, অধিক দাম নেয়ার জন্য পণ্য মজুদদারি, পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করে ভোক্তারোজাদারদের সীমাহীন দুর্ভোগে ঠেলে দেয় এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী। খাদ্যপণ্য ভেজাল করা, ব্যবসায় অসততা ও পণ্যের অযৌক্তিক দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ইসলামী নির্দেশনা অত্যন্ত কঠোর ও বাস্তবসম্মত। মহানবী () বলেছেন, ‘তোমরা ভাল পণ্য দেখিয়ে নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করো না’। পণ্যের সঠিক গুণাগুণ তুলে ধরে ভোক্তার ইচ্ছা ও বিবেচনা অনুযায়ী পণ্য বেচাকেনা করার সুস্পষ্ট তাগিদ দিয়েছেন প্রিয়নবী (.)। এ নির্দেশনা লঙ্ঘিত হলে ব্যবসায়ীদের দুনিয়াআখেরাতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে মহানবী () দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন। পণ্যের সঠিক মান ও গুণাগুণ নিশ্চিত করার যে তাগিদ দেয়া হয়েছে তাই মূলত পণ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড একটি আঘাত। সঠিক গুণমান দেখে কেনা ও পণ্যের ভালমন্দ ক্রেতাকে জানানোই ইসলামের ব্যবসানীতির অপরিহার্য একটি দিক।

পণ্য উৎপাদনকারী ও ভোক্তারা এদিকে দৃষ্টি দিলে ভেজালপণ্যের বেচাকেনা সহজেই বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে ওজনে কম দেয়া, পরিমাপে হেরফের করাও মারাত্মক অপরাধ। কোরআন মজিদে আল্লাহ পাক বলেন, ওয়ালা তুখছিরুল মীযান– ‘তোমরা ওজনে কম দিও না’। হাদিস শরিফে মহানবী (.) এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের হক বা অধিকারের যে নির্দেশনা পেশ করেছেন তার মধ্যে একটি হচ্ছে নিজের জন্য যা ভাল ও কল্যাণকর মনে করা হয়, অন্যের জন্যও অনুরূপ ভাল ও কল্যাণ প্রত্যাশা করা। দুর্ভাগ্য যে, হাদিসের এই নির্দেশনা অনেকেই মানেন না। ফলে এই শ্রেণীর লোকেরা একদিকে নিজে অন্যকে ঠকাচ্ছেন, অন্যদিকে তিনিও অন্যের দ্বারা ঠকছেন, প্রতারিত হচ্ছেন। অথচ সব ব্যবসায়ী, সব মানুষ যদি লোভ, অতি মুনাফাকে ঘৃণা করেন তবে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া ছুটবে না। কেউ অশান্তি হা হুতাশে থাকবে না। প্রতারণা, ভেজালের দৌরাত্ম্য নিমিষেই কমে আসবে। আগে সৎ হতে হবে নিজেকে।

তাঁর দেখাদেখি অন্যরাও বদলে যাবে, বদলে যাবে ব্যবসার নামে দস্যুবৃত্তি। স্বস্তি খুঁজে পাবেন সবাই। পণ্যে ভেজাল মেশানো ইসলামের দৃষ্টিতে কঠোর অপরাধ। একজন ভেজালকারী খাদ্যেপণ্যে ভেজাল মিশিয়ে সমগ্র মানবতাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তাই এই দুষ্কৃতকারীদের কারাদণ্ডসহ সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়াই ইসলামের নির্দেশনা। তবে এই পবিত্র রমজানে সরকারের পক্ষ থেকে একটি সুখবর মিলেছে। সরকার খাদ্য পণ্যে ভেজাল ও মজুদদারি ঠেকাতে কড়া আইন করতে যাচ্ছে। আমরা আশা করবো, শুধু আইন প্রণয়ন নয়, আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। মাহে রমজানে আসুন, আমরা আত্মসমীক্ষা ও আত্মজিজ্ঞাসার মাধ্যমে চিন্তায়কর্মে ভেতর থেকে বদলে যাওয়ার সুকঠিন সংকল্পবদ্ধ হই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিএমপির ১১ দফা নির্দেশনা
পরবর্তী নিবন্ধপ্রাণের উৎসবে জেগে ওঠার দিন