ভূমিকম্পে বেঁচে গিয়েও শীত আর ক্ষুধার জ্বালায় মৃত্যুমুখে মানুষ

মৃত্যু ছাড়াল ১১,০০০ উদ্ধারকাজে ধীরগতি, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

| বৃহস্পতিবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ

তুরস্কসিরিয়ায় ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আহতের সংখ্যা ৩৫ হাজারেরও বেশি। তুর্কি কর্মকর্তারা বলছেন, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত করা ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে ৮ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। সিরিয়ায় উত্তরাঞ্চলে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি।

ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা থেকে বেঁচে গিয়েও নতুন উপদ্রবের মুখে সে দেশে মানুষ। কোথাও তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে ৩ ডিগ্রিতে, কোথাও হিমাঙ্কের নীচে। তার সঙ্গে চলছে তুষারপাত আর বৃষ্টি। ফলে ভূমিকম্পের হাত থেকে বেঁচে গিয়েও স্বস্তিতে নেই তুরস্কের মানুষ। হাড় জমানো ঠান্ডায় মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও জুটছে না। ফলে বাধ্য হয়েই খোলা আকাশের নীচে কাটাতে হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ সকলকে।

উদ্ধারকাজও ব্যাহত হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, চরম ঠান্ডায় খোলা আকাশের নীচে যারা দিন কাটাচ্ছেন, হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এতে শরীরের তাপমাত্রা কমে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তুরস্ক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়, বহু এলাকায় রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরা পৌঁছতে পারছেন না। ভূমিকম্পের ৪৮ ঘণ্টা পরেও অনেক দুর্গত এলাকায় কোনো ত্রাণসাহায্য পৌঁছায়নি।

ফলে এলাকায় এলাকায় ক্ষোভ বাড়ছে। বিধ্বস্ত শহরগুলোর বাসিন্দারা বলছেন, দুর্গত লোকজনের কাছে পৌঁছানোর জন্য সরকারের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

এরকম ক্ষুব্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকা পরিদর্শনে গেছেন। কাহরামানমারাস শহরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি স্বীকার করেছেন, দুর্যোগ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে কিছু সমস্যা ছিল। তিনি বলছেন, উদ্ধারকাজ এখন স্বাভাবিকভাবেই চলছে। শুরুতে বিমানবন্দর এবং সড়কে কিছু সমস্যা ছিল। কিন্তু আজ পরিস্থিতি অনেক সহজ হয়ে এসেছে।

আগামীকাল আরো সহজ হবে। আমাদের কাছে যা কিছু আছে তার সবই আমরা কাজে লাগিয়েছি। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। রাষ্ট্র তার কাজ করে যাচ্ছে। ভূমিকম্পে বেঁচে ফেরা নাগরিকদের জন্য অস্থায়ী শিবিরের আয়োজন করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

এদিকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের বিরুদ্ধে তীব্র রাজনৈতিক ক্ষোভও তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এরকম দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য তুর্কী সরকারের কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছিলো না। তুরস্কের প্রধান বিরোধী দলের নেতা কেমাল কিলিচাদারুগলু বলছেন, এজন্য যদি একজনকেও দায়ী করতে হয়, তাহলে তিনি এরদোয়ান।

সিরিয়ার পরিস্থিতি : সিরিয়ায় কর্তৃপক্ষ বলছে ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৬০। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা বলছে, সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ১ হাজার ২৬২ জন মারা গেছে। সরকারবিরোধীরা উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় যেসব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে সেখানে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে হোয়াইট হেলমেটস নামের একটি সংগঠন।

তারা বলছে, এসব অঞ্চলে ভূমিকম্পে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। হোয়াইট হেলমেটস সতর্ক করে দিয়েছে, এখনও শত শত পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। তার ফলে নিহতের সংখ্যা যে আরো বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

গত সোমবারের ওই ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প তুরস্ক ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল ধসিয়ে দিয়েছে, হাজার হাজার মানুষকে আহত করেছে, অগণিত মানুষ পরিণত হয়েছে উদ্বাস্তুতে। প্রথম ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টা পর কাছাকাছি মাত্রার শক্তিশালী আরেকটি কম্পনও দেশদুটিকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, বাজে আবহাওয়া, সম্পদ ও ভারী যন্ত্রপাতির স্বল্পতার কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছানো ও সেখানে উদ্ধারকাজ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে উদ্ধারকর্মীদের। কোনো কোনো এলাকায় জ্বালানি ও বিদ্যুৎও নেই।

আমেরিকা, চীন এবং উপসাগরীয় দেশগুলো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ৭০টি দেশ ত্রাণ এবং উদ্ধারকারী দল পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তুরস্ককে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য ৪৬ সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে সেখানে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ হোটেল আগ্রাবাদে নবম সেপ ভারতীয় শিক্ষা মেলা শুরু
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ার হত্যা মামলার আসামি ঢাকায় গ্রেপ্তার