ভুল বোঝাবুঝি

জুয়েল আশরাফ | বুধবার , ১ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

ভয়ংকর রেগে আছেন শরিফ ডাক্তার। কম্পাউন্ডার ছেলেটার আজকেও দেরি। কাল পইপই করে বলে দিয়েছেন, টাইম মতো আসতে না পারলে ডিসপেনসারিতে আসার দরকার নাই। ছেলেটা সুবোধ বালকের মতো মাথা নেড়ে সায় দিয়েছে। দরকারটা যে আসলে শরিফ ডাক্তারেরই। এই বাজারে জিনিসপত্রের মূল্য ঊর্ধ্বগতির সংকটে হাত সাফাইয়ের খরচে একটি ছেলে পেয়েছেন এতেই তিনি ধন্য। নিজের বাহবা স্বভাবকে চাপা দেওয়া তার আজন্ম স্বভাব।

আগামীকাল শরিফ ডাক্তারের কথামতো কম্পাউন্ডার ছেলেটি ঠিক সময় মোতাবেক চলে এলো। ডিসপেনসারিতে প্রায় লোকজনের আনাগোনা। আবার শরিফ ডাক্তারের পরিচিত লোকের অভাব নেই। তার সকল কাজ কম্পাউন্ডার ছেলেটি নিজ মনেই করে দেয়। খাবারদাবার নিয়া আসা থেকে শুরু করে ছোটখাটো সকল কাজে তাকে সাহায্য করে। কিন্তু শরিফ ডাক্তার তাকে চাপে রাখার জন্য প্রতিদিন কিছু না কিছুর ভয় ভীতি দিয়ে থাকে। এটি তার প্রতিদিনের কারসাজি নিত্য নতুন বিষয় নয়। ছেলেটি খুব শান্ত আর সততাবান। শরিফ ডাক্তার খবুই ভালো করেই জানেন আজকালকার দিনে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। শরিফ ডাক্তারের একটাই সমস্যা, কোনো গুণী লোকের কাজের কদর করেন না বরং কাজ সঠিক হলেও তার কাছে গোপন রাখেন, প্রকাশ করেন না৷ ছেলেটিকে সত্য জানতে দেন না।

একদিন কম্পাউন্ডার ছেলেটির মায়ের ভীষণ অসুখ হয়। ছেলেটি শরিফ ডাক্তারের পরমর্শ নিয়ে ডিসপেনসারি থেকে ঔষধ নিয়ে চলে যায়। দিন যত বাড়তে থাকে তার সাথে তার মায়ের অসুস্থতাও বেড়ে যায়। ছেলেটি পাঁচ দিন ডিসপেনসারিতে যেতে পারেনি। শরিফ ডাক্তারের মাথায় আগুন। মায়ের অসুস্থতা একটু কমে যাওয়াতে ছেলেটি পরের দিন শরিফ ডাক্তারের সাথে দেখা করে। শরীফ ডাক্তার তার সাথে খবুই বাজে ব্যাবহার করলেন। অনেক কথা শুনালেন। রাগান্বিত কণ্ঠে বললেন, কাল থেকে আমার ডিসপেনসারিতে তোমার আসার প্রয়োজন নেই।

ছেলেটি মাথা নিচু করে স্থান ত্যাগ করল। শরিফ ডাক্তার ছেলেটির উপর রাগ করে ডিসপেনসারিতে অন্য একজন ছেলে নিয়োগ দেন। নতুন ছেলেটির নাম আনিস। সে খুবই দুষ্টু বুদ্ধির। এতবড় দোকান দেখে সে আগে থেকেই নিজের ফাঁদ তৈরি করে রাখল। একদিন শরিফ ডাক্তার জরুরি প্রয়োজনে ঔষধ কিনতে শহরে যান। ডিসপেনসারিতে আনিসকে রেখে গেলেন। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, সকল কিছু সঠিক দামে বিক্রি করতে। আনিস শরিফ ডাক্তারের চলে যাওয়ার পর পরই ডিসপেনসারি সকল নগদ অর্থ লুট করে চলে যায় আর তার প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র সাথে করে নিয়ে যায়। শরিফ ডাক্তারের কানে খবর পৌঁছালে হাউমাউ করে ছুটে আসেন। আসা মাত্র নজর পড়ে তার ক্যাশের দিকে, জমানো সকল অর্থ লুট করে নিয়ে গেছে। এই দৃশ্য দেখে শরিফ ডাক্তার মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে লুটে পড়লেন। সাথে সাথে নিজের ভুল বুজতে পারলেন। যদি সঠিক ছেলেটির প্রতি যত্নশীল হতেন তাহলে তার এমন দিন দেখতে হতো না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনন্দ-ঝুমঝুমি
পরবর্তী নিবন্ধআলাস্কার উইটিয়া অদ্ভুত এক শহর