ভাসানচর থেকে পালানোর সময় সন্দ্বীপে ১৪ রোহিঙ্গা আটক

টেকনাফ প্রতিনিধি | সোমবার , ৩১ মে, ২০২১ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

ভাসানচর থেকে সন্দ্বীপ পালিয়ে আসার সময় ১৪ রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করেছে স্থানীয় জনগণ। মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের চৌধুরী বাজার ১নং ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন নদীর কূল থেকে গতকাল রোববার ভোর সাড়ে চারটায় তাদের আটক করা হয়। আটক রোহিঙ্গারা দালালের মাধ্যমে শনিবার সন্ধ্যায় ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে নৌকা দিয়ে সন্দ্বীপ উপকূলে আসে। তারা সন্দ্বীপ হয়ে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য ভাসানচর থেকে পালিয়ে যায়। আটক রোহিঙ্গাদের ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান গ্রাম পুলিশের হেফাজতে রেখে পরে পুলিশে তুলে দেন। তারা হল- আয়াতুল করিম (৩০), আশ্রাফ উল্লা (৮), নজিম উল্ল্যাহ (৭), ইয়াসমিন আরা (২৯), সালেখা বেগম (১৪), তাছলিমা (১৬), উম্মে (১৭), মুশফিকা (১৬), মো. সাফায়েত (১৬), অলি উল্লা (১২), মো. আনস (১০), রোজিনা (১৫), শুকতারা (১৫) ও মো.ইমতিয়াজ (১৮)। এর আগে গত ১৮ মে আরো ১১ জন রোহিঙ্গাকে স্থানীয়রা ধরে সন্দ্বীপ থানায় হস্তান্তর করেছিল।
সন্দ্বীপ থানার ওসি বশির আহাম্মদ খান বলেন, মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের নদীর কূল থেকে আটক রোহিঙ্গাদের থানায় আনা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত চার দফায় ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা ২৯ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত থেকে তাদেরকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাসে প্রায় ১৮ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা ভাসানচর যায় সরকারি ব্যবস্থাপনায়। কঙবাজারে ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশ থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে এক লাখ লোকের বসবাস যোগ্য আবাসস্থল তৈরি করা হয় ভাসান চরে। এর জন্য প্রায় দুই হাজার কোটির অধিক টাকা খরচ করে সরকার। কিন্ত সামপ্রতিক সময়ে কয়েক দফায় প্রশাসনের অগোচরে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছে বেশ কিছু পরিবার।
এদিকে এর আগে ভাসানচর থেকে পালানোর ২১ দিনের মাথায় ২৯ মে দুই পরিবারের ১০ রোহিঙ্গা সদস্যকে শনাক্ত ও আটক করতে সক্ষম হয় কঙবাজার ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যরা। উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন গত শনিবার বিকেলে মধুরছড়া এলাকা থেকে তাঁদের আটক করে ট্রানজিট ক্যাম্পে পাঠান।
এপিবিএন-১৪ এর কমান্ডার (পুলিশ সুপার পদমর্যাদা) নাঈমুল হক জানান, গত ৮ মে নোয়াখালীর এক দালালের মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে ভাসানচর থেকে ট্রলারে করে নোয়াখালীর একটি জায়গায় এসে প্রথমে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গারা। পরে সেখান থেকে তারা গোপনে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মীয়-স্বজনের ঘরে এসে অবস্থান নেয়। ভাসানচরে যাওয়ার আগে তারা কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৩ এর ৯ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা ছিল। তারা ৩ মার্চ ভাসানচরে গিয়েছিল।
কমান্ডার নাঈমুল হক জানান, খবর পেয়ে বিকেলে ক্যাম্পের মাঝিদের সহায়তায় পালিয়ে আসা এনায়েত উল্লাহ ও কেফায়েত উল্লাহকে আটক করা হয়। পরে তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের আটক করে ট্রানজিট ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়। নাঈমুল হক আরও বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক রোহিঙ্গারা জানায়, তারা দালালের মাধ্যমে পালিয়ে এসেছে।’
এ ব্যাপারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ শামসুদ দৌজা বলেন, ‘যারা ভাসানচর থেকে পালিয়ে এসেছে তাদের যেখানেই পাওয়া যাবে, আটক করে ভাসানচরেই পাঠিয়ে দেয়া হবে।’
কঙবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। এখানে কারো কোন ইন্ধন রয়েছে কিনা। এ ছাড়া যে সব নৌকা মাঝি (দালাল) ভাসান চর থেকে এদের নিয়ে আসতে সহায়তা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জ রঞ্জন দে জানান, নৌ বাহিনী ভাসান চরের সার্বিক বিষয় দেখভাল করছে। রোহিঙ্গারা ভাসানচরে ভালোভাবে অবস্থান করছে। দুই একটি পরিবার কৌশলে পালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আরও ৫ মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৮২
পরবর্তী নিবন্ধচলমান বিধিনিষেধ বাড়ল আরও এক সপ্তাহ