অবশেষে ভাসানচর যেতে রাজি হয়েছেন রোহিঙ্গারা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে উখিয়ার অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে অন্তত দুইশ পরিবার ভাসানচরের উদ্দেশে রওয়ানা হবে। জাতিসংঘের নানা টালবাহানার মাঝেও তুলনামূলক উন্নত জীবনের আশায় সরকারের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় তারা ভাসানচরে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয় ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। স্বেচ্ছায় ভাসানচর যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের গতকাল বুধবার রাতে উখিয়া কলেজ মাঠে প্রস্তুতকৃত অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে জড়ো করা হয়েছে। সেখান থেকে আজ বৃহস্পতিবার সড়কপথে তাদেরকে চট্টগ্রাম আনা হবে। চট্টগ্রাম থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার জন্য নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৪টি জাহাজ।
উল্লেখ্য, লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এর প্রেক্ষিতে প্রথম ধাপে ভাসানচর যাওয়ার কথা ৬শ রোহিঙ্গা পরিবারের। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ৩৪টি ক্যাম্প থেকে স্বেচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক এসব রোহিঙ্গা। গতকাল বুধবার উখিয়া কলেজ মাঠে একাধিক কাপড়ের প্যান্ডেল ও বুথ প্রস্তুত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্বশীল প্রশাসনের কেউ মুখ খুলতে না চাইলেও রোহিঙ্গাদের ভাসানচর নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের উখিয়া থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবহন ব্যবস্থা এবং ভাসানচরে সরবরাহের জন্য ৬৬ টন খাদ্য মজুদ করা হয়েছে। সূত্র মতে, প্রথম দুই মাস তাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হবে। এরপর নিজ নিজ বাসস্থানেই তারা রান্না করতে পারবেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় তিন হাজার ১০০ কোটি টাকায় নির্মিত রোহিঙ্গাদের জন্য এই অস্থায়ী আবাসস্থল এখন কর্মমুখর। এর আগে ভাসানচর ঘুরে আসেন ২২টি এনজিওর প্রতিনিধি দল।
সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) এর চেয়ারপার্সন জেসমিন প্রেমা বলেন, সরকারের বিশেষ আশ্রায়ণ প্রকল্পের আওতায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিরাপদ জীবনের কথা চিন্তা করে পরিবেশবান্ধব ভাসানচরে স্থানান্তর একটি বিশাল আয়োজন ও উদ্যোগ। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যা ধারণা করেছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর ও নিরাপদ জায়গা মনে হচ্ছে ভাসানচর। ‘মুক্তি’ এনজিওর মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন কর্মকর্তা ফয়সাল বারী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারে ভূমিধস হয়। সেখানে রোহিঙ্গারা বন উজাড় করছে। এখানে আমার মনে হয় ভাসানচরে থাকা এবং খাওয়ার বিষয়টা খুবই ভালো হবে।’
এ বিষয়ে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছুদ্দুজা বলেন, ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কাউকে জোর করে ভাসানচর নেয়া হচ্ছে না। যারা স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হয়েছেন শুধু তাদের নেয়া হচ্ছে। এর আগে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছিল জাতিসংঘ। তবে শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মহলে স্বস্তি দেখা দিয়েছে।