ভাসমান শহর

রেজাউল করিম | বুধবার , ৭ জুন, ২০২৩ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

খালের পানি সবুজ কি করে হয়? ঘোলাই তো হয় সাধারণত। কিন্তু ইতালির ভেনিসে খালের পানি সবুজ দেখতে পাওয়া যায়। ভেনিস ভাসমান শহর, নীল স্বচ্ছ পানির উপর দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন প্রাচীন প্রাসাদ। প্রাসাদের মাঝে এঁকে বেঁকে বয়ে চলেছে নদী। স্বচ্ছ পানিতে তাকালেই প্রাচীন নান্দনিক শহরের প্রতিবিম্ব ভেসে উঠে। যেন শিল্পীর নিদারুণ কারুকাজে আঁকা এই শহর। শেক্সপিয়ারের নাটক মার্চেন্ট অফ ভেনিসের সেই বিখ্যাত শহর অথবা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও জনি ডেপের বিখ্যাত দ্যা টুরিস্ট সিনেমার সেই শহর, ইতালির ভেনিস নগরী। নৌপথের সৌন্দর্যের জন্যও বিখ্যাত।

জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষার জন্য এখানে প্রবাসীরা বসতি গড়ে তোলে। পরে লোকসংখ্যা বাড়তে থাকে এবং পানির উপরে উঠে এই শহরে। ভেনিসে গাড়ি চালানোর রাস্তা নেই, বরং পুরো শহর জুড়ে গাছের শিকড়ের মত খাল, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হলে উপায় একমাত্র ছোট ডিঙি নৌকা। ভেনিসে বসবাস করা প্রতিটি পরিবারের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা হল এই নৌকা। বাড়ির সাথে বাঁধানো থাকে তাদের নিজস্ব নৌকা।

ভেনিসের জলযানের একটি আকর্ষণীয় রোমান্টিক জলযান হলো গান্ডোলা। আর এই ঐতিহ্যবাহী গান্ডোলা সকল পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। ভেনিস ব্যাপকভাবে পরিচিত তার নৌপথের সৌন্দর্যের জন্য। গ্রীষ্মে এসব খালের পানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছিল। এবার দেখা গেলো ভেনিসের গ্র্যান্ড ক্যানালের পানি সবুজ হয়ে গেছে। কীভাবে এমন হল? কী মিশল পানিতে? এ নিয়ে আলোচনা চলছে।

পানির এমন অবস্থা দেখে মন খারাপ পর্যটকদেরও। এমন সুন্দর টলটলে পানি কীভাবে সবুজ হয়ে গেল তা বুঝতেই পারছেন না কেউ। ভেনিসে গান্ডোলা চড়ার সবচেয়ে নামী জায়গার নাম ‘সেন্ট মার্কস স্কোয়ার’। সেখানেও পানির রঙ সবুজ।

এজন্য পর্যটকদের মন খারাপ। পানির রঙ সবুজ দেখে। পরে জানা গেল, পরিবেশবাদীরা এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে। এর আগে ১৯৬৮ সালে গ্র্যান্ড ক্যানেলের পানির রঙ বদলে দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার এক চিত্রশিল্পী নিকোলাস গার্সিয়া। তিনি খালের পানিতে সবুজ রঙ মিশিয়ে পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিয়েছিলেন। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে পালিত হলো আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবস। একে সামনে রেখে অভিনব প্রতিবাদ।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে বিশ্বজুড়ে। কখনও অতিবৃষ্টি, কখনও খরার টানে মাটি ফেটে যাচ্ছে। নদীনালায় কমছে পানি। পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে আর সেই সঙ্গেই প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে অদ্ভুতভাবে। এর আগে খরার কারণে ভেনিসের খালে পানি বিপজ্জনকভাবে নেমে গিয়েছিল। পানিপথে যাতায়াত প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল।

বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। চলতি বছর অনাবৃষ্টিতে মাঠ চৌচির। গরমে হাঁসফাঁস করছে সবাই। কাপ্তাই লেকের পানির স্তর অনেক নীচে নেমে এসেছে।

কিন্তু আমরা অনেকটা নির্বিকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোদের দুপুর
পরবর্তী নিবন্ধআকবরশাহে ৩শ লিটার মদসহ দুই নারী গ্রেপ্তার