ভাষা প্রতিদিনের চর্চার বিষয়

হামিমা জামিল রুমা | মঙ্গলবার , ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা! ফেব্রুয়ারি মাস ভাষার মাস। এই ভাষা হলো সেই ভাষা, যে ভাষায় আমরা মা ডাকি, যে ভাষায় আমরা কথা বলি, যে ভাষায় আমরা মনের ভাব আদান প্রদান করি। এই ভাষা কারা আমাদের দিয়েছে? কারা এই ভাষার জন্য সেদিন প্রাণ দিয়েছে? কাদের রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে পেয়েছি? আমরা কি জানি সেই ইতিহাসের প্রেক্ষাপট? বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পুরো তাৎপর্য কি আমরা জানি? কিন্তু আমাদেরকে জানতে হবে। পড়ে জানতে হবে, শুনে জানতে হবে, নিজে ভালোভাবে জেনে তারপর সবাইকে জানাতে হবে এটা আমাদের দায়িত্ব। এই ভাষা এমনি এমনি আসেনি, তরতাজা রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই আমাদের বাংলা ভাষা, আমাদের মাতৃভাষা। পুরো পৃথিবীতে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য নিজেদের প্রাণ দিয়ে দিয়েছেন। সেদিন তাদেরই প্রাণের বিনিময়ে এসেছে এই ভাষা। সেই ভাষা শহীদদের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।

আমরা কেনো প্রতিদিন ভাষা দিবস বলি না? আমরা কেনো শুধু ফেব্রুয়ারিতেই ভাষার চর্চা করি? সারা বছর কেনো আমরা এটার অনুশীলন করি না? আমরা অভিভাবক হিসেবে সন্তানদের সাথে প্রতিদিন ভাষা নিয়ে কথা বলতে পারি, আমরা শিক্ষক হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের সাথে ভাষা নিয়ে আলোচনা করতে পারি, আমরা বন্ধু হিসেবে বন্ধুত্বের আড্ডায় ভাষার প্রসঙ্গে কথা বলতে পারি, আমরা প্রতিবেশী হিসেবে সবাই মিলে ভাষা নিয়ে কথা বলতে পারি, আত্মীয় স্বজন হিসেবে নিজেরাই ভাষার জন্য কী কী করতে হয়েছে তার আলোচনা করতে পারি, আমরা চাইলেই যখন তখন ভাষা নিয়ে আলোচনা করতে পারি, এতে আমাদের বাংলা ভাষা আরো আরো সমৃদ্ধ হবে, বারোমাস সবার আলোচনায় ভাষার গুণগান থাকবে, আর এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সমৃদ্ধি ঘটবে বাংলা ভাষার।

বাংলা ভাষার সঠিক চর্চা প্রয়োজন আছে। বাংলা ভাষার যে নিজস্ব মায়াটান সেটা নতুন প্রজন্মের কাছে উপলব্ধি করানোর প্রয়োজন আছে। তরুণদের ভাষা চর্চার দিকে উৎসাহিত করা আমি আপনি আমরা সবার নৈতিক দায়িত্ব। আমরা দাঁড়িয়ে ওদেরকে আন্তরিকতা দিয়ে শেখাবো, আজকে অ আ ক খ এর উৎপত্তি কোথায় কিভাবে আর কাদের অবদান এ অক্ষর আসলো, সব বিষয় খোলামেলা আলোচনা করার মাধ্যমে।

যারা লেখালেখিতে আছে তাদেরও দায়িত্ব আছে প্রজন্মের জন্য বাংলাভাষার তথ্যভাণ্ডার দেয়ার, সবাইকে ভাষা শহীদদের নাম ইতিহাস জানানোর, ভাষার জন্য যারা তাজা প্রাণ দিয়েছিলো তাদের শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়। যেখানে থাকবে সালাম রফিক বরকত, থাকবে ইতিহাসের লাল রাজপথ, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই স্লোগান থাকবে, রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি থাকবে, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার রক্তিম ইতিহাস থাকবে, অ আ ক খ থাকবে গর্ব নিয়ে। সেই একটা গল্প কবিতা ছড়ায় থাকবে ভাষা শহীদদের নিহত প্রাণের জয়ধ্বনি, মিছিল থাকবে, স্লোগান থাকবে, আপোষহীনতার কথা থাকবে স্পষ্টভাবে, তাহলেইতো পুরো বিশ্ব জানবে আমার মায়ের ভাষার সঠিক ইতিহাস, জানবে আমাদের বাংলাকে, বাঙালিকে, বাংলাদেশকে। সারা বছর সবার আলোচনায় থাকুক বাংলা ভাষার কথা কাহিনি, বাংলা ভাষার চর্চা ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বজুড়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকিডনি প্রতিস্থাপনের দৃষ্টান্ত
পরবর্তী নিবন্ধবাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম: জাতীয় সংসদে বিল পাস করা হোক