ভাষা আন্দোলনে নারী

ড. সেলিনা আখতার | রবিবার , ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির ইতিহাসে একুশে ফেব্রুয়ারি একটি অবিস্মরণীয় দিন। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ঐতিহাসিক দিন। এদিনের ইতিহাস আমাদের সংগ্রামী চেতনার ইতিহাস। একুশে ফ্রেবু্রয়ারির ভাষা আন্দোলন থেকেই স্বাধীকার তথা স্বাধীনতা আন্দোলন। একুশের পথ ধরেই এসেছে ‘৫৪ এর নির্বাচন, ‘৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ‘৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন, ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ‘৭০ এর নির্বাচন, এবং ‘৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। এসব আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ যার স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত ‘তমুদ্দুন মজলিশ’ এর ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রথম পুস্তিকা। ভাষা আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপদানের লক্ষ্যে ৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে তমুদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে গঠিত হয় প্রথম ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। ১৯৪৭ সালের ৪ ও ৫ ডিসেম্বর করাচিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ব্যবহার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রচার মাধ্যমে উর্দু প্রচলনের সুপারিশ করা হয়। ঢাকায় এই খবর পৌঁছামাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ৬ ডিসেম্বর ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা দলে দলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলতলায় প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বাংলাকেও অধিবেশনের অন্যতম ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯৪৮ সালের ২৬ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালন করে। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ এবং বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতিতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ করা হয়। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ১৯৪৮ সালের ৭ মার্চ ঢাকায় এবং ১১ মার্চ সারাদেশে ধর্মঘট পালিত হয়। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এ কর্মসূচি পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। পিকেটিং করা অবস্থায় গ্রেপ্তার হন তখনকার তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেকেই এবং জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দিনই বঙ্গবন্ধু এই বিক্ষোভে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনালের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় ঘোষণা দেন ‘উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। ২৪ মার্চ কার্জন হলের সমাবর্তনেও তিনি এ কথা বলেন। উপস্থিত ছাত্ররা ‘না না’ ধ্বনিতে তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর আত্মপ্রকাশ করে তমুদ্দুন মজলিস এর ভাষা আন্দোলনের বিপ্লবী মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘সৈনিক’। ১৯৪৮ সালের ১৮ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ঢাকায় এসে আবারও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন; ছাত্ররা প্রতিবাদ করে ওঠে। তাঁর ঢাকায় অবস্থানকালীন ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ এবং কামরুন্নেসা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনে ঢাকা প্রকম্পিত ছিল। ১৯৪৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর করাচিতে অনুষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা এবং আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ১৯৪৯ সালের ৮ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ছাত্রদের উপর পুলিশি নির্যাতন এবং সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের অন্যায় কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে জুলুম প্রতিরোধ দিবস পালন করে। ১৯৫০ সালের ১১ মার্চ ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ।
১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের রাষ্ট্রভাষা উর্দু ঘোষণার প্রতিবাদে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সভা ও ধর্মঘট পালিত হয়। ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বার লাইব্রেরীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সর্বদলীয় সভায় ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের অধিবেশনের দিনে সরাদেশে হরতাল, জনসভা ও বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার ধর্মঘটের ডাকে বিচলিত হয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি অপরাহ্নে ঢাকা শহরে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে জনসভা, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অপরদিকে তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান জেলের ভিতর থেকে ভাষা সৈনিক গাজীউল হকের নিকট এক ঐতিহাসিক চিঠি লেখেন। ওই চিঠিতে তিনি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ছাত্রসমাজকে আহ্বান জানান। সভায় সিদ্ধান্ত হয় দশ জন দশ জন করে মিছিল শুরু করা হবে। ছাত্রদের কয়েকটি দল বের হওয়ার পর সাফিয়া খাতুন এর নেতৃত্বে ছাত্রীদের প্রথম দলটি ১৪৪ ধারা ভাঙতে বেরিয়ে পড়ে। এরপর ছাত্রীদের আরো কয়েকিট দল ১৪৪ ধারা ভাঙার মিছিলে নেমে পড়ে। পুলিশ মিছিল থেকে ছাত্রছাত্রীদেরকে ধরে ট্রাকে তুলে লালবাগ থানায় নিয়ে যেতে থাকে। এতেও মিছিল থামেনা বরং ক্রমশই আরো বড় হতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ মিছিলে আক্রমণ চালিয়ে লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস সহ গুলিবর্ষণ শুরু করে। বেলা ৩-১০ মিনিটির সময় ঘটে যায় নারকীয় ঘটনা। পুলিশ গুলি চালায় মিছিলে। শহীদ হন রফিক, বরকত, জব্বার, সালাম, সালাউদ্দিন এবং আহত হন ৯৬ জনের মত। প্রতিবাদে পরদিন গণবিক্ষোভ শুরু হয়।
১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একুশের প্রথম বার্ষিকী পালন করা হয়। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ সপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৯ তম অধিবেশনে প্রথমবারের মতো বাংলায় ভাষণ প্রদান করেন, যা বিশ্বের সভায় কোনো বাঙালি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের প্রথম বাংলায় ভাষণ। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের ৩০ তম অধিবেশনে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘভুক্ত সকল দেশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তদনুসারে ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর এ দিবসটি ১৮৮ দেশে উদযাপিত হচ্ছে। এভাবে আমাদের ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক স্মরণীয় দিবসে পরিণত হয়। এটা আমাদের দেশ ও জাতির জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয়। জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতির জন্য এ সৌভাগ্য বয়ে আনেন।
ভাষা আন্দোলনে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা বিশেষ করে ছাত্রীরা রাজপথে নেমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এর পূর্বে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে এরকম ব্যাপকভাবে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দৃষ্টিগোচর হয়নি। এ দেশের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে এটি ছিল নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের সামাজিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, তৎকালীন রক্ষণশীল সামাজিক পটভূমিতে ভাষা আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর লেখনি প্রচেষ্টার মাধ্যমে শুরু হয় নারীদের আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ। তৎকালীন সময়ে মহিলাদের মুখপাত্র বেগম পত্রিকায় বিভিন্ন প্রবন্ধ, চিঠিপত্র, সম্পাদকীয় প্রভৃতির মাধ্যমে ভাষার প্রশ্নে তাদের মনোভাব ফুটিয়ে তুলে। মোহসেনা ইসলাম ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ শিরোনামের এক প্রবন্ধে বাংলাভাষাকে সমর্থন করে বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদরে সাধারণ ভাষা হচ্ছে বাংলা। বাংলা ভাষা পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের প্রাণের ভাষা, যে ভাষায় মুসলমানেরা বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে তাদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আর আনন্দ বেদনা সাহিত্যের মাধ্যমে প্রকাশ করে আসছে। বেগম আফসারুন্নেসা বি.এ. ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ শিরোনামের এক প্রবন্ধে রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে সমর্থন করেন। নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের মহিলা সংগঠন সম্পাদিকা মিসেস রুকিয়া আনোয়ার একটি বিবৃতি প্রদান করে বলেন ‘… পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা ভাষাকে অস্বীকার করায় সমগ্র পূর্ববঙ্গ ব্যথিত হইয়াছে। পাকিস্তানের সমগ্র জনসংখ্যার শতকরা ৬১ জন বাংলা ভাষাভাষী এবং ইহা প্রায় সাড়ে চার কোটি লোকের মাতৃভাষা। সংখ্যাগুরুর মাতৃভাষার পরিবর্তে বিদেশি ভাষা চালাইয়া দিয়া সংখ্যাগুরুর প্রতি যে অত্যাচার করা হইল ইতিহাসে ইহার নজির নাই’।
দেশবিভাগের পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিশিষ্টজনেরা স্মারকলিপির মাধ্যমে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানায়। এসব স্মারকলিপিতে পূর্ব বাংলার বিশিষ্ট নারীবৃন্দ স্বাক্ষর করেন। স্মারকলিপি প্রদানকারী নারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আনোয়ারা খাতুন, লীলা রায়, রুকিয়া আনোয়ার প্রমুখ। এসময় ঢাকাতে শুধু নয় অন্যান্য বিভাগীয় শহরের আন্দোলনেও নারীরা অংশগ্রহণ করে। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনে নারীগণ বিশেষ করে ছাত্রীরা ব্যাপক হারে অংশগ্রহণ করে। ১১ মার্চের সাধারণ ধর্মঘটকে সফল কারার জন্য বিভিন্ন সভা-সমাবেশ-মিটিং-মিছিলে নারীরা সক্রিয় ভুমিকা পালন করে। এ প্রসঙ্গে ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী বেগজাদী মাহমুদা নাসির বলেন, “প্রথম দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের জায়গা ছিল প্রধান গেট। মেইন গেটে যারা সেদিন ছিল তাদের মধ্যে অনেকেই আজ বেঁচে নেই,… মমতাজ বেগম (অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল), ইকনমিক্সে অনার্স পড়তো মালেকা, তারপরে ছিল সুলতানা রাজিয়া (অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম সাহেবের স্ত্রী)। আরো কয়েকজন যারা স্মৃতিতে বেঁচে আছেন তাদের মধ্যে অনার্সের ছাত্রী আফরোজা। এদিকে আমরা তিনজন-আমি, লিলি খান (ব্যক্তিগত জীবনে তিনি পাইলট শওকত খানের স্ত্রী ছিলেন), খালেদা খানম (ইডেন কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক) হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জাস্টিস এলিসের এজলাসে গিয়ে উপস্থিত। চলতি কোর্টে ঢুকে আমরা আমাদের উদ্দেশ্যটা বললাম: ‘হাই কোর্ট বন্ধ রাখতে হবে।”
ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। সবচেয়ে বড় ঝুঁকিটা নিয়েছিলেন আমাদের নারীরা। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের অবস্থার উপর আলোকপাত করতে গিয়ে ভাষা সৈনিক রওশন আরা বাচ্চু লিখেছেন, ’তখনকার সময়ে ছেলেদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল। প্রক্টরের মাধ্যমে কথা বলতে হতো। নতুবা ১০ টাকা জরিমানার সম্ভাবনা ছিল। শিক্ষক ক্লাসে যাওযার সময় ছাত্রীদের কমন রুম থেকে ডেকে নিয়ে যেতেন। ছাত্রীরা মাথায় কাপড় দিয়ে অনেকে বোরকা পরে ক্লাস করতো। ক্লাসে মেয়েরা সামনের সারিতে বসতো’। এ অবস্থায় ভাষার দাবিতে গড়ে ওঠা সংগঠনে অনেক ছাত্রী গোপনে, কেউ কেউ প্রকাশ্যে ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দেন। ১৯৪৭-১৯৫১ মাত্র চার বছরের ব্যবধানে ভাষা আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা ৮০-৮৫ জন এবং ছাত্রীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ভাষা আন্দোলনে গৌরবময় ভূমিকা রেখে গেছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি সর্বাত্মক হরতালকে সফল কারার জন্য দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলে ব্যাপক প্রস্তুতি। এ প্রস্তুতিতে মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করার মতো। বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা সভা সমাবেশে উপস্থিত থেকে পোস্টার, ফেস্টুন লিখে এবং বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনে প্রাণের সঞ্চার করেন। ভাষা আন্দোলনের তৎপরতাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘পতাকা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। এ সময় ৫০০ পোস্টার লেখার দায়িত্ব দেওয়া হয় নাদিরা বেগম এবং সাফিয়া খাতুনকে। তারা আবাসিক ও অন্যান্য ছাত্রীদেরকে সঙ্গে নিয়ে সে দায়িত্ব পালন করে। (চলবে)

লেখক : প্রফেসর, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সভাপতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে
পরবর্তী নিবন্ধযুক্তিই হলো বিতর্কের ভিত্তি