ভাষার শুদ্ধতা রক্ষাই হোক একুশের মূল চেতনা

সুব্রত কুমার নাথ | রবিবার , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ

মহান একুশ। আমাদের জাতীয় জীবনের একটি তাৎপর্যময় দিন। একুশ কেবল একটি আক্ষরিক শব্দ নয়, একটি গভীর অনুভূতির নাম। বায়ান্নের কৃষ্ণচূড়া ফাগুনে সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত সহ অনেক শহীদের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো জাতি নেই, মায়ের ভাষার জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল। তাই একুশ আমাদের প্রেরণা ও শক্তি। একুশের চেতনায় বীর বাঙালি যে কোনো অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়ার শক্তি খুঁজে পায়। একুশকে বুকে লালন করে আমরা প্রতিটি কাজে উজ্জীবিত হই। তাই একুশ আমাদের অহংকার। একুশের অহংকার ধারণ করেই আমরা মা, মাটি ও মায়ের ভাষা রক্ষায় সোচ্চার হই। বর্তমানে পৃথিবীতে ২৮ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি মানুষের মুখের ভাষা বাংলা। মাতৃভাষা হিসেবে বিশ্বে বাংলা পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে এবং বিশ্বের ১৮৮টি দেশ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। এটা বাঙালির জন্য অত্যন্ত গৌরবের। আমাদের হৃদয়ের ভালোবাসায় ও বোধে গৌরবের এই একুশকে সর্বদা সমুন্নত রাখতে হবে। তবে একথা সত্যি যে, আমাদের দেশের এক শ্রেণির তরুণতরুণী বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। তাদের আচরণে প্রকাশ পেতে থাকে অপসংস্কৃতি ও বাংলা ভাষা অপপ্রয়োগের কুরুচিপূর্ণ মনোভাব। অনেকে হিন্দি ও ইংরেজি গান সহ কথায় কথায় বিদেশিয়ানা সংস্কৃতির সাথে এত বেশি মিশে গেছে যে, তারা আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে ভুলতে বসেছে। বাঙালি হয়ে বাংলা ভাষার প্রতি অনীহা ও অমনোযোগিতা এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জার। শুধু ভাষার মাসেই আমরা বাংলা ভাষা চর্চায় তৎপর হয়ে ওঠি। গানের রিং টোন থেকে শুরু করে টিশার্টে, শাড়িতে, পাঞ্জাবিতে, গয়নায় সব জায়গায় একুশের মহিমা দেখতে পাই। ভাষার মাসেই বক্তৃতা, গান, সেমিনার সহ বিভিন্ন আয়োজনে বাংলা ভাষার ব্যবহার দেখি। ভাষার মাস পার হলেই বাংলা আমাদের মাতৃভাষা একথা ভুলে যাই। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ হয়ে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বাংলায় শুদ্ধ উচ্চারণ, বাংলা ভাষা ও শব্দের শুদ্ধ প্রয়োগ এবং শুদ্ধ বানানের ব্যবহার নিশ্চিত করা অপরিহার্য । কিন্তু আমরা এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি না। এই অনুভবহীনতাই আমাদের বোধে নাড়া দেয় অস্তিত্বের। ভুলতে বসেছি বাংলা ভাষার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। সর্বত্র প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহার করে আমাদের গৌরবের ইতিহাসকে সমুন্নত রাখতে হবে। তাই, দেশমাতৃকার সন্তান হিসেবে মহান একুশ ও স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস প্রত্যেকের হৃদয়ে ধারণ করা খুব বেশি প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমার প্রিয় সুবোধ স্যার
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে