ভাষা বড় বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি বিষয়। বর্তমানে পৃথিবীতে ৭,১৬৮টি ভাষা রয়েছে। বিশ্বব্যাপী প্রচলিত ভাষাসমূহ নিয়ে কাজ করে এমন বিখ্যাত একটি ওয়েবসাইট www.ethnologue.com–এর তথ্যমতে, এই ৭,১৬৮টি ভাষার মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি ভাষায় কথা বলে ১ লাখেরও কম মানুষ। ফলে পৃথিবীর অনেক ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে যাওয়ার দরুন দিন দিন বিলুপ্তির পথে এগুচ্ছে। আসুন জেনে নিই ভাষা সংক্রান্ত বিভিন্ন চমকপ্রদ তথ্য।
= আফ্রিকা মহাদেশের ক্যামেরুনের দক্ষিণ বেনটয়েড অঞ্চলে বুসু নামক একটা ভাষা রয়েছে, ১৯৮৬ সালে যার ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৮জন। বর্তমানে পৃথিবীতে মাত্র ৩ জন মানুষ এই ভাষায় কথা বলে।
= মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মিশেলে গড়ে ওঠা এক মিশ্র সংস্কৃতির দেশ হওয়ায় এখানে মোট প্রচলিত ভাষার সংখ্যাও অনেক বেশি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন ৩০০–এর বেশি ভাষার প্রচলন আছে। আরেকটা চমকপ্রদ তথ্য জানাই। সরকারি ভাষা হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো নির্দিষ্ট ভাষা নেই, যার দরুন আইনী এবং দাপ্তরিক অনেক কাজে সরকারি ভাষা বাছাই করতে গিয়ে অনেকে বিড়ম্বনায় পড়েন। ইংরেজি ভাষাভাষীর সংখ্যা বেশি হওয়ার দরুন আমরা ইংরেজিকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ভাষা মনে করি যেটা আসলে সঠিক নয়।
= লিখিত সুনির্দিষ্ট বর্ণমালার অভাবে অনেক ভাষা কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যায়। লিখিত আকারে কোনো পাণ্ডুলিপি বা বর্ণমালার অভাবে হারিয়ে যাওয়া ভাষার সংখ্যা এখন ২৪১টি।
= লেখার শুরুতে যে ৭,১৬৮টি প্রচলিত ভাষার কথা উল্লেখ করেছি তাদের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যা মাত্র ২৩টি ভাষা ব্যবহার করে। আবার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ অন্তত ২টি ভাষায় কথা বলতে পারে।
= পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভাষায় অনুবাদকৃত গ্রন্থ হলো বাইবেল। এটি মোট ৬৮৩টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে আজ অব্দি। আর এইক্ষেত্রে বাইবেলের খন্ডাংশের অনুবাদের হিসাব যদি করি তাহলে এই সংখ্যাটা হবে ৩০০০।
= পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ভাষা সুমেরীয় যা যিশু খ্রিস্টের জন্মের সাড়ে ৩ হাজার বছর আগে থেকে প্রচলিত ছিল। তালিকায় এর পরেই আছে প্রাচীন মিশরীয় ভাষা যা খ্রিস্টের জন্মের ৩ হাজার ৩০০ বছর আগে থেকে মানুষ ব্যবহার করত। প্রাচীন চীনা ভাষার প্রচলন হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ১,২৫০ সালের দিকে।
= পাপুয়া নিউ গিনির রোটোকাস ভাষাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে কম বর্ণমালার ভাষা। রোটোকাস ভাষায় মাত্র ১১টি বর্ণমালা আছে। আর সবচেয়ে বেশি বর্ণমালা আছে কম্বোডিয়ান ভাষায়। ৭৩টি বর্ণমালা সমৃদ্ধ এই ভাষাটিকে পৃথিবীর অন্যতম কঠিন ভাষা হিসেবেও গণ্য করা হয়।
= আগেই উল্লেখ করেছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সরকারি ভাষা নেই। তবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মোট ১১টি সরকারি ভাষা নিবন্ধিত আছে দক্ষিণ আফ্রিকায়।
= দাপ্তরিক কাজকর্মে বেশি ব্যবহার হওয়ার দরুন ইংরেজিকে বলা হয় সবচেয়ে প্রভাবশালী ভাষা। রাজনৈতিক কারণে বা অন্য যেকোনো কারণেই হোক, রুশ ভাষাকে বলা হয় যুদ্ধের ভাষা। কারণ হিসেবে বলা হয় রুশরা প্রায় সময় রেগে থাকে এবং রুক্ষ ভাষায় কথা বলে রাগান্বিত অবস্থায়।
= আরো একটা মজার বিষয় বলি। ইংরেজি ভাষার জনক কিন্তু ইংরেজরা নয়। ইংরেজি ভাষার জন্ম পশ্চিম জার্মানির সমূদ্রতীরবর্তী এংলো অঞ্চলে। ইতালির সরকারি ভাষাও ইতালীয় নয়, ইতালির নিবন্ধিত সরকারি ভাষার নাম হলো ফ্লোরেন্টাইন।
= পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ভাষা চাইনিজ মেন্ডারিন যা খুব ব্যতিক্রমী বর্ণমালা দ্বারা গঠিত। এখানে আসলে যেগুলোকে বর্ণমালা বলা হয়, সেসব হলো চিত্রের মতো। একেকটা চিত্র ভিন্ন ভিন্ন অক্ষরকে বোঝায়। আবার এগুলো লেখার ধরনও ভিন্ন। বেশির ভাগ চীনার মতে, তারা মেন্ডারিন লিখেন না, অঙ্কন করেন। ভাষাটিতে যেহেতু মৌলিক কোনো অক্ষর নেই, তাই এসব চিত্র দ্বারা গঠিত মোট অক্ষরের সংখ্যা ৮ হাজারের বেশি। একটা মেন্ডারিন পত্রিকা পড়তে গেলে আপনাকে এরূপ কমপক্ষে ৩ হাজারটি অক্ষর সম্পর্কে জানতে হবে।
= ইউরোপের বাইরে সবচেয়ে বেশি ইংরেজি ভাষায় কথা বলা হয় আফ্রিকা মহাদেশে। শুধু নাইজেরিয়াতেই ইংরেজি ভাষায় কথা বলে ৯ কোটি মানুষ যা যুক্তরাজ্যের ৬ কোটি ইংরেজি ভাষাভাষীর চাইতেও বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেলে আপনি ভিন্ন ভিন্ন রকমের ইংরেজি ভাষা শুনতে পাবেন। বোস্টনে যে ধরনের ইংরেজি শুনেছেন সেটা ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে অন্যরকম শোনাবে। এরকম প্রায় ২৪ ধরনের ইংরেজি ডায়ালেক্ট আছে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই। আরেকটা বিষয়, ইংরেজি ডিকশনারিতে নাকি প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজারটি নতুন শব্দ যোগ হয়।
= অনেকে মনে করে জাপানী আর চীনা ভাষা প্রায় একই ধরনের কিন্তু এটা মোটেও সত্য নয়। জাপানী ভাষা অনেক সহজে এবং দ্রুত উচ্চারণ করা যায় যেখানে অধিক জটিলতার জন্য চীনা ভাষায় কথা উচ্চারণ করতে সময় লাগে বেশি। সময় কম লাগার বিষয়টা থেকে একটা কথা মনে পড়ে গেল। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট বাক্যটি রয়েছে ইংরেজি ভাষায়। ইংরেজিতে যে GO (যাও) বলা হয়, এটাতে মূল সাবব্জেক্টকে লিখতেও হয় না, উচ্চারণও করতে হয় না এবং বেশিরভাগ ভাষাবিদ এবং সাহিত্যিকদের মতে এটাই ব্যাকরণগতভাবে সঠিক পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট বাক্য।