ভালোবাসা সভ্যতার শ্রেষ্ঠতম আবিষ্কার। ভালোবাসাকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, যে ভালবাসা ব্যাপ্তভাবে আকাশে মুক্ত থাকে, অন্তরের মধ্যে সে দেয় সঙ্গ, যে ভালবাসা বিশেষভাবে প্রতিদিনের সবকিছুতেই যুক্ত হয়ে থাকে, সংসারে সে দেয় অসঙ্গ। আর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়– ভালোবাসা যখন হ্নদয়ে জাগ্রত হয়, তখন সে চায় আধার বা আশ্রয়। এই আধার সর্বক্ষেত্রেই যে উপযুক্ত অথবা সুন্দর হয়– তা নয়। ভালোবাসা আপনি আপন হৃদয়ে রস রচনা করে তার পাত্রকে। ভালোবাসার প্রতিমা রচনায় পাত্রটি খড়- দড়ি -বাঁশ মাত্র। যার উপরে চড়বে মাটি, চড়বে রঙ, চড়বে তুলি, মাখানো হবে ঘাম- তেল, পরানো হবে কেশ- বেশ অলংকার। এর অনেকটা তো নিজের হাতে।
আসল কথা হচ্ছে ভালোবাসার সবচেয়ে সুদৃঢ় ভিত্তি হলো সাম্য। ‘হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে/মন বাড়িয়ে ছুঁই/দুইকে আমি এক করি না/এককে করি দুই/হেমের মাঝে শুই না যবে/প্রেমের মাঝে শুই/তুই কেমন করে যাবি?/পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া/আমাকে তুই পাবি।’ কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায় ভালোবাসার সুগভীর অনুভূতি এমনই। সেই সুদূর বৈষ্ণব পদাবলী থেকে রবীন্দ্র-নজরুল যুগ পেরিয়ে বাংলা কবিতায় প্রেমের শাশ্বত রূপ শতমুখী ফল্গুধারায় প্রবাহিত হলেও হৃদয় দিয়ে হৃদয় ছোঁয়ার তৃষ্ণা অনন্ত বহমান। প্রতীক্ষিতের ছায়া হয়ে থাকা আর তাকে মন দিয়ে ছুঁয়ে যাওয়ার অদম্য বাসনা লালন করার নামই ভালোবাসা।