ভারত থেকে পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল মাস দুয়েকের মধ্যে

প্রাথমিকভাবে বছরে চার লাখ টন ডিজেল আমদানি হবে

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে ভারত থেকে পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল আসবে বাংলাদেশে। দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়াতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি ভারত থেকে তেল আমদানি বাড়ানো এবং পরিবহনে উন্নতি ঘটানোর লক্ষে পাইপ লাইনে তেল পরিবহনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বছরে চার লাখ টন ডিজেল আমদানি করা হবে। এই লক্ষে ‘ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’ নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পাইপ লাইনটির নির্মাণ কাজের প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কৃষিখাত এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক হারে জ্বালানি তেল ব্যবহার হওয়ায় বর্তমানে বছরে প্রায় ষাট লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে পেট্রোল এবং অকটেনসহ কিছু জ্বালানি তেল দেশে উৎপাদিত হয়। গ্যাস ক্ষেত্রের তলানি থেকে এসব তেল উৎপাদন করছে দেশের বেসরকারি রিফাইনারিগুলো। কিন্তু ডিজেল এবং ফার্নেস অয়েলসহ অন্যান্য জ্বালানি তেল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানি এবং তা চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে খালাস করা হয়। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানিকৃত জ্বালানি তেল মাদার ভ্যাসেলে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর পর্যন্ত আনা এবং ওখান থেকে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে খালাস করা বেশ সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। বাংলাদেশের বিদ্যুত খাতের প্রায় পুরোটাই জ্বালানি তেল নির্ভর। তেল আমদানি বা পরিবহনে সমস্যা হলে দেশের বিদ্যুৎ খাতই সংকটে পড়ে।
সূত্র জানায়, ভারত থেকে বছরে চার লাখ টনের মতো জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যে দুদেশের সরকারই বেশ আগ্রহী। দুদেশের সরকারের মধ্যে ১৫ বছরের জন্য স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির আওতায় এই জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ‘নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেডের (এনআরএল) শিলিগুড়িস্থ মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশে তেল আনা হবে। ইতোমধ্যে শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত ‘ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’ নির্মাণ করা হচ্ছে। ১৩১.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইনের ভারতের অংশ মাত্র ৫ কিলোমিটার। বাকি ১২৬.৫ কিলোমিটার অংশ বাংলাদেশের। এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলার ৮২.১৭ কিলোমিটার, নীলফামারী ৯ কিলোমিটার ও দিনাজপুর জেলার ৩৫.৫ কিলোমিটার হয়ে পাইপলাইনটি পার্বতীপুর ডিপোতে সংযুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ অংশের পাইপ লাইন নির্মাণে বিপিসিকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার যোগান দিতে হচ্ছে। পাইপ লাইন নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে এই পাইপ লাইন দিয়ে ভারতের জ্বালানি আসবে বাংলাদেশে। প্রাথমিকভাবে পাইপ লাইন ব্যবহার করে বছরে চার লাখ টন জ্বালানি তেল আনার পরিকল্পনা থাকলেও ক্রমান্বয়ে তা বাড়ানোর সুযোগ থাকবে বলে জানিয়ে সূত্র বলেছে, এই তেল সংরক্ষণের জন্য পার্বতীপুরে নতুন রিসিপ্ট টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এই টার্মিনালে ৪ হাজার ৮শ টন ধারণ ক্ষমতা বিশিষ্ট ৮টি ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ভারত থেকে বাংলাদেশে সীমিত পরিসরে তেল আমদানি হয়। বিশেষ করে ট্যাংকার এবং রেলওয়ে ওয়াগনে তেল আনা হয়। এই প্রক্রিয়ায় শিলিগুড়ি থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত অয়েল ট্যাংকারে জ্বালানি তেল পরিবহন করতে ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। পাইপ লাইনের মাধ্যমে তেল আনা হলে মাত্র দুইদিনে তেল পৌঁছবে। এছাড়া ট্যাংকারে তেল আনার ক্ষেত্রে বহুল আলোচিত সিস্টেম লসের যে ভয়াবহতা তা থেকেও নিস্তার মিলবে। ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানির এই প্রক্রিয়া দেশের উত্তরবঙ্গের কৃষিপ্রধান অঞ্চলে ডিজেল পরিবহন অনেক বেশি সাশ্রয়ী হবে বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, সরকারের এই উদ্যোগ জ্বালানি সেক্টরের পাশাপাশি কৃষি খাতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম আগামী ৭ নভেম্বর
পরবর্তী নিবন্ধপাহাড়তলীর ২ আড়তেই মিলল ২৬১ বস্তা চিনি