ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের শেষ ও মীরসরাইয়ের শুরুর স্থল বড়দারোগার হাটের ওজন স্কেল এখন আবার যানজটের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা কিছুটা কমলেও আবার শুরু হয়েছে পূর্বের অবস্থা। ফলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পণ্য পরিবহন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে বারবার বাধার সম্মুখিন হচ্ছেন তারা।
মীরসরাই কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ আতিকুল ইসলাম লতিফী জানান, প্রায়ই চট্টগ্রাম থেকে মীরসরাই যাতায়াতকালে সন্ধ্যা হলেই বড়দারোগারহাট স্কেলের ভোগান্তি খুবই হৃদয় বিদারক হয়ে আছে এখনো। গত কয়েক বছরে এখানে ট্রাকগুলোর পরিমাপের নামে নানা নিয়ম অনিয়ম এর বিষয়ে আমরা কোন মন্তব্য করবো না তবে এখানে দীীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার লাইনের জন্য ঘন্টা খানেক বেশী সময় বরাদ্ধ না রাখলে সময় মতো কেউ কোন কাজ সারতে পারবে না। এই দুর্গতিতে দূরপাল্লার সকলকে পড়তে হয়।
জনৈক ব্যবসায়ী জানান, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল বসানোর কারণে পণ্য পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দেশের অন্য কোন মহসড়কে ওজন স্কেল নেই। তাই তাদের পণ্য পরিবহন ব্যয়ও বাড়েনি। এ অবস্থায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। দেশের অন্য এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে। চাক্তাই–খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন জানান, আমরা চরম ক্ষতির মধ্যে রয়েছি। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করলে আমাদেরকে স্কেলের কারণে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে। অন্যদিকে পায়রা বা মংলা বন্দর দিয়ে আমদানি করলে ওসব ব্যবসায়ীদের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যেন বর্তমানে এই সংকটময় অবস্থায় বড়
দারোগার হাটের স্কেলের কার্যক্রম স্থগিত করে। এতে দেশের সাধারণ ভোক্তাগণ কিছুটা হলেও উপকৃত হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের পক্ষ থেকেও সম্প্রতি জানানো হয়েছে– ‘ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় দারোগাহাট ও দাউদকান্দি এলাকায় ওজন স্কেলের কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করতে পারছেন না। আগে একেকটি গাড়িতে ১৮–৩০ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করা যেতো। এখন একই পরিমাণ পণ্য পরিবহন করতে হলে দুই থেকে তিনটি গাড়ি ভাড়া করতে হচ্ছে। এতে পরিবহন ব্যয় প্রায় তিনগুণ হয়ে গেছে। ফলে পণ্যের দাম বাড়ছে। ওজন স্কেলের কারণে ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি কেজি ভোগ্যপণ্যের দাম ৫–৬ টাকা বেড়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বাজার হারাতে বসেছেন। কারণ দেশের অন্য কোথাও ওজন স্কেল নেই। তাদের পরিবহন ব্যয়ও বাড়ছে না। তাই তারা অপেক্ষাকৃত কম দামে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে লোকসানের মুখে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ব্যবসা কেন্দ্র চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের ব্যবসা–বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে।
চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে আরও জানা যায়, বিদেশ থেকে আদা, পিঁয়াজ, রসুন, ডালসহ যাবতীয় ভোগ্যপণ্য আসে কন্টেইনারের মাধ্যমে। আর প্রতি কন্টেইনারের ধারণক্ষমতা ২৯ টন। আগে এক কন্টেইনারের পণ্য একটি ট্রাক বা কাভার্ডভ্যানের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে পরিবহন করা যেতো। কিন্তু ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় দারোগার হাটে স্কেল বসানোর পর থেকে প্রতি গাড়িতে ১৩ টনের অধিক পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। ফলে এক কন্টেইনারের পণ্য পরিবহন করতে ৩টি ট্রাকের প্রয়োজন হচ্ছে। সুতরাং একদিকে ভোগ্যপণ্যের খরচ যেমন বেড়ে যাচ্ছে, তেমনি চট্টগ্রাম বন্দরে ট্রাক সংকট তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও অধিক গাড়ির চাপে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর আগে ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের ডাকা কর্মসূচিতে বড় দারোগাহাটের স্কেল অপসারণের দাবিতে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় দারোগারহাট ও দাউদকান্দি এলাকায় গাড়ির ওজন স্কেল স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছিলেন নগরীর চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে কুমিরা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক আব্দুল্লাহ বলেন, এখানে যানজট হলে আমাদেও প্রায় সময় হস্তক্ষেপ করতে হয়। তবে এটি সরকারের একটি ভিন্ন বিভাগ। তাই আমাদের বেশি কিছু করার থাকেনা। তবুও আমরা যানজট হলেই চেষ্টা করি সড়ক সচল রাখার।