বড় একা হয়ে গেলেন খোকন

‘বাবা আগুন, বের হও’ সন্তানদের ডাক পোড়াচ্ছে তাকে

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আশঙ্খাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন সিএনজি টেক্সি চালক রাঙ্গুনিয়ার খোকন বসাক (৪২)। তার ঘরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে একে একে মারা গেছেন মা, বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তান। ছয় সদস্যের সংসারে তিনি ছাড়া এখন আর কেউ বেঁচে নেই। এক অগ্নিকাণ্ডে পরিবারের সবাইকে হারিয়ে একা হয়ে গেলেন খোকন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন খোকন বসাক। তার শরীরেরও অন্তত ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আগুন লাগার সময় ঘুমিয়ে ছিলেন খোকন বসাক। দাদীর সঙ্গে অন্য কক্ষে ঘুমাচ্ছিলেন তার ১২ বছরের ছেলে সৌরভ ও ছয় বছর বয়সী মেয়ে সায়ন্তী। হঠাৎ ‘বাবা আগুন, বের হও …’ তাদের এমন চিৎকারে ঘুম ভাঙে খোকনের। এরপরই ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজছিলেন তিনি। পরে নিজে বের হতে পারলেও বাঁচাতে পারেননি আর কাউকে। সেই থেকে সন্তানদের ডাক পোড়াচ্ছে তাকে। ঘুরে ফিরে কানে বাজছে তাদের কণ্ঠ, ‘বাবা আগুন’।

খোকন চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের মেঝেতে আধশোয়া অবস্থায় আহাজারি করছিলেন এ নিয়ে। আফসোস করছিলেন নিজের দুই শিশু সন্তান, বাবা-মা ও স্ত্রীকে বাঁচাতে না পারায়। কেন তিনি তার দুই ছেলে মেয়েকে নিজে টেনে বের করলেন না। দুই সন্তানের ‘বাবা আগুন’ ডাক যেন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাকে।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, অগ্নিদগ্ধ খোকন হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তিনি শঙ্কামুক্ত নন।

স্থানীয় পারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একতেহার হোসেন বলেন, সিএনজি টেক্সি চালক খোকন বসাকের ঘরে আগুন লেগে গেলে তিনি কোনোরকম প্রাণ নিয়ে আগুনের মধ্য দিয়েই বেরিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তারা মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তান আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিল কেউ আর ঘর থেকে বের হতে পারেনি।

রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মিলকী জানান, খোকন বসাকের ডান হাত ও পিঠ পুড়ে গেছে। তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ফায়ার সার্ভিসের রাঙ্গুনিয়া স্টেশন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সুমন জানান, সেমিপাকা ঘরটির রান্নাঘর থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর বসতঘরের জানালার গ্রিল কেটে আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত পাঁচ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আগুনে খোকন বসাকের টেক্সিটিও ভস্মীভূত হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত শিগগিরই
পরবর্তী নিবন্ধ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই চলে গেলেন