চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত শিগগিরই

সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ, ৩১ জানুয়ারি রিপোর্ট গ্রহণ করতে আসবেন ওবায়দুল কাদের

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

শিগগিরই চট্টগ্রামে মেট্রো রেলের নির্মাণ কাজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। চট্টগ্রামও কোন অংশে পিছিয়ে নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘মেট্রো রেল চট্টগ্রামেও হবে। সম্ভাব্যতা যাচাই বা ফিজিবিলিটি স্টাডিও শেষ। আগামী ৩১ জানুয়ারি ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট গ্রহণ করতে আমি চট্টগ্রামে আসবো। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও থাকবেন।’ গতকাল শুক্রবার বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বন্দর নগরীতে মেট্রো রেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ প্রায় শেষ। ৩১ জানুয়ারি আমি আসব, মেট্রো রেলের ফিজিবিলিটি শেষে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব সেদিন।

মন্ত্রী বলেন, ঢাকায় মেট্রো রেল কতটুকু আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে সেটা আপনারা দেখেছেন। চট্টগ্রামেও মেট্রো রেল হচ্ছে। চট্টগ্রাম আমাদের প্রাণের স্পন্দন, অর্থনীতির স্পন্দন। জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে চট্টগ্রামকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম অনেক বেশি প্রাণ চঞ্চল হবে। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেকে) সভায় ঢাকার পর চট্টগ্রামেও মেট্রো রেল নির্মাণের নির্দেশ দেন। পরে চায়না রেলওয়ে কন্সট্রাকশন কোম্পানি (সিআরসিসি)-১৯ ও ডব্লিউআইইটিসি জেভি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে। সেই কাজ চলার মধ্যেই গত ২৮ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রথম মেট্রো রেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরো একটি স্টেশন ২১ জানুয়ারি চালু করা হবে। আর এই বৈদ্যুতিক বাহন রাজধানীর গণপরিবহনে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। একদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ, অন্যদিকে ইউরোপ, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা। আইএমএফের প্রতিবেদন বলছে- এর ফলে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ দেশ এখন মহামন্দার দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। ইউরোপের মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয় গত ৪০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ তলানিতে, পাকিস্তানের রিজার্ভও সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। আমাদের দেশেও জ্বালানি তেলসহ সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করলে বাংলাদেশের রিজার্ভের অবস্থান এখনও ভালো আছে।

এ সময় আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো উন্নয়শীল দেশের রিজার্ভ এখন ৩৪ বিলিয়ন ডলার। এখনও দেশে পাঁচ মাস আমদানি করার মত রিজার্ভ আছে। দেশের অর্থনীতির চলমান ধারার মধ্যে একটি বলিষ্ঠ আভাস আছে। আগামীতে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এবং জিডিপি আরো বাড়বে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সামনে জাতীয় নির্বাচন। আগামী জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রস্তুতিমূলক সভায় এমপিদের করণীয় সম্পর্কে বলেছেন। আমরা নেত্রীর নির্দেশ পালন করছি এবং করবো। পাশাপাশি বিরোধীদলকে মোকাবেলা করবো।

সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছর এই দেশে গণতন্ত্রই ছিল না। পাকিস্তান ছাড়া আর কোনও দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই। কোথাও তত্ত্বাবধায়কের চর্চা নেই। গণতন্ত্র এতোদিন ধরে চলছে আমাদের দেশে। আমাদের গণতন্ত্র বিকাশমান। এটি বিকাশমান পর্যায়ে আছে এবং এই বিকাশমান গণতন্ত্র ক্রমান্বয়ে ভুলত্রুটি সংশোধন করতে পারবে। বিকাশের ধারায় গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করেছেন। শেখ হাসিনা ছিলেন বলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মতো দুঃসাহসিক কাজটি তিনি করাতে পেরেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। জেল হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; খালেদা জিয়া ও বিএনপি নেতাদের গণভবনে আমন্ত্রণ করেছিলেন। সেখানে যদি তারা (বিএনপি) যেতেন তাহলে গণতন্ত্রের নতুন দুয়ার খুলে যেতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেষ্টা করেছিলেন। গণতন্ত্র এক চাকার নয়।

সেতুমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। তবে এখন ক্রমশ বিপদ কমছে। আমরা সংকট থেকে সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছি। এখন বড় বড় প্রকল্পে অর্থায়ন করা হচ্ছে না। কেননা আগে জনগণকে বাঁচাতে হবে। জনগণ বাঁচলে অর্থনীতি বাঁচবে। আর অর্থনীতি বাঁচলে দেশ বাঁচবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের দুটি অংশ। একটি অংশ স্বাধীনতা, আর অপরটি অর্থনৈতিক মুক্তি। দেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অর্থনৈতিক মুক্তির বড় স্থাপনা পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকে যখন বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, তখন পদ্মাসেতুর স্বপ্ন ছিল হতাশায় ঘেরা। ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুর সাহসী কন্যা সংসদে দাঁড়িয়ে দেশের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। সেই পদ্মাসেতু আজ স্বপ্ন নয়, দৃশ্যমান বাস্তবতা।

১৬ জানুয়ারি বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলের দিন আওয়ামী লীগ সতর্ক পাহারায় থাকবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সেদিন কোনো ধরনের নাশকতা করতে দেওয়া হবে না। এটা কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় আমরা সতর্ক পাহারায় থাকব।

মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, সাংবাদিক আবু সুফিয়ান, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা শফর আলী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো. গিয়াস উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা প্রদীপ দাশ, চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান চৌধুরী, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব, চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, সাতকানিয়ার পৌর মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুল লতিফ টিপু, আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ মাহমুদ, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হবে ছয় লেন
পরবর্তী নিবন্ধবড় একা হয়ে গেলেন খোকন