ব্লেন্ডেড অর্থ হল মিশ্রণ। যে কোন ক্ষেত্রে এক বা একাধিক মিশ্রিত বস্তুর কথা বুঝাতে ব্লেন্ডেড কথাটি ব্যবহৃত হয়। আর শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্লেন্ডেড পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী যখন করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত তখন এই ব্লেন্ডেড পদ্ধতিটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। করোনার আবহে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করা হয়েছে অনলাইনে। ব্লেন্ডেড শিক্ষা হল অনলাইন এবং অফলাইনের সংমিশ্রণ।
আমরা ডিজিটাল ক্লাসরুম বলতে যা বুঝি তার সাথে ব্লেন্ডেড লার্নিং এর সাথে পার্থক্য রয়েছে। এই পদ্ধতির বেসিক টেকনিক পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রত্যেক মানুষের শিখার স্টাইল ভিন্ন, কেউ দেখে শেখে, কেউ শুনে শেখে, কেউ হাতে কলমে না করে শিখতে পারে না, আবার কেউ দলে বা জোড়ার মধ্যে বেশ ভালোভাবে শিখতে পারে। এক কথায় ব্লেন্ডেড লার্নিং সকল মানুষকে স্বাধীনভাবে শিখতে সহায়তা করে। ব্লেন্ডেড লার্নিং এর চিন্তাটা শুরু হয় ১৯৬০ সালে। টেকনোলজির সাহায্যে লেখাপড়াকে সহজ করে তোলা ছিল এর উদ্দেশ্য। প্রশিক্ষক হিসেবে থাকবে মেইনফ্রেম ও মিনি কম্পিউটার। এরা একাই অনেক শিক্ষার্থীকে শেখাতে পারে। কিন্তু প্রথমদিকে এই শিক্ষা ছিল ব্যয়বহুল। শিক্ষায় টেকনোলজির সাহায্য নেওয়ার জন্য আরও টুকিটাকি গবেষণা চলতে থাকে। ব্লেন্ডেড লার্নিং প্রথমবার চালু হয় ১৯৯০ সালে। আটলান্টার একটি এডুকেশনাল কোম্পানি, তাদের ‘ইন্টার একটিভ’ লার্নিং সেন্টারের প্রেস রিলিজে প্রথমবার ‘ইপিআইসি লার্নিং’ নামে এর ঘোষণা করে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত দিন যতই এগিয়ে যাচ্ছে ততই বিশ্ব জুড়ে আরো বেশি করে জনপ্রিয় হয়েছে ব্লেন্ডেড লার্নিং। কোভিড-১৯ এর মতো মহামারির সময়ে প্রাথমিক সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। কিন্তু সরকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সাথে যুক্ত রাখতে বিটিভি, সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন, ফেসবুক ফেইজ ‘ঘরে বসে শিখি’ ও বিভিন অ্যাপস যেমন গুগল মিট, জুম, গুগল ক্লাসরুমের মাধ্যমে শিক্ষকদের সহায়তায় পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। আমরা প্রাথমিক শিক্ষকরাও এর অংশীদার ছিলাম। শিক্ষকরা ব্যক্তিগত উদ্যোগেও বিভিন্ন অনলাইন পেইজ যেমন বাংলাদেশ অনলাইন প্রাইমারি স্কুল, বাংলাদেশ আলোকিত প্রাথমিক শিক্ষক, কক্সবাজার ডিস্ট্রিক অনলাইন প্রাইমারি স্কুল ছাড়াও স্থানীয়ভাবে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় পুনরায় ফেস টু ফেস পাঠদান কার্যক্রম চালু হয়েছে। ফেস টু ফেস কার্যক্রমকে আরও ফলপ্রসূ করার জন্য স্মার্ট বোর্ড চালু করেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু যেহেতু কম বয়সী হয় সেহেতু এই ব্লেন্ডেড বা মিশ্র শিখন পদ্ধতি খুবই ফলপ্রসূ হবে বলে আমি মনে করি। বৈশ্বিক যুগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ব্লেন্ডেড লার্নিং পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুদের শিখনকে সহজ করে দিচ্ছে। তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষণ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে হবে।