ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সচেষ্ট থাকতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) যৌথ জরিপে যে তথ্যটা আমরা পেলাম, সেটা হলো : দুর্নীতির কারণে ব্যবসাবাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতি হচ্ছে না। ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে চ্যালেঞ্জ, আমলাতন্ত্র ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি ব্যবসার পথে বাধার সৃষ্টি করেছে। এ কারণে ২০২১২২ অর্থবছরে ব্যবসার পরিবেশের কোনো উন্নতি হয়নি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের ৭৪ জন জ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ীর মতামতের ভিত্তিতে এ জরিপ পরিচালিত হয়। দৈনিক আজাদীতে গত ৩০ জানুয়ারি প্রকাশিত খবরে বলা হয়, রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে এ জরিপ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এতে বলা হয়, বিগত বছরগুলোর মতো ২০২২ সালেও দুর্নীতি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। অবকাঠামোগত দুর্বলতা, ব্যাংক থেকে ঋণ প্রাপ্তির চ্যালেঞ্জ, দুর্বল আমলাতন্ত্র, রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধ উদ্ভূত মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার উত্থানপতন ও নীতিগত সমস্যা ব্যবসায়ের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ২০২১২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের অগ্রগতির পথে নতুন নতুন সমস্যা সামনে চলে আসার কারণে দুর্নীতির তীব্রতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এমন তথ্যও উঠে আসে জরিপে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা ব্যবসাবাণিজ্যের জন্য সহায়ক হয়নি উল্লেখ করে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপেশাদার আচরণ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। নির্বাচনের বছর সামাজিক ও রাজনৈতিক অশান্তি আরও বাড়ার ইঙ্গিত দেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসাবাণিজ্যের এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। পরামর্শগুলো হলো, দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে বিভিন্ন নীতি, কৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহণ; সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে একটি বড় সংস্কার নিশ্চিত করা; আরও স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দক্ষতার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা; নাগরিক এবং ব্যবসায়িক সেবা নিশ্চিত করা; ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর্থিক খাতে সংস্কার ও নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ করার অঙ্গীকার করা। এছাড়া আর্থিক খাতে বড় ধরনের সংস্কার, ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন, ঋণে সুদহারের সীমা তুলে নেওয়া, বকেয়া ঋণে স্বচ্ছতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটির (আইডিআরএ) কার্যকর ভূমিকা বৃদ্ধির পরামর্শ দেয় সিপিডি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ব্যবসার পরিবেশের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থা যে ভালো নয় এ তথ্য পুরোনো। দুর্নীতির পাশাপাশি নানা ধরনের প্রক্রিয়াগত ও আইনি জটিলতার কারণে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এখানে। কখনো বা প্রলম্বিত হচ্ছে প্রক্রিয়া। অথচ এমনটি হওয়ার কথা নয়। দেশে ব্যবসা সহজীকরণে ডুয়িং বিজনেস সংক্রান্ত জাতীয় সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ কমিটি বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এছাড়া একই উদ্দেশ্যে গঠন করা হয় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। কথা ছিল, ডুয়িং বিজনেস সংস্কার কমিটির কার্যক্রম সরাসরি মনিটর করবে বিডা। এর ফলে আমরা আশা করেছিলাম, উদ্যোক্তারা শিল্প গড়ে তুলতে অতি দ্রুত তাদের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, দেশীয় উদ্যোক্তাদের এখনো বিভিন্ন জায়গায় হয়রানির শিকার হতে হয়। পদে পদে দিতে হয় ঘুষ। এ অবস্থার অবসান জরুরি।’

ব্যবসাবাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতি বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘পদে পদে যদি সমস্যা থাকে, তাহলে আমরা যতই প্রচারপ্রচারণা চালাই না কেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবে না। আমরা মুখে যা বলছি, বাস্তব চিত্র কিন্তু ভিন্ন। সাভারের চামড়াশিল্প নগরীর সিইটিপি (কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার) আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিন বছর ধরে কথা হচ্ছে। কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। আমরা কথায় অনেক স্মার্ট, তবে কাজে তেমনটা নই।’

অর্থনীতিবিদরা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা ব্যবসা বাণিজ্যে অন্যতম বাধা হচ্ছে খেলাপি ঋণ। প্রতিবছরই বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার বাড়ছে। বিশ্বের অনেক দেশেই ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও সামাজিকনানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। কোনো কোনো দেশে পাসপোর্ট জব্দ করা হয়, যাতে তারা অন্য দেশে পালিয়ে যেতে না পারে। বাংলাদেশেও ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন।

অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের ব্যবসাবাণিজ্য, বিনিয়োগ, আমদানিরপ্তানি ঠিক না থাকলে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব হবে না। এজন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সকল বাধা দূর করতে হবে। ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে নিতে হবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে