আড়াই মাসের ছোট বোন শায়েলা মুনতারিন হীরার কান্না থামাতেই মাথায় ও হাতে দা দিয়ে কোপ মারে আড়াই বছরের বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌস। এতে শুধু কান্নাই থামেনি, ছোট্ট মণির জীবনটাই থেমে গেছে মুহূর্তের মধ্যেই। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটে পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের উত্তর জুম এলাকায় গতকাল ২৪ জানুয়ারি দুপুরে।
ইউপি চেয়ারম্যান ও নিহত শিশুর মা জোবাইদা বেগমের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার দিন দিনমজুর বাবা জিয়াবুল করিম প্রতিদিনের মতো কাজে চলে যায় এবং দুপুর দেড়টার দিকে মা জোবাইদা বেগম দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে ঘরের বারান্দার বিছানায় ঘুম পাড়িয়ে রেখে বাড়ির পাশের পানের বরজে কাজ করতে যান। ঠিক আধা ঘণ্টা পর মা এসে দেখেন তার আড়াই মাস বয়সী শিশু কন্যা শায়েলার রক্তাক্ত নিথর দেহ বিছানায় পড়ে আছে আর আড়াই বছর বয়সী শিশু কন্যা একটি দা হাতে তার পাশেই খেলা করছে।
মা জিজ্ঞেস করলে আড়াই বছর বয়সী জান্নাতুল ফেরদৌস জানায়, “বোন বেশী কান্না করছিল তাই কোপ মেরেছি। এরপরে কান্না বন্ধ করে সে ঘুমিয়ে গেছে।”
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুর রহমান মজুমদার।
শিশুটির লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন থানার এসআই এটি এম আশরাফুল হক।
তিনি দৈনিক আজাদীকে জানান, “আমি ছোট্ট শিশু জান্নাতুল ফেরদৌসের সাথে কথা বলেছি। তার কথা এখনো স্পষ্ট নয়। তবুও সে অকপটেই বলছে বোনের কান্না থামানোর জন্যই ছোট বোনকে দা দিয়ে কুপিয়েছে। এমনকি দা দিয়ে কোপ দেয়ার পর যখন রক্ত বেরুচ্ছিল তখন সে বাসার ভিতর থেকে চাউল এনে নিহত শিশু হীরার জখমের উপর তা ছিটিয়ে দেয় রক্ত বন্ধ করার আশায়।”
নিহত শিশুটির মাথায় ও বাম হাতের বাহুতে ৬-৭টি দায়ের কোপ দেখা গেছে বলে জানান তিনি।
নিহত শিশুর হতভাগী মা জোবাইদা বেগমের সাথে থানায় কথা হয়। তিনি বলেন, “দুপুর দেড়টার দিকে তিনি দুই মেয়েকে নিয়ে ঘরের বারান্দার বিছানায় ঘুম পাড়িয়ে দেন। এসময় তার বড় মেয়ে সালমা এসে জানায় যে তাদের পানের বরজ নষ্ট করছে কয়েকজন ছেলেপিলে। আর ওই ছেলেপিলেদের মানা করতেই ঘুমন্ত শিশুকন্যাদের রেখে পানের বরজে যাই। আধা ঘণ্টা পরে এসে দেখি দুধের শিশুটির রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে আছে আর জান্নাত তার পাশেই একটি দা নিয়ে খেলা করছে।”
তিনি আরো বলেন, “আমি মেয়েকে জিজ্ঞেস করলে বোন বেশী কান্না করছিল তাই কান্না থামাতেই হাতের কাছে কিছু না পেয়ে দা দিয়ে কোপ দেয় বলে জানায়।”
এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন জোবাইদা।
শিলখালী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন বলেন, “নিহত শিশুটি শিলখালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড়ের উত্তরজুম এলাকার দিনমজুর জিয়াবুল ও জোবাইদা দম্পতির। হতদরিদ্র এই দম্পতির ৫ মেয়ের মধ্যে নিহত শিশু হীরার বয়স আড়াই মাস এবং তার সাথে একই বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌসের বয়স আড়াই বছর। পুলিশের সাথে আমরাও ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। মায়ের ভাষ্য অনুযায়ী ছোট বোনের কান্না থামাতেই অবুঝ শিশু জান্নাতুল দা দিয়ে কোপ দেয়। এতে ছোট বোনের মৃত্যু হয়।”
এ বিষয়ে পেকুয়া থানার ওসি সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, “দুই শিশুই অবুঝ। সুতরাং তাদের অপরাধ কোনো আইনের মধ্যেই পড়ে না। তাছাড়া তাদের মা-বাবারও কোনো অভিযোগ নেই মর্মে তারা থানায় লিখিত দিয়েছে। এ কারণে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নিয়ে নিহত শিশুর লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”