বেড়েছে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর হামলা পাল্টা হামলা

বান্দরবানে সাম্প্রতিক সময়ে মারা গেছে ৩১ জন

বান্দরবান প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৮ মার্চ, ২০২২ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবান জেলার বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি জেএসএস মূল দল, জেএসএস সংস্কার, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক, ইউপিডিএফ মূল দল, মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি) ও ম্রো ন্যাশনাল পার্টিসহ (এমএনপি) বিচ্ছিন্ন আরও কয়েকটি সশস্ত্র গ্রুপের তৎপরতা রয়েছে। পুলিশ বলছে, পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর হামলা পাল্টা হামলা বেড়েছে।
রোববার রাতে জনসংহতি সমিতি জেএসএস মূল দল ও মগ লিবারেশন পার্টির (এমএলপি) মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের কেচালং মৌজায়। গোলাগুলিতে মগ লিবারেশন পার্টির বান্দরবান অঞ্চলের প্রধান ক্রয়হ্লা রাখাইন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। মগ বাহিনীর আরও ৬ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাড়াবাসী। পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে আশপাশের পাহাড়ি গ্রামবাসী।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের জেলা সেক্রেটারি অংচ মং মারমা বলেন, অধিকার আদায়ের সংগ্রামের নামে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে পাহাড়ের সশস্ত্র গ্রুপগুলো। পাহাড়ে চাঁদাবাজি, হত্যা, অপহরণ এগুলো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংঘাতে পাহাড়িরা মরছে। পাহাড়ের মানুষ এখন শঙ্কিত। নিরাপদে সবখানে চলাফেরাও করতে পারছে না। সশস্ত্র গ্রুপগুলো পাহাড়ে উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। চাঁদা ছাড়া পাহাড়ে কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এগুলো পার্বত্যবাসীকে আরও অনগ্রসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসব বন্ধে সরকারকে আলোচনার পাশাপাশি আরও কঠোরও হতে হবে।
পার্বত্য নাগরিক পরিষদের সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, বান্দরবানে অস্ত্রের ঝনঝনানি বাড়ছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জেলা হিসাবে পরিচিত বান্দরবান সংঘাতের জেলায় পরিণত হয়েছে। পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিকল্প নেই।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবান জেলায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ৩১ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রোয়াংছড়িতে জেএসএস মূল সংগঠনের সদস্য মংসিংশৈ মারমাকে (৪০) গুলি করে হত্যা করেছে সশস্ত্র গ্রুপ। রুমায় ৩ ফেব্রুয়ারি গোলাগুলিতে সেনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ও জেএসএস মূল সংগঠনের ৩ জনের মৃত্যু হয়। তার আগে ৪ জানুয়ারি লামায় রুপসীপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গেলে মগ বাহিনীর সদস্য মংক্যচিং মারমাকে (৩৫) গুলি করে হত্যা করে জেএসএস মূল দলের ক্যাডাররা। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর রাজবিলা ইউনিয়নের রমতিয়া পাড়া থেকে মগ বাহিনীর কিরণময় তঞ্চঙ্গ্যাকে (২৬) অপহরণ করে হত্যা করে। ১৩ ডিসেম্বর রাজবিলায় জেএসএস মূল সংগঠনের সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পুশে থোয়াই মারমাকে (৩৬) গুলি করে হত্যা করা হয়। ২৩ নভেম্বর তারাছা ইউনিয়নের তালুকদার পাড়ায় আওয়ামী লীগের কর্মী উথোয়াইনু মারমাকে গুলি করে হত্যা করে জেএসএস।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরীন আখতার বলেন, একের পর এক হত্যাকাণ্ডগুলো হচ্ছে রিঅ্যাকশন। সশস্ত্র গ্রুপগুলো হত্যাকাণ্ডের বদলা নিতে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। বান্দরবানে হঠাৎ করেই সশস্ত্র গ্রুপগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এতদিনের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন ছিল। কিন্তু বর্তমানে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর প্রতিটি হত্যাকাণ্ড ও হামলা এক সুতোয় বাঁধা মনে হচ্ছে। আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে অভিযানে তৎপরতা শুরু করেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসভাপতি মাহফুজ আনাম, সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ
পরবর্তী নিবন্ধআবুধাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা