বেড়েছে রাজস্ব আয়, বাড়েনি জনবল ভোগান্তির অভিযোগ সেবাগ্রহীতাদের

চট্টগ্রাম কাস্টমস

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৬ জুন, ২০২২ at ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম কাস্টমসে টানা দুই অর্থবছর ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এছাড়া প্রতি বছরই বাড়ছে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা। এমন একটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় ধরে জনবল সংকটে ধুঁকছে। বর্তমানে মোট চাহিদার অর্ধেক জনবল দিয়েই চলছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। জনবল সংকটের কারণে যে কাজ একদিনে শেষ হওয়ার কথা সেটি শেষ হচ্ছে এক সপ্তাহে। এছাড়া প্রিভেন্টিভ কার্যক্রমের তদারকিতেও বেগ পেতে হচ্ছে। ফলে অনেক সময় আমদানিকৃত পণ্যবাহী কন্টেনারের কায়িক পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। ফলে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির ঝুঁকিও বাড়ছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, কাস্টমসে মোট এক হাজার ২৪৮টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কাজ করছেন ৬৪৭ জন। এছাড়া শূন্য রয়েছে ৬০১টি পদ। অর্থাৎ অনুমোদিত পদের বিপরীত শুন্য পদ হলো ৪৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। এরমধ্যে প্রথম শ্রেণীর ২১০টি পদের বিপরীতে শূন্যপদ ৯৪টি, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৪৯৭ পদের বিপরীতে শূন্যপদ ২৩১টি, তৃতীয় শ্রেণীর ৪২৩ পদের বিপরীতে শূন্যপদ ২৫৪টি এবং চতুর্থ শ্রেণীর ১১৮ পদের বিপরীতে শূন্যপদ রয়েছে ২২টি।

জনবল কাঠামোতে দেখা গেছে, প্রথম শ্রেণীর ২১০ পদের মধ্যে যুগ্ম কমিশনার পদে ৫ জনের বিপরীতে কাজ করছেন ৩ জন, ডেপুটি কমিশনার পদের ১৬ জনের বিপরীতে কাজ করছেন ১২ জন, উপ প্রধান রাসায়নিক পদের ৩ জনের সবগুলোই শূন্য, সহকারী পরিচালক/পরিসংখ্যান পদের দুই পদের দুটিই শূন্য, সহকারী কমিশনারের ৪৭ পদের বিপরীতে শূন্যপদ ৩০টি, রাসায়নিক পরীক্ষকের দুই পদের দুটি শূন্য, সহকারী প্রোগ্রামারের দুই পদের কর্মরত আছেন দুজন, রাজস্ব কর্মকর্তার ১১৯ পদের মধ্যে শূন্য পদ ৪৪টি, আইন উপদেষ্টা এক পদের কর্মরত আছেন একজন, আইন কর্মকর্তার দুটি পদে কর্মরত আছেন একজন, প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার দুটি পদে দুটিই শূন্য, পরিসংখ্যানের দুই পদে দুটিই শূন্য। অন্যদিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর পদ রয়েছে ৪৯৭ টি।

এরমধ্যে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার ৪৮৭ পদের ২২১টি শূন্য, সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষকের ৬ পদের ৬টিই শূন্য, অডিটরের দুই পদের দুটি শূন্য এবং সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার দুটি পদ থাকলেও কর্মরত নেই কেউই। তৃতীয় শ্রেণীর ৪২৩ পদের মধ্যে মাস্টারের দুই পদের ২ জনই কর্মরত, কম্পিউটার অপারেটরের ২৯ পদে শূন্যপদ রয়েছে ৯টি, সাব এসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (রেডিও) এক পদে কর্মরত একজন, টেলিফোন সুপারভাইজারের এক পদে কর্মরত একজন, অফিস সুপারিনটেনডেন্টের ১৩ পদে শূন্যপদ ৫টি, পরিসংখ্যান অনুসন্ধায়কের এক পদের একটিই শূন্য, রেডিও অপারেটরের দুই পদের একটি শূন্য, প্রধান সহকারী ১৫ পদের মধ্যে শূন্যপদ ৫টি, সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটরের ৫ পদে ৫ জনই কর্মরত, উচ্চমান সহকারী পদে ৮১ পদের মধ্যে শূন্যপদ ৩৩টি, ক্যাশিয়ারের দুই পদের একটি শূন্য, স্পিডবোর্ট ড্রাইভার-১ পদের ২টির মধ্যে দুটিই শূন্য, ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের এক পদে একটিই শূন্য, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ৬৩ পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৫৮টি, সাব ইন্সপেক্টর পদের ১৭টির মধ্যে শূন্য ১৪টি, ড্রাইভার পদের ৪৭টি মধ্যে শূন্য ৭টি, টেলিফোন অপারেটর পদের ৩টির মধ্যে দুটি শূন্য, ইলেক্ট্রিশিয়ানের একটি পদে একটিই শূন্য, সিপাই পদের ১৩৫ পদের মধ্যে ১১৫টিই শূন্য। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণীর ১১৮ পদের মধ্যে ল্যাব এটেনডেন্টের ৩ পদে কর্মরত ৩ জন, কার্পেন্টারের ১ পদে কর্মরত একজন, গ্রীজারের ৪ পদে শূন্যপদ একটি, রেকর্ড সাপ্লাইয়ারের এক পদের একটিই শূন্য, অফিস সহায়ক ৯০ পদের ৬টি শূন্য, কুকের ২ পদের দুটিই শূন্য, লস্করের দুই পদের একটি শূন্য, ঝাড়ুদার/ক্লিনার/সুইপার ৭ পদের মধ্যে শূন্যপদ ৫টি এবং মালী পদের ৮টির মধ্যে শূন্যপদ রয়েছে ৬টি।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি রিগ্যান দৈনিক আজাদীকে বলেন, কাস্টমসের জনবল সংকটের কারণে পণ্যের কায়িক পরীক্ষায় আমাদের সমস্যার মুখে পড়তে হয়। এছাড়া আনস্টাফিংয়ে আমাদের সমস্যার মুখে পড়তে হয়। কাস্টমসের ল্যাবের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। রাসায়নিক পরীক্ষক অবসরে যাওয়ার পরে একজন কেমিক্যাল এসিসট্যান্ট যোগ দিয়েছেন। ল্যাব পরীক্ষাতে আমাদের প্রচুর সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, জনবল সংকটের বিষয়ে বিভিন্ন সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়া হয়েছে। বর্তমান জনবল সংকট থাকলেও আমাদের কাজের মধ্যে কোনো ধরণের ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে না। চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ে প্রতি বছরই গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন আমরা গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের পরে এবারও ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় করেছি। এ অর্থবছরের এখনো পুরো মাস বাকি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএম ডিপোয় বিভীষিকা, নিহত ৪৬
পরবর্তী নিবন্ধএশিয়াটিক কটন মিলস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কারাগারে