‘বেড়েছে মশা, নিধনে নেই গতি’ প্রয়োজন সফল মশা নিধন ব্যবস্থাপনা

| বৃহস্পতিবার , ১২ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীতে মশার অত্যাচারে জনজীবন অতিষ্ঠ। হাজার হাজার টাকা বরাদ্দের পরও মশা নিধন হচ্ছে না। মশা তাড়ানোর জন্য ঘরে ঘরে বিভিন্ন কৌশল নেওয়ার পরও নিস্তার মিলছে না। এদিকে মশার কারণে নানা রোগ- ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল ১০ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত ‘বেড়েছে মশা, নিধনে নেই গতি’ শীর্ষক সংবাদে বলা হয়েছে, ওষুধের সংকট নেই। মিলেছে সরকারি বরাদ্দ। আছে জনবল। পর পর দুদিন আনুষ্ঠানিকতাও হয়েছে। তবু গতি পাচ্ছে না চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মশক নিধন কার্যক্রমে। এতে আরো বলা হয়, শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, খাল ও নালা-নর্দমায় কিলবিল করছে মশার লার্ভা ও পূর্ণাঙ্গ মশা। মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে খাল-নালায় বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এতে পানি চলাচল বন্ধ। এসব আবদ্ধ পানিতে বেশি কিলবিল করতে দেখা গেছে।
নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে গত মাসে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার বাহক এডিস মশা নিয়ে জরিপ চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জরিপের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রকাশ করা হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জরিপে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা আজাদীকে বলেন, আমি যে ওয়ার্ডে গেছি তার প্রত্যেকটায় এডিস মশা পেয়েছি। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে সাত-আটটি করে এডিস মশা পেয়েছি। সবচেয়ে বেশি পেয়েছি নালাপাড়ায় সিপিআই ট্রেনিং সেন্টারে। সেখানে একটা ভবনে প্রচুর এডিস মশা পাওয়া গেছে। সাংঘাতিক অবস্থা ছিল সেখানে। এছাড়া সিমেন্ট ক্রসিং এলাকার প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে পেয়েছি। এদিকে নগরে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। গত অক্টোবর মাসে ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সিভিল সার্জন অফিস। এর বাইরেও ডেঙ্গু রোগীর খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বর্তমানে মশার নিধন বা দমন কার্যক্রম পুরোটাই সিটি করপোরেশন নির্ভর। মশা নিধন কর্তৃপক্ষ বলতে আমরা সিটি করপোরেশনকেই বুঝে থাকি। তবে মশা দমনের বিষয়টা এই একক কর্তৃপক্ষ যেভাবে দেখছে বা সার্বিকভাবে যেভাবে দেখা হচ্ছে তাতে সফল ও টেকসই মশা নিধন খুব কঠিন হতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মশার নিধন বা দমনকে সাধারণ ভাবে দেখার সুযোগ নেই। এ নিয়ে নতুন করে ভাবতেই হবে। মশা নিধন খাতে আমরা কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করছি কিন্তু সুফল মিলছে না। তাই, মশা নিধনের বিষয়টাকে আলাদা নজর দিয়ে দক্ষ লোকবলের সমন্বয়ে যুগোপযোগী, গবেষণা ভিত্তিক ও প্রযুক্তি নির্ভর ইউনিট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চিন্তা করা যেতে পারে। আমাদের প্রয়োজন একটি সফল ও টেকসই মশা নিধন ব্যবস্থাপনা।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন মশক নিধন কার্যক্রম চলমান আছে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বির্জা খালসহ বেশ কয়েকটি খাল পরিষ্কারের কথা জানিয়েছেন আজাদীর প্রতিবেদনে। তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট হচ্ছে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা নির্মূল করা। আমরা প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংসের দিকে জোর দিচ্ছি।
সমন্বিত মশক নিধন ব্যবস্থাপনার আওতায় প্রথম পদক্ষেপটিই হলো পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা। মশার কামড় বা এর রোগ থেকে বাঁচতে ব্যক্তিগত সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটিই প্রথম প্রয়োজন। পরিষ্কার ও বদ্ধ পানি এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র। চারপাশের যেসব জায়গায় এডিস মশা জন্মায়, সেসব জায়গায় যাতে এডিস মশা জন্মাতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাই বাসাবাড়ির আশপাশে ডাবের খোসায়, ফুলের টবে, ছাদে, ফ্রিজের নিচের ট্রেতে তিনদিনের বেশি পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাসা-বাড়ি, ছাদ-আঙ্গিনায় নিজ নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এটি আমাদের সবার নাগরিক দায়িত্ব। শুধু সরকার বা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এককভাবে মশা নিধন করতে পারবে না। আমাদের নিজস্ব দায়িত্বটুকু অবশ্যই পালন করতে হবে। আবহাওয়াগত কারণে নগরীতে এখন মশার উপদ্রব বেড়েছে। প্রতি ওয়ার্ডের ঝোঁপঝাড় পরিষ্কার রাখতে হবে। নালায় যেখানে মশার জন্ম হয় সেখানে প্রতিদিন ওষুধ ছিটাতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, মশা থেকে মুক্তি পেতে সামাজিক সচেতনতা জরুরি প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে