বেড়িবাঁধ ভেঙে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী

সীতাকুণ্ড ও মহেশখালী ।। স্রোতে ভেসে গিয়ে একজনের মৃত্যু

সীতাকুণ্ড ও মহেশখালী প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২৮ মে, ২০২১ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে সীতাকুণ্ড ও মহেশখালীতে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজরের অধিক মানুষ। গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার বাঁধের বিভিন্ন অংশ দিয়ে লোকালয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকেছে।
আমাদের সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, জোয়ারের পানিতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাইছড়ি, ঘোড়ামরা, সৈয়দপুর ইউনিয়নের উত্তর বগাচতর গ্রাম ও কুমিরা ইউনিয়নের কোটপাড়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে এসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সীতাকুণ্ড কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পূর্ণিমার জোয়ারে পানির উচ্চতা অনেক বাড়ে। তার ওপর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবের কারণে পানির পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত পাঁচ ফুট বেড়ে যায়। উপকূলের সাড়ে সাত মিটার উচু বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে ঢেউয়ের পানি লোকালয়ের দিকে পড়েছে। গতকালও জোয়ারে পানির উচ্চতা আরও বেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামরা এলাকায় উপকূলে ১০০ মিটারের মতো বেড়িবাঁধ ভেঙে সেই অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে বসত বাড়িতে। জোয়ার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। সাগরের লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা বংশী জলদাস বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব তো শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তাঁদের দুঃখ শেষ হবে না। মাত্র ১০০ ফুট বাঁধের জন্য তাদের পুরো বর্ষায় কষ্ট করতে হবে। বেড়িবাঁধের এই ছোট অংশ বর্ষার আগে সরকারের মেরামত করে দেওয়া উচিত।
সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির আহমেদ জানান, বেড়িবাঁধের কিছু অংশ ভাঙা থাকায় জোয়ারের পানি বসত বাড়িতে প্রবেশ করেছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অতি দ্রুত বেড়িবাঁধটি সংস্কার হবে বলে তিনি আশা করেন।
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট এলাকায় স্লুইসগেট মেরামতের কাজ চলছে। জোয়ারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা তা দেখতে সেখানে যান তিনি।
কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী জানান, পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙা বাঁধ দিয়ে কুমিরার কোটপাড়া গ্রামের লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। এতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
পাউবোর সীতাকুণ্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আনিছ হায়দার খান বলেন, বদরখালী এলাকার স্লুইসগেট না থাকায় সেখানে পানি ঢুকেছে। স্লুইস গেটটি জরুরি ভিত্তিতে নির্মাণের চেষ্টা করছেন তারা। এ ছাড়া ঘোড়ামরা এলাকার বেড়িবাঁধ সংস্কারের বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাবেন।
লোকালয়ে পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন রায় বলেন, এ ব্যাপারে তাঁর কাছে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য নেই।
আমাদের মহেশখালী প্রতিনিধি জানান, মহেশখালীতে জোয়ারের পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। নিহত তরুণ মো. হাসান (১৮) উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের বুজরুক পাড়া গ্রামের আব্দুল করিমের একমাত্র ছেলে। গতকাল সকাল ১০টায় সাগরে ভেসে যাওয়া নিখোঁজ হাসানের লাশ বিকেল ৪টায় উদ্ধার হয়েছে।
কুতুবজোম ইউপি মেম্বার নুরুল আমিন খোকা জানান, গতকাল হাসান তার অপর এক সঙ্গীসহ সোনাদিয়া সেতুর পাশে ঘটিভাঙা খালে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা বিভিন্ন ধরনের ভাঙারি পণ্য কুঁড়াতে গিয়েছিল। এ সময় স্রোতের তোড়ে ভেসে যায়। তার সাথে থাকা একই এলাকার আব্দুস শুক্কুরের ছেলে ছৈয়দ নবী তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে সে বাড়িতে এসে এ খবর জানালে স্থানীয় ইউপি মেম্বার নুরুল আমিন খোকা ও হাসানের আত্মীয় স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজির দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা পর ভাটার সময় চিংড়ি প্রজেক্টের বাঁধের পাশে বিকাল ৪টায় তার লাশ পাওয়া যায়।
এদিকে মাতারবাড়ি ও ধলঘাটায় অন্তত এক হাজার পরিবারের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বঙ্গোপসাগরের একেবারে তীরবর্তী বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসকারীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। দুটি ইউনিয়নে অন্তত ২ শত কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। তলিয়ে গেছে শতাধিক চিংড়ি প্রকল্প। বিধ্বস্ত হয়েছে ৭০নং ফোল্ডারের অন্তত ৫ কিঃমিঃ উপকূলীয় বেড়িবাঁধ।
মাতারবাড়ির ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪/৫ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় ৭০নং ফোল্ডারের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে মাতারবাড়ীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে শতাধিক কাঁচা বাড়ি ঘর ও ৫০টির মতো চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার নতুন করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
ধলঘাটার ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান, গত পাঁচ বছরে তিল তিল করে উন্নয়নে গড়ে তোলা ইউনিয়নের অবকাঠামো মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে গেল। হেরে গেলাম প্রকৃতির নির্মম করালগ্রাসে। এই ইউনিয়নে অন্তত ৫০টির অধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল দ্বিতীয় দিনেও নতুনভাবে জোয়ারের পানি ঢুকে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। তিনি জরুরি ভিত্তিতে ধলঘাটা ও মাতারবাড়ীর বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ মেরামতের দাবি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইংরেজীতে পরিচিত হওয়া ও প্রশ্নোত্তর: পঞ্চম শ্রেণী
পরবর্তী নিবন্ধচসিকের ক্রাশ প্রোগ্রামের মেয়াদ বাড়লো তিন মাস