চসিকের ক্রাশ প্রোগ্রামের মেয়াদ বাড়লো তিন মাস

সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৮ মে, ২০২১ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

মশক নিধন ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) গৃহীত ক্রাশ প্রোগ্রামের মেয়াদ আরো তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সিটি মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর ১০০ দিনের এ ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করে সংস্থাটি। গত মঙ্গলবার মেয়রের একশ দিন পূর্ণ হয়েছে। এ অবস্থায় গতকাল অনুষ্ঠিত চসিকের বর্তমান পর্ষদের চতুর্থ সাধারণ সভায় নাগরিক স্বার্থে ক্রাশ প্রোগ্রামের মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়।
করোনা পরিস্থিতির কারণে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলরগণ, সিটি কর্পোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদসহ বিভাগীয় প্রধানগণ অংশ নেন।
সভায় ফুটপাত, সড়ক ও খাল-নালার উপর গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কঠোর হবেন বলে ঘোষণা দেন মেয়র। তিনি নগরীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে জিরো টলারেন্স থাকার ঘোষণা দিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকার আহ্বান জানান। মেয়র বিভিন্ন সংস্থার চলমান উন্নয়ন কাজের ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয়েরও আহ্বান জানান। একইসঙ্গে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ’র চলমান মেগা প্রকল্পের জন্য নগরের বিভিন্ন খালে যেসব বাঁধ দেয়া হয়েছে তা দ্রুত অপসারণের আহ্বান জানান।
এদিকে সভায় সংরক্ষিত ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর অভিযোগ করেন, কাজের ক্ষেত্রে অনেক সময় তাদের ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাদের দাবি, সরকারি বরাদ্দের ক্ষেত্রে সাধারণ কাউন্সিলররা যতটা সুবিধা পাচ্ছেন তারা তত পাচ্ছেন না। অথচ সাবেক মেয়রের মেয়াদকালে তাদের মধ্যেও সমভাবে বণ্টন করা হতো।
সভায় ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব বলেন, বিভিন্ন নাগরিক সনদ কাউন্সিলর অফিস থেকে দেয়া হতো। এজন্য তারা কোনো টাকা নিতেন না। কিন্তু বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হচ্ছে এ-টু-আই প্রকল্পের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে আগে টাকা পরিশোধ করতে হয়। এতে অনেক গরিব পরিবারের সমস্যা হয়।
মেয়রের বক্তব্য :
সভায় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এই নগর আমার একার নয়, এটা সবার। তাই নিজ স্বার্থে নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। চট্টগ্রামকে বাসযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানের নগরীতে পরিণত করতে সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, কর্পোরেশনকে স্বনির্ভর ও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো প্রয়োজন। যত সীমাবদ্ধতাই থাকুক, তার মধ্যেই পরিকল্পনা মাফিক পরিচালনা করতে পারাটাই চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদেরও আন্তরিকভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাহলেই আমাদের কাক্সিখত পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশ বান্ধব নগর গড়ে তোলা সম্ভব।
মেয়র বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম ১০০ দিনের লক্ষ্যসীমা নির্ধারণ করে জনগুরুত্বপূর্ণ প্যাচওয়ার্ক কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। এ মশক নিধন, পরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, বেহাল সড়কগুলোর সংস্কার এবং সড়ক আলোকায়নসহ চসিকের সেবামূলক পরিধিতে গতিশীলতা আনয়ন এবং আয়ববর্ধক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাই ও উপায় অন্বেষণ করেছি। এই ১০০ দিনের সময়সীমার মূল লক্ষ্য ও বিষয়গুলোর সফলতা ও সুফল সন্তোষজনক। তবে চলমান কার্যক্রম পরিচালনায় বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে বিধায় ক্ষেত্রবিশেষে শতভাগ সাফল্য হয়ত অর্জিত হবে না। তবে না হওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত করা গেছে। তাই অভিজ্ঞতার আলোকে চিহ্নিতকরণ ও প্রতিবন্ধকতা নিরসন সম্ভব হলে চসিকের ভবিষ্যতের পথ সুগম হবে।
তিনি বলেন, মশক নিধনে যতটুকু সফলতা আসার কথা তা আসেনি, কারণ নগরবাসীর অসচেতনতা। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা ও জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে খালের বিভিন্ন অংশে বাঁধ দেয়ায় জমাট পানি মশা প্রজননের উৎসক্ষেত্র হওয়ায় এবং সংগৃহীত কীটনাশকের ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কারণে কাক্সিখত ফলাফল পাওয়া যায়নি। ওষুধের গুণাগুণ যাচাই করার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দের কাছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে শীঘ্রই তাদের পরামর্শ মোতাবেক মশক নিধনের কাজ আবার শুরু করা হবে।
মেয়র বলেন, নগরের ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামতে প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও আবর্জনা পরিস্কারের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা গেছে। এখন আবর্জনা পরিস্কারের বিষয়টি দৃশ্যমান। ১০০ দিনের কার্যক্রমের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নগরীর ৩০টি রাস্তার ৭৬ কিলোমিটার অংশে পোল বসিয়ে এলইডি লাইট স্থাপন করা হয়েছে। ফলে বিস্তীর্ণ নগরীর অনেকটা আলোকায়নের আওতায় আনা গেছে এবং বাকি স্থানগুলোতেও আলোকায়নের কাজ চলমান থাকবে।
মেয়র বিভিন্ন স্টান্ডিং কমিটির সদস্যদের বলেন, শুধু নামমাত্র না হয়ে বাস্তব বিবেচনায় কার্যকর হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেড়িবাঁধ ভেঙে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী
পরবর্তী নিবন্ধতামিমদের লক্ষ্য ১০ পয়েন্ট