বেসরকারি আইসিডি থেকেও খালাস হবে সব ধরনের পণ্য

বন্দরের জট সামলাতে মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সিদ্ধান্ত

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৬ জুলাই, ২০২১ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

আমদানি করা সব ধরনের পণ্য বোঝাই কন্টেনার এখন বন্দরের পাশাপাশি বেসরকারি আইসিডি থেকেও খালাস করা হবে। কন্টেনার থেকে পণ্য আনস্টাফিং কার্যক্রমও চলবে আইসিডিতে। জট থেকে চট্টগ্রাম বন্দরকে রক্ষা করতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত রাত থেকেই সিদ্ধান্তটি কার্যকর করে আমদানি পণ্য বোঝাই শতভাগ কন্টেনার আইসিডিতে খালাস শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বন্দর থেকে অন্তত ১৫ হাজার টিইইউএস আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার ১৯টি আইসিডিতে স্থানান্তর করা হবে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবত থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঈদের ছুটি এবং লকডাউন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই কন্টেনার খালাস কমে গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ সপ্তাহের সাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা খোলা রেখে পণ্য সরবরাহ দেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও কন্টেনার খালাসে গতি আসেনি। আমদানিকারকরা আমদানিকৃত পণ্যের চালান খালাস না করায় বন্দরের অভ্যন্তরে বড় জট তৈরি হচ্ছে। আবার ঈদের সময় কারখানা বন্ধ থাকা এবং চলমান লকডাউনে তৈরি পোশাক কারখানাসহ সব ধরনের কারখানা বন্ধ রাখায় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল খালাস শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। কারখানা বন্ধ থাকায় কাঁচামাল খালাস করার সুযোগ পাচ্ছেন না শিল্প মালিকেরা। এতেও বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেনার বাড়ছে।
বন্দরে দৈনিক সাড়ে ৪ হাজার আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার জাহাজ থেকে খালাস করে ইয়ার্ডে রাখা হয়। একই সময়ে গড়ে ৪ হাজার ৩০০ টিইইউএস রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার জাহাজিকরণ হয়। আমদানি পণ্য চালানসমূহ ডেলিভারি নেওয়া সম্ভব না হলে ১৪ দিনে ৬৩ হাজার টিইইউএস কন্টেনার বন্দরের ইয়ার্ডে জড়ো হবে। এত বিপুল সংখ্যক কন্টেনার ইয়ার্ডে রাখার মতো ধারণক্ষমতা বন্দরের নেই। বন্দর ইয়ার্ডে মোট কন্টেনার ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউএস। গতকাল বন্দরে কন্টেনারের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৩ হাজার। বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে অনেকগুলো কন্টেনার বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকে। এতে করে আমদানি পণ্য সময় মতো খালাস না হলে এক সপ্তাহের সব কন্টেনার রাখার মতো জায়গাও বন্দর কর্তৃপক্ষের ইয়ার্ডে নেই।
এই অবস্থায় ১৪ দিনের লকডাউনের সময়কালে ইয়ার্ড থেকে আমদানি পণ্য খালাস না হলে আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনারের জট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেনারও জটলায় পড়বে। জাহাজ থেকে কন্টেনার হ্যান্ডলিং ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে।
এই শঙ্কা থেকে সব ধরনের আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার ১৯টি আইসিডিতে প্রেরণ এবং ওখান থেকে সরবরাহ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এলসিএল কন্টেনারগুলোর পণ্যও বেসরকারি আইসিডিতে আনস্টাফিং করে সরবরাহ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। চট্টগ্রাম বন্দরকে জট থেকে রক্ষা করতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও এনবিআর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, আগে বেসরকারি আইসিডিগুলোতে ৩৭ ধরনের পণ্য খালাস হতো। এখন সাময়িকভাবে সব ধরনের পণ্যই খালাস হবে। এতে জাহাজ থেকে খালাস হওয়ার সাথে সাথে কন্টেনারগুলোকে ভালোভাবে স্ক্যানিং করে সংশ্লিষ্ট আইসিডিতে পাঠানো হবে। কাস্টমস ফর্মালিটিজ সম্পন্ন করে চালানগুলো ওখান থেকেই খালাস করা হবে। আগেও এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপোস এসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার রাখার স্থানাভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা ইতিবাচক।
তিনি বলেন, বেসরকারি আইসিডিগুলোতে মোট ধারণক্ষমতা ৭৮ হাজার ৭০০ টিইইউএস। আজ (গতকাল) ১৯টি আইসিডিতে সর্বমোট কন্টেনার রয়েছে ৫৩ হাজার ৪৪৫ টিইইউএস। আমাদের সংকট রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার নিয়ে। রপ্তানির হাজার দশেক কন্টেনার ধারণক্ষমতার বিপরীতে আইসিডিতে কন্টেনার রয়েছে ১২ হাজার ৯৯৩ টিইইউএস। কিন্তু এই কন্টেনারগুলো প্রায় বিশ হাজার টিইইউএস কন্টেনার রাখার জায়গা দখল করে আছে। রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার যত বেশি আটকা পড়বে ততই স্থানাভাব প্রকট হবে।
তিনি বলেন, আমরা আজ (গতকাল) থেকেই আমদানি পণ্য বোঝাই শতভাগ কন্টেনার আনা শুরু করেছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত ১৫ হাজার টিইইউএস কন্টেনার আইসিডিতে নিয়ে আসব। এতে বন্দরের সংকট বহুলাংশে ঘুচে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙামাটির মগবানে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধসাগরে জাল সনদে চলছে অসংখ্য নৌযান