বৃক্ষনিধন বন্ধের পাশাপাশি বেশি বেশি বনায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:১১ পূর্বাহ্ণ

জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে যেসব উপকূলীয় দেশ অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে রয়েছে। এর জন্য দায়ী দেশগুলোর মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ। আইপিসিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে টেনে বের করার জন্য যে প্রচুর ব্যয় সাপেক্ষ প্রযুক্তি চালু রয়েছে তা বছরে মাত্র চার কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বাতাস থেকে টেনে বের করে নিয়ে আসতে পারে। অথচ পৃথিবীতে এখনো যত গাছ আছে সবাই মিলে বছরে ৭৬০ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস টেনে বের করে নিয়ে আসতে পারে। যা আমেরিকার সারা বছরে বাতাসে জমা কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণের চেয়ে বেশি। কাজেই সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় গাছের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশবিদরা বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে অরণ্য নিধনের খবর শুনতে পাই। সোহরাওয়ার্দীতে গাছ কেটে রেস্তোরাঁ নির্মাণ, চট্টগ্রামে শতবর্ষী গাছ কেটে হাসপাতাল নির্মাণ কিংবা কক্সবাজারের বনভূমিতে প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি তৈরির পরিকল্পনা দিন দিন আমাদের শঙ্কিত করে তুলছে। পরিবেশ বিপর্যয়ে এসব ধ্বংসাত্মক কাজ পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত ইতিবাচক সব অর্জনকে ম্লান করে দেয়, যা গোটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। গাছ নির্মূলে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব জীবনযাত্রাকে দিন দিন শঙ্কিত করে তোলে।
এ অবস্থায় সরকার নতুন একটা আইন প্রণয়ণের জন্য চিন্তাভাবনা করছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘বাড়ির গাছ কাটতেও লাগবে অনুমতি হচ্ছে আইন’ শীর্ষক প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ব্যক্তি মালিকানায় থাকা গাছ কাটতেও অনুমতির বিধান রেখে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন আইনের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন এই আইন করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সরকার প্রধান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন, মানুষ যারা সাধারণ বাগান করবে বা স্থায়ী যে গাছ লাগাবে, সেগুলোও তারা তাদের ইচ্ছামত কাটতে পারবে না। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এরকম নিয়ম আছে। সৌদি আরবে ইউ ক্যানট ইমাজিন। আমার বাড়িতে একটা গাছ পড়ে গেছে, এটা আমি সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কাটতে পারব না। এটা ভারতেও আছে। এটাকে ভালোভাবে ইমপ্লিমেন্ট করতে বলা হয়েছে।
দেশের সব বনাঞ্চলকে সুরক্ষা দিতে এ আইন করা হচ্ছে জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সামাজিক বনায়নের যেসব গাছ রয়েছে, সেগুলোও এর আওতায় আসবে। এখানে বুঝতে হবে, স্থায়ী গাছের কথা বলা হয়েছে। লাউ গাছ কাটতে কোনো সমস্যা নাই। আমি যতটুকু জানি, আগেও এরকম একটি নিয়ম ছিল। এটাকেই একটু সহজ করে কর্তৃপক্ষকে অনুমতি দিতে বলা হয়েছে। কারণ একটা মানুষ বিপদে পড়ল, তার গাছ ভেঙে গেল, এটা যদি সাত দিন পরে থাকে, সময় লাগে অনুমতি নিতে, সেটা হলে তো মুশকিল। তাই এটাকে একটু সহজ করতে বলা হয়েছে, এটা অনলাইনে করা যায় কিনা।
সন্দেহ নেই পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এটি রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেষে যে বিষয়ে সন্দিহান, সেটা আসলে ভাববার বিষয়। নিজের বাড়িতে নিজের লাগানো গাছ বিপদে আপদে কাটতে না পারলে মানুষ আদৌ গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ হবেন কিনা ভাবতে হবে। তাছাড়া আমাদের দেশের নানা খাতে দুর্নীতি জড়িয়ে আছে আষ্টেপৃষ্ঠে। গাছ কাটার অনুমতি নিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর আবার নতুন কোনো হয়রানির আশ্রয় নেবে না- এমন গ্যারান্টিও নেই।
তবু বৃক্ষ নিধন রোধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করি। তাই বৃক্ষনিধন বন্ধ করার পাশাপাশি বেশি বেশি বনায়নের জন্য সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। তাই গাছ কাটার নিয়ম প্রণয়ন জরুরি। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের গুরুত্ব যে অপরিসীম, তা বুঝতে হবে। বৃক্ষ পরিবেশের অতিরিক্ত তাপমাত্রা শোষণ করে পরিবেশকে যেমন নির্মল রাখে, তেমনি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে প্রাণীর বেঁচে থাকার মূল উপাদান অক্সিজেন নির্গমন করে। এ সত্যকে ধারণ করে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে