বিয়ের খাবার খেয়ে বর-কনেসহ অসুস্থ ৩ শতাধিক

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | সোমবার , ১ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশে বিয়ের খাবার খেয়ে পেট ব্যথা, বমি ও পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হয়েছেন বর-কনেসহ অন্তত ৩ শতাধিক বরযাত্রী। গত ২ দিন ধরে আক্রান্তরা চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার উপজেলার কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নে।

জানা যায়, চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মাহাবু চেয়ারম্যান বাড়ির মাজুল গণির ছেলে সালমান মাসুদের সঙ্গে একই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড শাহসুফি বাড়ির কামাল উদ্দিনের মেয়ে নেহা আকতারের বিয়ে ঠিক হয়। এ উপলক্ষে শুক্রবার দুপুরে উপজেলার বাদামতলে একটি কমিউনিটি সেন্টারে বরযাত্রীসহ আনুমানিক ২ হাজার অতিথির জন্য প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। খাওয়া ও বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বর-কনেসহ আত্মীয়-স্বজনরা চলে যান নিজ নিজ গন্তব্যে। কিন্ত পরদিন শনিবার থেকে বিয়ের খাবার খাওয়া অনেকেই অসুস্থ হতে শুরু করেন। এরপর ৫ জন, ১০ জন করে বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেলে ভর্তি হতে শুরু করেন।

বর্তমানে বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শতাধিক মানুষ ভর্তি রয়েছেন। মেয়ের মা কুসুম আকতার, নানা আনোয়ার হোসেন, চাচা শাহ আলমসহ অনেকেই বর্তমানে বিজিসিতে ভর্তি রয়েছেন। আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। এদিকে চন্দনাইশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ২ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। বরের পিতা-মাতাসহ আক্রান্তদের মধ্যে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এছাড়া পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পটিয়া সেন্ট্রাল হাসপাতাল, দোহাজারী হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে আক্রান্ত অনেকে ভর্তি রয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই আবার স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আনোয়ারা উপজেলার বশর নামে একজন বাবুর্চি বিয়ের রান্না করেছেন। তবে মোবাইল নম্বর না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

চিকিৎসকরা জানান, স্বাদ বৃদ্ধি ও রং সুন্দর করার জন্য অনেক সময় বাবুর্চিরা খাবারে কেমিক্যাল ব্যবহার করেন, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ধারণা করা হচ্ছে খাবারে এ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করায় ফুড পয়জনিং হয়েছে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিস্তারিত জানা যাবে।
আক্রান্ত আহমদ শফি জানান, শুক্রবার খাবার খাওয়ার পর শনিবার সকাল থেকে তার পেট ব্যথা শুরু হয়। পরে বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হলে তিনি বিজিসি ট্রাস্ট হাসপাতালে ভর্তি হন।

বর মাসুদের চাচা অ্যাডভোকেট আবু ছালেহ বলেন, বিয়ের খাবার খাওয়ার পর অনেকেরই ফুড পয়জনিং হয়েছে। বিজিসি ট্রাস্টসহ বিভিন্ন হাসপাতালে অনেকে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে কনেকেও বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল শুক্কুর কোম্পানি জানান, খবর পেয়ে তিনি বিজিসি ট্রাস্ট হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের দেখতে যান। সেখানে অনেকে ব্যক্তি ভর্তি রয়েছেন। অনেকে পটিয়া ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন।

চন্দনাইশ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আবু রাশেদ মো. নুর উদ্দিন বলেন, গত শুক্রবার বিয়ের খাবার খাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর থেকে আক্রান্ত হতে শুরু করে লোকজন। পাতলা পায়খানা, বমি ও পেট ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ১০ জন ভর্তি হয়েছেন। ২ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা রুমা ভট্টাচার্য্য বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে চন্দনাইশ হাসপাতালে ৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। পরীক্ষার পর জানা যাবে খাবারে কিছু মেশানো হয়েছে কিনা। এছাড়া পচা ও বাসি কিছুর কারণেও ফুড পয়জনিং হতে পারে।

চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিয়ের খাবার খেয়ে বর-কনেসহ বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। অতিরিক্ত গরমের কারণে অথবা অন্য কোনো কারণে ফুড পয়জনিং হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রদীপকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর
পরবর্তী নিবন্ধশিশুদের জন্য ফাইজারের ১ লাখ ৩৯ হাজার ডোজ টিকা চট্টগ্রামে