বিশ্ব বাজারে টিকে থাকতে হলে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে

তৈরি পোশাক শিল্প

| শনিবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে তাল মেলাতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন ও বাজার খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘যারা পোশাক উৎপাদন এবং তা রপ্তানি নিয়ে কাজ করছেন, তাদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে। বিভিন্ন দেশের পছন্দ ভিন্ন ভিন্ন হয়। বিষয়টি মাথায় রেখে নতুন পণ্য তৈরি করতে হবে।’ জাতীয় বস্ত্র দিবস২০২২ উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতে একটি ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফ্যাশন ডিজাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোন সময়ে কোন রং ও ডিজাইন ব্যবহার হবে, কোনটির চাহিদা বেশি, এটি একটি ঘূর্ণায়মান অবস্থা এবং প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। তাই এই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০২২ সালে বাংলাদেশের ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। সেদিক থেকে আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতিতে একটা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে তৈরি পোশাক খাত।’ পোশাকশিল্প নারীর কর্মসংস্থানে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই শিল্প গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে। প্রতিটি পরিবারও আর্থিক সক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে।’

পাটের জন্মরহস্য উন্মোচনে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বে আবার পাট ও পাটজাত পণ্যের কদর বেড়েছে। তবে পোশাকশিল্পকে যতটা প্রণোদনা দিয়ে থাকি, সেক্ষেত্রে পাট কৃষিপণ্য হওয়া সত্ত্বেও সেই সুযোগ পাচ্ছে না। সেই সুযোগ দেওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করি। আর পরিবেশ রক্ষার জন্য পাটজাত পণ্যের বিকল্প কিছু হতে পারে না।

এর যত উৎকর্ষসাধন হবে, তত বাজারজাতকরণ সহজ হবে। আমরা এদিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, আমাদের সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের কারখানাগুলো সবুজ কারখানার মানদণ্ডে বিশ্বে এগিয়ে আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, যুদ্ধ ও স্যাংশনের কারণে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা উপকরণের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি ভীষণভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। এরপরও কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে আমরা ব্যয় সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছি। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পদক্ষেপও সরকার নিয়েছে।

এ কথা স্বীকার্য যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত তৈরি পোশাক শিল্প, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও কৃষি খাতের ওপর দাঁড়ানো। রপ্তানি বৃদ্ধি, জিডিপিতে অবদান কিংবা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সকল ক্ষেত্রেই তৈরি পোশাক খাত দেশের জন্য আশীর্বাদ। তৈরি পোশাক শিল্পে প্রতিবছর বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হচ্ছে।

বিবিসি’র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে। এই সময়ে এই খাত থেকেই আয় হয়েছে ৩১৬ কোটি ডলার। এরপরেই রয়েছে হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়া জাত পণ্য, ওষুধ, বাইসাইকেল, প্লাস্টিক পণ্য, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য ইত্যাদি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রপ্তানি খাত থেকে যত বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে, তার ৮৫ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে।

কিন্তু তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর মালিকরা বলছেন, কোভিড পরবর্তী কার্যাদেশের কারণে গত বছর অনেক বড় অংকের রপ্তানি হয়েছিল। কিন্তু এই বছর সারা বিশ্ব জুড়েই অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়ায় তার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যে। তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর এক কর্মকর্তা বলছেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান মার্কেট হচ্ছে ইউএস এবং ইউরোপ। কোভিডের পরে ওরা প্রচুর পরিমাণে পোশাক নিয়েছে। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় গত বছর আমাদের এক্সপোর্ট ভলিউম বাড়তি ছিল।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের বেশিরভাগটাই নির্ভর করে বড় যে দুটি বাজার রয়েছে, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা, সেখানকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপরে। সামপ্রতিক যে বিশ্ব মন্দার যে প্রভাব ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে তা হয়তো আরও গভীর হবে। যেভাবে ফেডারেল রিজার্ভসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের সুদের হার বাড়িয়েছে, তাতে ভোক্তাদের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মূল্যস্ফীতির প্রভাব কমাতে সুদের হার বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো।

কিন্তু তার প্রভাব শেষ পর্যন্ত এসে পড়ে আমাদের মতো দেশের ওপরে, যাদের রপ্তানি এসব দেশের ওপরে অনেক বেশি নির্ভরশীল। তাদের ক্রেতারা যদি পণ্য কেনা কমিয়ে দেয়, তাহলে আমাদের রপ্তানিও কমে যাবে। কারণ আমরা যে ধরনের পণ্য রপ্তানি করি, তা মূলত এই ভোক্তাদের ওপরেই নির্ভরশীল।’

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি কিছুদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘অর্থনীতি গতিশীল রাখতে রপ্তানি বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

সে জন্য আগামী চার বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ১০ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করতে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি। সে জন্য যেসব চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো মোকাবেলার জন্য কাজ শুরু করেছি।’ বিশ্ব বাজারে অন্যান্য দেশের সঙ্গে টিকে থাকতে হলে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যে আহ্বান জানিয়েছেন, নতুন বাজার খুঁজতে, তার নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে