বিশ্বে গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা প্রশংসাযোগ্য

| সোমবার , ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বে গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা প্রশংসাযোগ্য। দুই ধাপ এগিয়ে নতুন গণতন্ত্র সূচকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৩তম। প্রথমবার সূচক প্রকাশের পর থেকে এখন পর্যন্ত এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো অবস্থান।

তবে সূচকে এখনো ‘হাইব্রিড রেজিম’ বা ‘মিশ্র শাসনের’ দেশের তালিকায় রয়েছে দেশটি। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) ‘গণতন্ত্র সূচক ২০২২’ প্রকাশ করে, তাতে এমন তথ্যচিত্র উঠে এসেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬৭ দেশ ও অঞ্চল নিয়ে গণতন্ত্র সূচক তৈরি করে ইআইইউ। দুই ধাপ উন্নতিতে বাংলাদেশের স্কোর বেঞ্চমার্ক ১০ পয়েন্টের মধ্যে ৫ দশমিক ৯৯। সবার শীর্ষে আছে নরওয়ে। স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশটির স্কোর ৯ দশমিক ৮১। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা নিউজিল্যান্ডের স্কোর ৯ দশমিক ৬১, তৃতীয় অবস্থানে ৯ দশমিক ৫২ স্কোর নিয়ে আছে ইউরোপের আরেক দেশ আইসল্যান্ড। তালিকায় চার ও পাঁচে আছে যথাক্রমে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। শূন্য দশমিক ৩২ স্কোর নিয়ে সবার নিচে অবস্থান করছে আফগানিস্তান। এর আগে ২০২১ ও ২০২২ সালে এ তালিকায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৫ ও ৭৬তম। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এ অঞ্চলে ৭ দশমিক ০৪ স্কোর নিয়ে সবার উপরে আছে পাশের দেশ ভারত। বাংলাদেশের আগে দুইয়ে থাকা শ্রীলংকার স্কোর ৬ দশমিক ৪৭। চতুর্থ অবস্থানে আছে ভুটান, পাঁচে নেপাল ও ছয়ে পাকিস্তান।

গণতন্ত্রের এমন চিত্রে বাংলাদেশ ইতিবাচক মনে হলেও মুদ্রার উল্টো পিঠও আছে। কারণ গত কয়েক বছরের মতো এবারও ‘হাইব্রিড রেজিম’ দেশের তালিকা থেকে বের হতে পারেনি দেশটি। ইআইইউ ‘হাইব্রিড রেজিম’ বলতে এমন সব দেশকে বোঝায় যেখানে গণতন্ত্র বিদ্যমান, নিয়মিত নির্বাচনও হয়। কিন্তু এসব দেশে চলে রাজনৈতিক দমনপীড়ন। বাধাগ্রস্ত হয় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এসব দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কম। পাশাপাশি দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার হয়।

২০০৬ সাল থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইআইইউ। এবার গণতন্ত্রের সূচক মূল্যায়নে পাঁচটি বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে। বিষয়গুলো হলো নির্বাচনি প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদ, সরকারের কার্যকারিতা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নাগরিক স্বাধীনতা। এসবের ওপর ভিত্তি করে দেশ ও অঞ্চলগুলোকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা ও কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা।

আমরা চাইব, গণতন্ত্রকে আরও গতিশীল এবং প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি প্রতিটি ক্ষেত্রের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলে বৈশ্বিক যে কোনো সূচকেই আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাবে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে জানা যায়, তাদের ভাষায় ২০১৮ সালে ‘পূর্ণ গণতন্ত্র’ ছিল বিশ্বের মাত্র ২০টি দেশে, যেখানে বিশ্বের মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ মানুষের বসবাস। এবারও ৯.৮৭ স্কোর নিয়ে তালিকার শীষের্ আছে নরওয়ে। শীর্ষ দশে আরও আছে আইসল্যান্ড, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, ডেনমাকর্, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও সুইজারল্যান্ড। যুক্তরাজ্য ও জামার্িন পূর্ণ গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় থাকলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের স্থান হয়েছে ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের’ দেশের তালিকায়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৫০ সাল নাগাদ ২৩তম অর্থনীতিতে উন্নত দেশে পরিণত হবে। আর ২০২৬ সালেই বাংলাদেশ ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ এবং ২০৪১ সালেই ‘উন্নত দেশ’ হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তার বড় প্রমাণ হলো গত কয়েক বছর ধরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি দেশের একটি আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতু উদ্বোধন দুটিই উন্নয়নের মাইলফলক। সফলভাবে কারোনা মহামারি মোকাবিলা, শিক্ষা, যোগাযোগ অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নারীশিক্ষা, চাকরিজীবীদের বেতনভাতা শতভাগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে বই বিতরণ, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তালাকপ্রাপ্ত নারীদের সহায়তা, অটিজম, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমরা যদি কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে চাই, তাহলে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন জরুরি, তেমনি অপরিহার্য হলো একটি সুস্থ ও সবল গণতান্ত্রিক পরিবেশ। পথের বাধাগুলো দূর করতে পারলে বাংলাদেশ শুধু দক্ষিণ এশিয়া কেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গেও সমানতালে পাল্লা দিতে পারবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে