বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে নিমন্ত্রণ এসেছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে । অস্ট্রেলিয়া ছাড়া সব মহাদেশেই তিনি পদার্পণ করেছেন। যদিও সর্বত্র তাঁর যাওয়া হয়নি। কখনো বার্ধক্যের প্রতিবন্ধকতা, কখনো দুর্গমতা, কখনো সময়ের অভাবে বা অন্য কোনো কারণে । কবিগুরু অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন লেখক এবং দার্শনিক হিসাবে শুধুমাত্র ভারতেই নয় সারা বিশ্বে প্রবল সাড়া ফেলেছিলেন। পশ্চিমের সাথে রবি ঠাকুরের যোগাযোগ এবং তার ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু তাঁর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে তেমন কোনো লেখাজোখা চোখে পড়ে না বললেই চলে। আর সেটা হল ইরানের সাথে তার নিবিড় সংযোগের বিষয়। ভারতের সাথে ইরানের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আড়াই হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থক। তিনি প্রেরণা, জ্ঞান লাভের জন্য এশিয়ার অন্যান্য দেশের দিকেও দৃষ্টি দিতেন। তিনি ইরানীদের উপনিবেশিকতা বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করেছিলেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর ইরানী সংস্কৃতির ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। তাঁর দার্শনিক পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ফার্সি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন এবং ইরানের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা ছিল। তিনি তাঁর প্রতিদিনের প্রার্থনায় উপনিষদ পাঠ করার পাশাপাশি পারস্যের কবি হাফেজের কবিতাও আবৃত্তি করতেন। তাই কিশোর বয়সেই ইরানি কবিদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটেছিল স্বাভাবিকভাবেই। পারসিকদের প্রাচীন ধর্ম জরথুষ্ট্রবাদের প্রতিও ঠাকুরের অগাধ শ্রদ্ধা ছিল। তিনি জরথুষ্ট্রকে “মহান অগ্রগামী নবী” বলে প্রশংসা করেছিলেন। তিনি জরথুস্ট্রিয়ান এবং হিন্দু ধর্মীয় নীতি–নৈতিকতার মধ্যে অনেক সাদৃশ্য নির্দেশ করেছিলেন। বিশেষ করে প্রার্থনা এবং বলিদানের ক্ষেত্রে। ইরানে জরথুষ্ট্রীয় ধর্ম এখনও বিদ্যমান এবং ইরানের জরথুষ্ট্রিয়ানরা সামাজিক, অর্থনৈতিক বিষয় ইত্যাদি নির্বিশেষে ইরানের সংসদ মজিলিসে শুরায় প্রতিনিধিত্ব করার মাধ্যমে ইরানের শাসন ব্যবস্থায় ভূমিকা পালন করে। এইচ কে শেরওয়ানির “স্টাডিজ ইন দ্য ফরেন রিলেশনস্ অফ ইন্ডিয়া ” বইয়ের ডক্টর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ইরান শিরোনামের একটি অধ্যায়ে লেখক ডঃ মোহাম্মদ তাগি মোক্তাদারি একটি আকর্ষণীয় বিষয় উত্থাপন করেছেন। তিনি লিখেছেন: মুজাফরুদ্দিন শাহ কাজারের শাসনামলে কলকাতায় ইরানের অনারারি কনসাল ছিলেন সুমার কুমার ঠাকুর নামে ঠাকুর পরিবারের একজন দূরের আত্মীয়। এই ঘটনা থেকে বোঝা যায় ইরানের সঙ্গে ঠাকুর পরিবারের ঘনিষ্ঠতা কতোটা নিবিড় ছিল।
যেহেতু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রাচ্যের প্রথম ব্যক্তি যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন। তাই ইরানী অভিজাত শ্রেণি তাঁর সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। কর্নেল মোহাম্মদ তাকি খান পেসিয়ান ছিলেন ইরানের একজন বিখ্যাত রাজনৈতিক সংস্কারক ও নামকরা একজন অফিসার। বার্লিনে থাকাকালীন ১৯১৮ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন।
১৯৩১ সালে ইরানের সংবাদপত্রগুলি রবি ঠাকুর সম্পর্কে নিবন্ধ প্রকাশ করতে শুরু করে এবং জনপ্রিয় এই ভারতীয় লেখক সম্পর্কে জানার সুযোগ বৃদ্ধি করে। ১৯৩২ সালের এপ্রিল মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথমবার ইরান ভ্রমণ করেছিলেন। বুশেহরে অবস্থান করার পর তিনি শিরাজ ভ্রমণ করেন এবং সেখানে ফার্সি মহান কবি হাফিজ ও সাদির কবর পরিদর্শন করেন। সেখানে পার্সপোলিসের প্রাচীন স্থাপনাও পরিদর্শন করেন রবি ঠাকুর। তিনি ইসফাহান এবং তেহরানও ভ্রমণ করেন। যেখানেই যাত্রাবিরতি করেছেন সেখানেই তিনি বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় নেতা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সাধারণ মানুষের সাথে দেখা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে তার আলাপ আলোচনায় ভারত ও ইরানের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সংযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ৭০তম জন্মদিনে তেহরানে গিয়েছিলেন । বিখ্যাত ইরানী কবি মালিক আল–শোয়ারা বাহার (ডিসেম্বর ১০, ১৮৮৬– ২২ এপ্রিল, ১৯৫১) তেহরানে তাঁকে স্বাগত জানাতে গিয়ে ঠাকুরকে উৎসর্গ করে তাঁর লেখা একটি দীর্ঘ কবিতা পড়লেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবি আলী দাশতি, রশিদ ইয়াসামি, আব্বাস ইকবাল, সায়িদ নাফিসি এবং নাসরুল্লাহ ফালসাফির মতো সেই সময়ের বিখ্যাত ইরানী পণ্ডিতদের সাথেও পরিচিত হয়েছিলেন। একইভাবে রবীন্দ্রনাথ প্রথমে মাসুদিয়া প্রাসাদের হলে এবং তারপর ইরানী সাহিত্য সমিতিতে বক্তৃতা দেন। এর মাত্র দুই বছর পর ঠাকুর দ্বিতীয়বার ইরান ভ্রমণ করেন। এই সময় এসেছিলেন ইরানী মহাকবি ফেরদৌসির সহস্রতম জন্মবার্ষিকীতে ফেরদৌসির সমাধিস্তম্ভ উন্মোচন অনুষ্ঠানে। ইরানে তাঁর এই সফরের ঘটনাটি মিডিয়ায় খুব বেশি প্রচার হয় নি। ইরান সফরের সময়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতে ফার্সি সাহিত্য পড়াতে একজন অধ্যাপক পাঠানোর অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর অনুরোধে ইব্রাহিম পোরদাউদ নামের একজন ইরানী পণ্ডিতকে ভারতে পাঠানো হয়েছিল, যেখানে তিনি প্রাচীন ইরানী সাহিত্য শিক্ষা দিতেন। তিনি জিয়াউদ্দিন নামের স্থানীয় শিক্ষকের সহায়তায় ঠাকুরের অনেক কবিতা বাংলা থেকে ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেন এবং ১৯৩৫ সালে কলকাতায় সংকলনটি প্রকাশ করেন। ইরানী নওরোজ উদযাপনের জন্য রবীন্দ্রনাথ জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি ইরানি সংস্কৃতি, ইরানি সভ্যতা, ইরানি জনগণ এবং তাদের আতিথেয়তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি দুইদেশ এবং দুই সভ্যতার মধ্যে আধ্যাত্মিক সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছিলেন।
দু’দেশের মধ্যে সদ্য প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক সম্পর্ক–যার প্রেক্ষাপট ছিল কয়েক হাজার বছরের–যথারীতি দৃঢ় ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর ইরান ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখে। ভারতও ১৯৭৯ সালে পশ্চিমা মদদপুষ্ট পাহলাভি রাজবংশের পতনের ফলে ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর ইরানের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখে। ২০১১ সালে ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার সাবেক স্পিকার মীরা কুমার ইরান সফর করার সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার একটি ফার্সি সংস্করণ উন্মোচন করা হয় ।
ইরানের সংবাদপত্রে কবিগুরুর পারস্য সফরের বিষয়ে প্রতিবেদন ও প্রতিফলন সমসাময়িক ভারতীয় সংবাদপত্রের তুলনায় অনেক বেশি ছিলো।
১৪ এপ্রিল, ১৯৩২। বৃহস্পতিবার। ২৫ ফার্ভার্দিন ১৩১১। সংখ্যা : ১৫৮৪, ৬ষ্ঠ বর্ষ। এইদিনে দৈনিক এত্তেলাতে’র ২য় পৃষ্ঠায় “আখবারে দাখেলী” (অভ্যন্তরীণ সংবাদ) অংশে ১ম কলামের ২য় সংবাদ ছিলো “ভুরুদে ফিলসোফিয়ে হেন্দী” (ভারতীয় দার্শনিকের আগমন)। এতে তারযোগে প্রাপ্ত খবর হিসেবে বলা হয়েছে : প্রখ্যাত ভারতীয় দার্শনিক ও কবি ডঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কন্যা (?), পুত্রবধূসহ একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে গতকাল (১৩ এপ্রিল) বন্দর নগরী বুশেহর পৌঁছেছেন। তাঁর তাথে অগায়ে (জনাব) মেহের মির্চী এবং বোম্বেতে নিযুক্ত ইরানী কন্সাল জেনারেল অগায়ে কেইহানও রয়েছেন। ইরান সরকারের পক্ষ হতে বুশেহর প্রদেশের গভর্নর তাদেরকে স্বাগত জানান এবং যথোপোযুক্ত সম্মান সহকারে তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন। এখান থেকে আজ (১৪ এপ্রিল) ডঃ ঠাকুর শিরাজ যাবেন এবং সেখানে দু’একদিন অবস্থানের পর ইস্ফাহান হয়ে আগামী সপ্তাহে রাজধানী তেহরান পৌঁছাবেন।
একই কালামে রবীন্দ্রনাথের পারস্য সফর সম্পর্কিত পরবর্তী খবর ছিলো ‘মোকাদ্দামাতে পাজেরায়ী’
(আপ্যায়নের প্রস্তুতি): এতে উল্লেখ রয়েছে প্রখ্যাত ভারতীয় কবি ও দার্শনিক “ডক্তর তাগোর (ডঃ ঠাকুর) এবং তাঁর সঙ্গী–সাথীদের থাকা–খাওয়া ও আদর আপ্যায়নের জন্য ‘ওজারাতে মায়ারাফের’ (বর্তমানে ধর্ম–সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়) পক্ষ হতে উপযুক্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে কবিকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুবাদ বিভাগের সদস্য জনাব আসাদীকে তাঁর অনুবাদক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। ‘আজেমাত ‘ব’ বান্দারে বুশেহর’ (বুশেহর বন্দরে আগমন) শীর্ষক অপর এক সংবাদে বলা হয় : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফারুঘীর (ফারুকী) ভাই মীর্জা আবুল হাসান খান ফারুকী, ‘মালেকুশ শোয়ারা’ (কবিকুল সম্রাট) বাহারসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ডঃ ঠাকুরকে অভ্যার্থনা জানানো এবং তার সাথে সাক্ষাৎ ও আলোচনার উদ্দেশ্যে বুশেহর পৌঁছেছেন। তারা ডঃ ঠাকুরের সফরসঙ্গী হয়ে রাজধানীতে যাবেন। একই দিনের ‘এত্তেলাতে’র এ অংশে ‘মাহালে জাদীদে আঞ্জুমানে বালেদী’ (সাহিত্য সংস্থার নতুন ভবন) শিরোনামের সংবাদে বর্ণিত হয়েছে: তেহরানস্থ ‘আঞ্জুমানে আদাবিয়ে ইরানে’ (ইরান সাহিত্য সংসদ ভবন) এবং ‘বাগে (গার্ডেন) নায়ারেহদ্দৌলেহ (নিরুদ্দৌলা)’ সংস্কার ও মেরামত করা হয়েছে। ডঃ ঠাকুর ও তাঁর সফরসঙ্গীরা এখানেই অবস্থান করবে। এ ভবনের মিলনায়তনটি এ সময়ে ডঃ ঠাকুরের সাথে সাক্ষাৎ–প্রার্থীদের আলোচনা এবং প্রাথমিক আপ্যায়নের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হবে। ১৬ এপ্রিল ১৯৩২। শনিবার। ২৭ ফার্ভার্দিন ১৩১১। সংখ্যা : ১৫৮৫: ষষ্ঠ বর্ষ । এইদিন প্রথম পৃষ্ঠায় ১ম কলামে “আখবারে দাখেলী” সংবাদে বর্ণিত হয়েছে : প্রখ্যাত ভারতীয় দার্শনিক ‘রাবীন্দারানাত তাগোর’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) ভ্রমণ–সঙ্গীদের নিয়ে শিরাজ পৌঁছেছেন। ভারতীয় জরদুস্তিয়ান (পার্সী) সম্প্রদায়ের নেতা স্যার দীনশাহ্ (ইরানী) জারাদাস্তী–ও স্বদেশ ইরানের প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ডঃ ঠাকুরের সফরসঙ্গী হয়েছেন এবং ভ্রমণের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করছেন। তাশকীলে শারকাতে বরায়ে কারহায়ে ফান্নী’ (কারিগরি সংস্থা প্রতিষ্ঠা) শীর্ষক এ অংশের অপর এক সংবাদে বলা হয়েছে: ডঃ ঠাকুরের জ্ঞান–বিজ্ঞান (এলমিয়েহ) মূলক মিশনে যোগ দেয়া এবং তাঁর সফরসঙ্গী হয়ে তেহরান যাওয়ার জন্যে আরো ৫ জন বিশিষ্ট ভারতীয় ইরানে পৌঁছেন। এরা ভারতের বিভিন্ন পার্সী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ও সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৩৩৯ এর ২৫ বৈশাখ ইরানে পালিত হয় তাঁর জন্মদিন। পারস্যে এই জন্মদিনের স্মৃতি রবীন্দ্রনাথের জীবনে এক নতুন করে পাওয়ার ইতিহাস। এর আগে এর জন্মদিন পালিত হয়েছে নিজ দেশে। এবারই প্রথম জন্মদিন পালিত হলো দেশের বাইরে। নানা বর্ণের ফুলে ফুলে ভরে গেছে কবির চারদিক। ফুলের মধ্যে আবার গোলাপের প্রাধান্য। আসছে নানারকম উপহার। সরকারের কাছ থেকে এসেছে পদক ও ফরমান। বিকেলে নিমন্ত্রণ ছিল শিক্ষা বিভাগের মন্ত্রীর বাসভবনে। সেখানে দেশের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন বিদেশের রাষ্ট্রপ্রতিনিধিরা। আবেগতাড়িত রবীন্দ্রনাথ একে মনে করছেন নিজের দ্বিতীয় জন্ম হিসেবে। ২৫ বৈশাখ ১৩৩৯–এ লেখা একটি কবিতায় তিনি এই দিনটির আবেগকে রেখেছেন। ‘পারস্যে জন্মদিন’ শীর্ষক কবিতায় তিনি লিখলেন–ইরান, তোমার যত বুলবুল তোমার কাননে যত আছে ফুল বিদেশি কবির জন্মদিনেরে মানি শুনলো তাহারে অভিনন্দন বাণী। ইরান, তোমার বীর সন্তান, প্রণয়–অর্ঘ্য করিয়াছে দান আজি এ বিদেশি কবির জন্মদিনে, আপনার বলি নিয়েছে তাহারে চিনে। ইরান, তোমার সম্মানমালে নব গৌরব বহি নিজ ভালে সার্থক হলো কবির জন্মদিন। চিরকাল তারি স্বীকার করিব ঋণ তোমার ললাটে পরানু এ মোর শ্লোক ইরানের জয় হোক। রবীন্দ্রনাথ তার ‘জাপানে–পারস্যে’ গ্রন্থের ‘পারস্যে’ অংশে (যা পরে আলাদাভাবে মুদ্রিত) তাঁর পারস্য যাত্রা ও সেখানে অবস্থানের বিস্তারিত লিখেছেন। কিন্তু পারস্যে রবীন্দ্রচর্চা বিষয়ে তেমন কিছু তাঁর গ্রন্থে নেই। আনিছুর রহমান স্বপন দীর্ঘদিনের ইরান বাসকালে সেখানকার মহাফেজখানার ধুলো ঘেঁটে সেইসব বিষয় তুলে এনেছেন ‘পারস্যে রবীন্দ্রচর্চা’ নামের বইয়ে। মূল বইটিকে তিনি তিন ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথম ভাগে আছে পারস্যে রবীন্দ্রচর্চা, দ্বিতীয় ভাগে পারস্যের পত্রিকায় রবির সফর এবং তৃতীয় ভাগে আছে পারস্যে রবীন্দ্রনাথের দেয়া সাক্ষাৎকার। প্রথম ও দ্বিতীয় অংশের শেষে যুক্ত টিকা–টিপ্পনি অংশ লেখকের বক্তব্যকে অনেক সহজবোধ্য করে তোলার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে অনেক অজানা তথ্যের বাতায়ন খুলে দিয়েছে সাধারণ পাঠকের সামনে। রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরের বছর রবীন্দ্রনাথের একটি নির্বাচিত কাব্য সঙ্কলন ‘বাগবান’ (মালিনী) নামে ফার্সিতে অনূদিত ও প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথের প্রথম পারস্য বিজয়ের সংবাদ দিয়ে শুরু হয়েছে বইটি।
susubrata2022@gmail.com