বিপর্যয় ঠেকাতে দরকার সমন্বিত পদক্ষেপ

চামড়া শিল্প

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১ মে, ২০২১ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চলতি ২০২১ সালের মধ্যে চামড়া খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০১৭ সালে চামড়াকে ‘প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করেছিল সরকার। কিন্তু এরপর থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানি খাত চামড়া শিল্পে আয় শুধু কমছে আর কমছে। নানামুখী সংকটে পড়ে বড় বিপর্যয়ের মুখে এই শিল্প। রাজধানী ঢাকার ট্যানারিগুলো যুদ্ধ করে টিকে থাকলেও চট্টগ্রামের অবস্থা নাজুক। ২২টি ট্যানারি থেকে বর্তমানে দুইটিতে এসে ঠেকেছে। এর মধ্যে একটি যায় যায় করছে।
সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে বিশ্বে কৃত্রিম চামড়া বড় বাজার দখল করলেও চামড়া ও চামড়াজাতপণ্যের ২২০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজার রয়েছে। এই বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব এক সময় বেশ ভালো থাকলেও এখন তা কমতে কমতে অর্ধ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছিতে নেমে এসেছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের উৎকৃষ্ট মানের চামড়ার সুনাম বহু পুরনো। এই সুনাম ব্যবহার করে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাতপণ্যের বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। প্রতিবছরই চামড়া থেকে রপ্তানি আয় কমছে।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)- থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়া শিল্পের রপ্তানি আয় ছিল ১১৬ কোটি ৯ লাখ ৫ হাজার ডলার। পরের বছর (২০১৬-১৭) ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে রপ্তানি আয় হয় ১২৩ কোটি ডলার। রপ্তানি আয় কিছুটা বাড়ায় এই খাত নিয়ে আশান্বিত হন সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারক মহল। ২০১৭ সালে চামড়া খাতকে প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা দেয়া হয় এবং ২০২১ সালের মধ্যে চামড়া খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার বা ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে এর পর থেকেই চামড়া শিল্পে বিপর্যয় আরো ঘনীভূত হয়। রপ্তানি আয় ক্রমান্বয়ে কমে তলানিতে ঠেকার উপক্রম হয়েছে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে চামড়া শিল্পের রপ্তানি আয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ১ হাজার ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ শিল্পের রপ্তানি আরও কমে হয় ১০১ কোটি ৯৭ লাখ ৮ হাজার ডলার, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ০৬ শতাংশ কম। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া শিল্পের রপ্তানি আয় আরো কমে হয় ৭৩ কোটি ৯৩ লাখ ৯ হাজার ডলার। চলতি বছরের মধ্যে রপ্তানি আয় পাঁচশ’ কোটি ডলারে নেয়ার লক্ষ্য থাকলেও এবছর আয় অর্ধ বিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলারের কাছাকাছিতে নেমে আসার আশংকা করা হচ্ছে। চামড়া খাত থেকে আয় কমলেও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। বেড়েছে আয়ও। চলতি অর্থ বছরে চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে হলে ইপিবি সূত্র আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২ কোটি পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়। এর বেশির ভাগই সংগৃহীত হয় কোরবানি ঈদে। প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ কোটি ফুট চামড়া পাওয়া যায়। এ চামড়া যথাযথভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে রপ্তানি করা গেলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন নয়। কিন্তু নানামুখী সংকটে পড়ে গত কয়েক বছর ধরে চামড়া সংগ্রহ থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ সবই ব্যাহত হচ্ছে। চোরচালানের মাধ্যমে প্রচুর চামড়া চলে যায় ভারতে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রপ্তানি খাতে।
কাঁচা চামড়া সংগ্রহ থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, নজরদারির বিশেষ পদক্ষেপের উপর গুরুত্বারোপ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এই খাতটিকে খাদের কিনারা থেকে ফিরিয়ে আনতে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজার পুনরুদ্ধারে প্রতিটি দূতাবাসকে কাজে লাগাতে হবে। দেশের অনেক বড় একটি সম্ভাবনাকে এভাবে নষ্ট হতে দেয়া ঠিক হবে না বলে সূত্র মন্তব্য করে।
চট্টগ্রামে চামড়া খাতের অবস্থা অতি নাজুক বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একজন ব্যবসায়ী বলেন, স্বাধীনতার পরেও চট্টগ্রামে ২২ টি ট্যানারি ছিল। চট্টগ্রামের চামড়া চট্টগ্রামেই প্রক্রিয়াজাত হয়ে রপ্তানি হয়ে যেতো। এখন এখানে মাত্র দুইটি ট্যানারি রয়েছে। একটির অবস্থা খুবই নাজুক। চট্টগ্রামের চামড়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের ঢাকার পথ চেয়ে বসে থাকতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যবসায়ী বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরের বিশাল আয়ের কার্যত বড় অংশই বিদেশে চলে যায়। ব্যাক টু ব্যাক এলসি সামাল দিয়ে খুব সামান্য অংশই দেশে থাকে। চিংড়ি খাতেও বড় বিনিয়োগের পর আয় জুটে। বিনিয়োগ এবং মাছের বাজারদর বাদ দিলে এই আয়ও কমে যায়। চামড়া এমন একটি খাত যেটি প্রতি কোরবানির বাই প্রোডাক্ট হিসেবে এমনিতেই আসছে। প্রতিটি পশু জবেহ করার সাথে সাথে চামড়া পাওয়া যায়। তাই এই চামড়া খাতকে ঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারলে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি মোটেই কঠিন নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশালিসি বৈঠকেই শাশুড়িকে কুপিয়ে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধআমার সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করেছে মামুনুল : জান্নাত