বিনিয়োগ আকর্ষণেও বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনাময়

| সোমবার , ২৭ জুন, ২০২২ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের সামপ্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও এর সামাজিক রূপান্তরকে চমৎকার এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোত্তম বলে উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তানের ড. মাহবুবুল হক বাংলাদেশের মানব উন্নয়নের অগ্রগতিকে বিস্ময়কর বলে উল্লেখ করেছেন। বিশ্বব্যাংকের মতে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের পূর্বাভাসে বলেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ নেক্সট ইলেভেন সম্মিলিতভাবে ইউরোপিয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশকে ছাড়িয়ে যাবে। লন্ডনের জাতীয় দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, ২০৫০ সালে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির বিচারে পশ্চিমা দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়া মুডি’স ও স্ট্যান্ডার্ড এন্ড পুওর’স গত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশের সন্তোষজনক অর্থনৈতিক রেটিং দিচ্ছে। তাদের প্রক্ষেপণও সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের ইঙ্গিত করে। মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিসের মূল্যায়নে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এক বছরে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ ১০০ মিলিয়ন ডলার বা ৮০০ কোটি টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (আঙ্কটাড)। সংস্থাটির ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্ট রিপোর্ট ২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এসব পূর্বাভাস ও তথ্য প্রমাণ করে, বাংলাদেশের সামনে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। এ সুসংবাদ আমাদের জন্য বড় পাওয়া।

বলা যেতে পারে বিনিয়োগ আকর্ষণেও বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনাময়। আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি ইতিবাচক। মূল্যস্ফীতিও খুব দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত। বিদেশী ঋণে খেলাপি নেই। সামগ্রিক সূচকেই বাংলাদেশের অবস্থান সুসংহত। কিন্তু আমাদের অবকাঠামো ঘাটতি রয়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা মত দিয়েছেন। এছাড়া আছে সাংঘর্ষিক নীতি, আইনি কাঠামোতেও রয়েছে দুর্বলতা। সার্বিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্যও যথেষ্ট নয়। এসব সমস্যা দূর করতে পারলে দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা সম্ভব।

এছাড়া শিল্প খাতে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্য সেবাগুলোর সংযোগ নিশ্চিতকরণ, করপোরেট ট্যাক্স কমানো, প্রতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বিদেশে বাংলাদেশের ইমেজ বাড়ানোর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা দরকার। সবকিছু ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে উপস্থাপনে সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর দরকার অছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বিনিয়োগ আরো বাড়বে উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, নতুন বছরের জন্য অনেক বিনিয়োগের আশ্বাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে যদি অর্ধেকও বিনিয়োগ করা হয়, তাহলে চলতি বছর বিদেশি বিনিয়োগ হবে আশাতীত। কারণ আগের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, ব্যবসার পরিবেশ উন্নত ও সেবার মান বেড়েছে। তাই বিনিয়োগে বিদেশিরা আগ্রহী হচ্ছে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে প্রথমেই দরকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ। যার প্রধান হাতিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। তিনি বলেন, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা, কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলে বিনিয়োগ আসবেই। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। বিদেশীরা দেখবে বিনিয়োগের পরিবেশ। সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলেই বিদেশীরা বিনিয়োগে আসবে।

তবে অর্থনীতির প্রখ্যাত পণ্ডিত আলবার্ট হারশম্যান বলেছেন যে, অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলোকে চিহ্নিত করে সে সকল ক্ষেত্রে বেশুমার বিনিয়োগ করে জোগান বাড়ালে অর্থনীতির চাকা সচলতর হতে বাধ্য। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এ সকল প্রতিবন্ধকতার একটি হলো অবকাঠামোর অপ্রতুলতা, যেমন যাতায়াত, বন্দর, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিকম, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।

তাই বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ আরো উন্নত করতে হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বেসরকারি খাতের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের রিজার্ভ এবং মাথাপিছু আয় বেড়েছে। জিডিপি সন্তোষজনক। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করে অবকাঠামো গড়ে উঠলে দেশ হবে অপার সম্ভাবনার। পিছনে তাকানোর সময় থাকবে না। অর্থনৈতিকভাবে পাল্টে যাবে দেশ। উন্নয়নের সেই সম্ভাবনাই হাতছানি দিচ্ছে আজ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে