স্বাধীনতা অর্জন বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়ের নাম। সুদীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত হয়েছে বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। আমাদের মহান মুক্তি সংগ্রামের সাথে জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির অসীম বীরত্ব, আত্মত্যাগ, আর অদম্য সাহসিকতার ইতিহাস। স্বাধীনতা প্রাপ্তি সম্পর্কে যে কথাটি সবচেয়ে বেশি বলা বা লিখা হয় তা হল- ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। তবে বহুল ব্যবহৃত বা চর্চিত এ বাক্যটিতে ‘বিনিময়’ শব্দটির প্রয়োগ নিয়ে অনেকের আপত্তি রয়েছে। বিনিময় শব্দের আভিধানিক অর্থ হল বদল। সহজভাবে বললে বিনিময় হল একটির পরিবর্তে অন্যটি গ্রহণ বা আদান-প্রদান। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর সাথে আমাদের কোনো কিছু বিনিময় হয়নি। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতা লাভের জন্য এদেশের মানুষকে সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশা বয়ে বেড়াতে হয়েছে, স্বজন হারানোর বেদনায় মানুষের হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে জীবন বলিদান ও অসংখ্য মা-বোনকে সম্ভ্রম হারাতে বা বিসর্জন দিতে হয়েছে। মূলত বাঙালি জাতির অকৃত্রিম দেশপ্রেম, অদম্য সাহসিকতা, মাতৃভূমিকে শোষণমুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় আর বীরত্বের কাছে পরাজিত হয়ে হানাদার বাহিনী অবনত মস্তকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে। বাঙালি জাতিকে দমন-নিপীড়ন ও নিঃশেষ করে দেওয়ার সর্বাত্নক শক্তি প্রয়োগ ও কূটকৌশলের আশ্রয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নিয়েছিল। কিন্তু বীর বাঙালিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তাই আমাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তি কারো করুণা বা দান নয়। কোনো কিছুর বিনিময় নয়। এটি আমাদের বিজয়। সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। এক্ষেত্রে বিনিময় শব্দটির ব্যবহার ত্যাগের এই মহিমাকে কিছুটা হলেও বিবর্ণ করে। তাই ‘ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং দুই লক্ষ মা বোনের আত্মত্যাগে বা সম্ভ্রম বিসর্জনে অর্জিত স্বাধীনতা’ বললে বাক্যটি অনেক বেশি অর্থবহ হয় এবং তা প্রকৃত সত্যের সাক্ষ্য দেয়।
লেখক: শিক্ষক