বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা : প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে

| শুক্রবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৫৩ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস মহামারি পরবর্তী মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও ১০ লাখ বিদেশি কর্মী প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন দেশটির অ্যাসোসিয়েশন অব এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির প্রেসিডেন্ট ফু ইয়ং হুই। গত মঙ্গলবার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মালয়মেইলে প্রকাশিত এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়। ফু ইয়ং হুই বলেন, বিদেশি শ্রমিকদের চাহিদা বেশ কয়েকটি খাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নির্মাণ, কৃষি, সার্ভিস ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে। করোনাপরবর্তী দেশের অর্থনীতি সচল করার জন্য এটি অপরিহার্য। তিনি বলেন, ‘আমি বিদেশি কর্মীদের ঘাটতি মেটাতে স্বরাষ্ট্র ও মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করব। সরকারকে অবশ্যই বিদেশি কর্মী নিয়োগের বিদ্যমান পদ্ধতি শিথিল করতে হবে।’

করোনার আগে মালয়েশিয়ায় প্রায় ২২ লাখ বিদেশি কর্মী ছিল। ২০২০ সালে সরকারের করোনাকালীন বিধিনিষেধে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা কমে প্রায় ৯ লাখে নেমে আসে। এখন নির্মাণখাতে অভাব রয়েছে প্রায় তিন লাখ শ্রমিকের। এ ছাড়া কৃষিতে প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার শ্রমিক প্রয়োজন। সার্ভিস সেক্টরেও প্রায় এক লাখ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ বিদেশি শ্রমিক জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন বলে জানান ফু ইয়ং হুই। এর আগে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল জানান, মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ১৪ লাখ বিদেশি কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে উৎপাদন খাতে রয়েছেন ৫ লাখ ১০ হাজার ৫০৭ জন, নির্মাণে ৩ লাখ ৮ হাজার ৮৮৬ জন, পরিষেবায় ২ লাখ ৮ হাজার ৪২৫ জন এবং কৃষিতে ১ লাখ ১০ হাজার ৫৯৮ জন।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। যদিও অর্থবছরের শুরুতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, নতুন অর্থবছরে সরকার ৮ লাখ ১০ হাজার কর্মীকে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে।

সম্প্রতি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, গত ৪৭ বছরের মধ্যে চলতি বছরে জনশক্তি রপ্তানিতে রেকর্ড হয়েছে। এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪ জন।

জনশক্তি কর্মসংস্থা ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয় ১৯৭৬ সাল থেকে। ওই বছর ৬ হাজার ৮৭ জন কর্মী বিদেশে যান। তারপর থেকে প্রায় প্রতি বছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়মিত জনশক্তি রপ্তানি হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মী গেছেন ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪ জন। ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান প্রস্তুত হলে ১১ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দীর্ঘ ৪৭ বছরের মধ্যে শুধুমাত্র ২০১৭ সালে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে আগের রেকর্ড ছিল। চলতি বছর ছাড়া ২০১৭ সালেই শুধু ১০ লাখের মাইলফলক পার করেছিল বাংলাদেশ। সেই বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন কর্মী গিয়েছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জনশক্তি রপ্তানিতে মধ্যপ্রাচ্য নির্ভরতা কাটানোর চেষ্টা চলছে। এর ফলে বিকল্প শ্রমবাজার হিসেবে ইউরোপকে ভাবছে সরকার। যুগোস্লাভিয়া, আলবেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও রোমানিয়ায় কিছু সংখ্যক কর্মী ইতিমধ্যে গেছেন। এই দেশগুলো ভবিষ্যতে বিপুল সংখ্যক কর্মী নেবে। এ ছাড়া গ্রিস, মাল্টা, আলবেনিয়া ও সার্বিয়াও বাংলাদেশি কর্মী নেবে বলে জানিয়েছে। সমপ্রতি ইতালির সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে চুক্তি হয়েছে। এ ছাড়াও, মধ্য ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর দিকেও নজর রয়েছে সরকারের।

উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং হংকংয়ে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টি ভাবছে সরকার। ফলে সামনের দিনগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলছেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) করার চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে বৈধভাবে কর্মী পাঠানো যায়। এর অংশ হিসেবে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের ভাষা শেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে জাপানে বৈধভাবে কর্মী প্রেরণের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্টদূত ইতো নাওকি। বৈঠকে জাপান বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে কর্মী নিতে রাজি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জাপান ২০২৫ সালের মধ্যে সারা বিশ্ব থেকে ৫ লাখ কর্মী নেবে। জাপানী ভাষা জানলেন অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই বাজার বাংলাদেশকে ধরতে হবে।

বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা ইতিবাচক। তাদের এ প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে