দশমী কথাটির সাধারণ অর্থ খুবই সহজ। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে পিতৃ গৃহ ছেড়ে কৈলাসে স্বামী গৃহে পাড়ি দেন দেবী। আর এই পাড়ি দেওয়ার সময় বা তিথিকেই বিজয়া দশমী বলা হয়। যখন মায়ের পূজা শেষ হয় তখন মায়ের মূর্তি নামক প্রতিমাকে বিসর্জন দেওয়ার আয়োজন করা হয়। তাই ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে ধারণা দেওয়া যায় যে, বিসর্জন মানে দেবী বা কোনো দেবের ধ্বংস নয়, বরং মাটির প্রতিমাকে মুক্ত করা। অর্থাৎ তিনি যেখান থেকে এসেছিল তাকে সেখানে চলে যেতে দেওয়ার ব্যবস্থা। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিসর্জন দেওয়া হয় না। নিজ গৃহেই প্রতিমাকে সংরক্ষিত রাখা হয়। বিজয়া দশমী নিয়ে অনেক পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে। দশমীর আগে বিজয়া শব্দটির ব্যবহারের পেছনে কিছু দৃষ্টান্ত রয়েছে। পুরানে মহিষাসুর বধ কাহিনীতে বলা হয়েছে মহিষাসুরের সঙ্গে নয় দিন নয় রাত্রি যুদ্ধ করার পর দশম দিনে তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিলেন দেবী দুর্গা। তাই তাকে বিজয়া বলা হয়। তাছাড়া শ্রী শ্রী চণ্ডিতে বলা হয় দেবীর আবির্ভাব হয় আশ্বিন মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশীতে। পরে শুক্লা দশমীতে মহিষাসুর বধ করেছিলেন তিনি। তাই বিজয়া দশমী এই বিজয়কেই চিহ্নিত করে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে আনন্দের এক শুভ সূচনা এই বিজয়া দশমী। ঘরে ঘরে মিষ্টিমেলা, ভালো রান্নার আয়োজন নিমন্ত্রণ করার এক মহাধুম পরে এই দিনে। ভক্তবিন্দু দলে দলে এসে অঞ্জলি দেন। দেবী দুর্গার বিদায়ের সুরের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সিঁদুর উৎসব। ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনির মাধ্যমে মণ্ডপে মণ্ডপে নারীরা সিঁদুর দানে মেতে ওঠে। বিবাহিত নারীরা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে দেন এই দিনে। দুর্গা মাকে মিষ্টিমুখ করানো ও পান সুপারি খাওয়ানো হয়। বংশপরম্পরায় এই ঐতিহ্য যেন এক অমৃত আনন্দ। ভক্তদের ধারণা মা দুর্গা অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করতে এই ধরায় এসেছিলেন। পাঁচ দিন থেকে আজ তিনি চলে যাচ্ছেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এই এক বেদনার দিন। তবুও মায়ের কাছে সবার একটাই প্রার্থনা- মা যেন এমনিভাবেই সবাইকে ধনে জনে তুষ্ট রাখে।