বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত পদক্ষেপ সংকট উত্তরণে সহায়ক হবে না

| মঙ্গলবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ

নানা রকম সংকটে আবর্তিত পুরো বিশ্ব। সে হিসেবে বাংলাদেশকেও এগিয়ে যেতে হচ্ছে বিভিন্ন রকমের সমস্যার মধ্য দিয়ে। সবাই কম বেশি অবগত যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি সিপিডি আয়োজিত ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আভাস ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, সাতটি সংকটের কারণে দেশের অর্থনীতি চাপের মুখে রয়েছে। সংকটগুলো হলো মূল্যস্ফীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকট, খাদ্য সংকট, জ্বালানি সংকট, ডলার সংকট, কোভিড ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট। এই সংকটগুলো চিহ্নিত করে তা মোকাবিলায় পরামর্শও তুলে ধরেছে সংস্থাটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালে বিশ্বে এবং বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যদিও বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের আশংকা উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও একইরকম শঙ্কা প্রকাশ করেছে। এ ধরনের আগাম বিপদসংকেত পূর্বপ্রস্তুতির জন্য সহায়ক সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। অবশ্যই প্রস্তুতি নিতে হবে, যদিও বিশ্বজুড়েই মূল্যস্ফীতি ঐতিহাসিকভাবে ঊর্ধ্বগতিতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিভিন্ন দেশের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক দিকে। ইতোমধ্যে এই সংকটটি চলমান ও ঘনীভূত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি লাগামগীন। আন্তর্জাতিক পণ্যের দামও বেশি। আবার দেশে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেশি। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং নিম্নআয়ের মানুষের কষ্টও বাড়ছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে খাদ্য সংকটেরও আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তাই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে এ সংকটগুলো মোকাবিলার জন্য। দেশে এখন বহুমুখী সংকট রয়েছে, তাই বহুমুখী নীতিমালাও প্রয়োজন।
রাইসুল সৌরভ তাঁর এক লেখায় লিখেছেন, সামপ্রতিককালে বাংলাদেশ একটি জ্বালানি ক্ষুধার্ত দেশ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। অবশ্য সমগ্র বিশ্বই এখন কোভিড-১৯, জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদি কারণে জ্বালানি খাতে সংকট প্রত্যক্ষ করছে। এ বৈশ্বিক সংকট সারা পৃথিবীতে জ্বালানি সরবরাহেও বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ২০২০ সালের এপ্রিলের তুলনায় বর্তমানে আটগুণ এবং অপরিশোধিত তেল প্রায় পাঁচগুণ বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। অথচ মাত্র কয়েক মাস আগেও মনে করা হয়েছিল, বাংলাদেশ তার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অতীতকে অনেক পেছনে ফেলে এসেছে। কারণ দেশে গত এক দশকে বিদ্যুৎ খাতে দ্রুত অগ্রগতির ফলে এক পর্যায়ে প্রায় শতভাগ চাহিদা পূরণের সক্ষমতা অর্জিত হয়েছিল। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর গত এক যুগে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরবরাহ ও সঞ্চালন বাড়ানোর ওপর অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিক মনোনিবেশ করেছিল। এমনকি এখনো দেশের চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য টেকসই উৎসকে অগ্রাধিকার না দেওয়ায় এখন সাশ্রয়ী মূল্যে পর্যাপ্ত কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলস্বরূপ, সাধারণ একটি গ্রিড-ত্রুটি বা প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে আগে স্বল্প সময়ের জন্য যে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতো, তা এখন জ্বালানি সংকটের লক্ষণে পরিণত হয়েছে।
একথা বলা যায়, বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটে উৎপাদন গেছে কমে। অথচ উৎপাদন ব্যয় গেছে বেড়ে। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাবিশ্বে জ্বালানি সংকটের কারণে টালমাটাল, সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা কম, আমরা আমদানির উপর অনেকটা নির্ভরশীল। তাই সব পক্ষের মতামত নিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। সকলকে সচেতন হতে হবে এই সংকট মোকাবিলার জন্য। তাঁরা বলেন, জ্বালানি সংকটে যখন সারা পৃথিবী জুড়ে থমথমে অবস্থা। তখন আমাদের দেশে মানুষের অসচেতনতা বড় বেদনার। মানুষের মাঝে সচেতনতা না আসলে কিছু করার থাকে না। তারপরও আমি সংশ্লিষ্টদের বলে দিচ্ছি যাতে মনিটরিং বাড়িয়ে দেয়। আমরা সবাই মিলে এই সংকট মোকাবিলা নিশ্চিত করবো বলে মন্তব্য করেন আরেক বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, আপনারা এই সমাজের অংশ, আপনাদের সহযোগিতা দরকার। সব পক্ষের মতামত নিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। তিনি পত্রিকান্তরে বলেন, জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষদের সাথে নিয়ে কাজ করা দরকার। তাহলে এর ফল পাওয়া যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, জ্বালানির বিষয়ে একটা ধোঁয়াশা আছে। কবে নাগাদ সংকট কাটবে, তার চেয়েও সংকট মোকাবিলায় সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দেশবাসীর জানা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, সমস্যাটি এতই গুরুতর যে উত্তরণে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ প্রয়োজন। বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত পদক্ষেপ সংকট উত্তরণে সহায়ক হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে