বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করুন : রানা দাশগুপ্ত

ঐক্য পরিষদের অবস্থান কর্মসূচিতে ১১ দফা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

প্রতিমা ও পূজামণ্ডপ ভাঙচুর, মন্দিরে হামলা, ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে আন্দরকিল্লা চত্বরে গণ-অনশন, গণ-অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সমাবেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্তে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন, হামলাকারী ও চক্রান্তকারীদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস মোকাবেলায় ব্যর্থ জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ ১১ দফা দাবি দিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এছাড়া দাবি আদায় না হলে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণা দেন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।
গতকাল শনিবার দেশব্যাপী বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ে ভোর ৬টা থেকে নগর ও উপজেলা হতে বিভিন্ন সনাতনী সংগঠনের সদস্যরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মিছিলসহ সমবেত হয়। সমাবেশে রানা দাশগুপ্ত ঐক্য পরিষদের ১১ দফা দাবিনামা উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হল- দুর্গোৎসব চলাকালে এবং এর পরবর্তী সময়ে সারাদেশে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন, বস্তুনিষ্ঠ নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের গ্রেপ্তার করে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিত করা, সামাজিক গণমাধ্যমে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর পাশাপাশি যারা উসকানি দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। বিভিন্ন জেলায় মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় নিহতদের পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি, ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দান, ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণ, গৃহহীনদের পুনর্বাসন, ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রনয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইনের দ্রুত বাস্তবায়নসহ ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে প্রদত্ত অঙ্গিকার দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
সমাবেশে রানা দাশগুপ্ত বলেন, দাবি বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় রেখে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ‘চল চল ঢাকায় চল’ স্লোগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে। ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতিটি সংগঠনকে পৃথক অথবা ঐক্যবদ্ধভাবে জনসংযোগ ও প্রতিবাদী কর্মসূচি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
এছাড়া কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদ ঘোষিত ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য শ্যামাপূজা ও দীপাবলি উৎসব বর্জন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোয়া ৬টা পর্যন্ত মুখে কালো কাপড় বেঁধে নিজ নিজ মন্দিরে নীরবতা পালন এবং মন্দির ও মণ্ডপের ফটকে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী স্লোগান সম্বলিত কালো কাপড়ের ব্যানার টাঙানোর কর্মসূচির সঙ্গে ঐক্য পরিষদের সংহতি ও সমর্থন ঘোষণা করেন ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা এড.রানা দাশগুপ্ত।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ইসকনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রণজিৎ কুমার দে’র সভাপতিত্বে এবং চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি রুবেল পালের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, জাসদ নেতা ইন্দু নন্দন দত্ত, চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত, ঐক্য পরিষদ নেতা অ্যাড. নিতাই প্রসাদ ঘোষ, অ্যাডভোকেট স্বভু প্রসাদ বিশ্বাস, অ্যাড. সুভাষ লালা, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার দেব, অঞ্জন কুমার দাশ, লিটন দাশ, পরিমল চৌধুরী, দীপঙ্কর চৌধুরী কাজল, বিজয়লক্ষ্মী দেবী, অশোক কুমার দাশ, বিভা ইন্দু, রাধারাণী দেবী, সুচিত্রা গুহ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাসের হেলপার থেকে কোটিপতি
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতিক্ষণে আমাদের উপরে খবরদারি করা হচ্ছে : ফখরুল